০৬:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

লকডাউন, ভারী বর্ষণ, গো-খাদ্যের সঙ্কটে দিশেহারা রূপগঞ্জের খামারীরা

“দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। কয়েক দিন আগে ২ টা গরু চোরে নিয়া গেল কিছুই করতে পারলাম না। তারপর কিস্তি নিয়া আবার ২টা গরু কিনলাম কোরবানীর সময় বিক্রি করব বলে। একের পর এক লকডাউনে ভয় লাগে কোরবানী পশু বিক্রি করতে পারমু তো। ঈদের আগ পর্যন্ততো লকডাউনই।

গরু বিক্রি করতে না পারলে কিস্তির টাকা পরিশোধ করমু কেমনে?? আল্লাহই জানে। একেবারে মরে যামু গো মামা।” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার উত্তরপাড়া এলাকার চাষি জুলহাস মিয়া।
রূপগঞ্জে কোরবানীর গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শত শত খামারীরা। অন্যদিকে তেমনি দুঃশ্চিন্তায় আছেন ক্রেতারাও। চলমান লকডাউনের কারণে এই শঙ্কা আর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতাগণ। মানিক মিয়া একজন গরুর খামারী। তিনি বলেন, লাগাতার ভারী বর্ষণে গরু নিয়ে বড়ই বিপাকে আছি। লকডাউনে দোকানপাট ঠিক মতো খুলতে পারতেছে না। গরুর খাবারও কিনতে পারছি না। অন্যদিকে কৃষি জমি বালি দিয়ে ভরাট করার কারণে গোটা রূপগঞ্জের গো খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবছর কাঞ্চন, তারাব পৌরসভা সহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছোট বড় খামার এবং পারিবারিক থেকে গরু পালনে প্রায় ২৫ হাজার গরু লালন পালন করে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিক্রয় করা হবে। তবে চলমান লকডাউনের কারনে সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে বিক্রয় করতে পারবেন কিনা এই শঙ্কা করছেন গরুর মালিকরা।
খামারীরা জানায়, প্রতিবছর ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই ঢাকার ব্যাবসায়ীকরা খামার ও গরু মালিকের বাড়ি বাড়ি এসে দাম দর করে গরু কিনেন। এবছর সেই কেনা বেচা নাই। ঢাকার কোন ব্যবসায়ীকরাই এখন পর্যন্ত আসে নাই।
উপজোলার মানিক ডেইরী ফার্মের পরিচালনক মানিক মিয়া জানান, আমার খামারে সিদ্ধি, শাহীওয়াল, বার্মা ও দেশী জাতের ২১টি গরু আছে। আমি গরুর ছবি ও ভিডিও সহ অনলাইনে বিক্রয়ের চাহিদা দিয়েছি। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাই নাই।
বাঘবেড় গ্রামের নায়েব আলী জানান, আমার দুটি দেশী জাতের গরু আছে। বাড়িতে এসে স্থানীয় কয়েকজন দাম দর করে গেছেন। কিন্তু তারা যে দাম করেছেন বাজার মুল্যের অর্ধেক। আরেকজন চাষি জাকির মিয়া বলেন, আমরা মূখ্যশুখ্য মানুষ। এসব অনলাইন টাইন বুঝি না। কিভাবে যে কি করি কিছুই বুঝতে পারছি না।
পাড়াগাও গ্রামের মুক্তার হোসেন বলেন, প্রতিবছর আমরা স্থানীয়ভাবে কোরবানীর পশুর হাটে গরু নিয়ে যাই এবং সেখানে দাম দর যাচাই বাছাই করি। তার পর বাজার বুঝে বিক্রয় করি। এবছর ওই হাট যদি না বসে তাহলে আমরা কোথায় বিক্রয করবো।
এ দিকে ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, হাটে যেভাবে অনেক গরু দেখে দাম দর করে মনের মত গরু ক্রয় করা যেত তাই করোনা কালিন বিধি নিষেধের কারনে পশুর হাট বন্ধ থাকায় দুঃশ্চিন্তায় আছেন ক্রেতারাও।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ রিগেন মোল্লা বলেন, আমরা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই খামারীদের গরুর ছবি, নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে রূপগঞ্জ অনলাইন কোরবানীর পশুর হাট নামে ফেসবুক পেইজে গরু বেচা কেনার ব্যবস্থা করেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

লকডাউন, ভারী বর্ষণ, গো-খাদ্যের সঙ্কটে দিশেহারা রূপগঞ্জের খামারীরা

প্রকাশিত : ০৩:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

“দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। কয়েক দিন আগে ২ টা গরু চোরে নিয়া গেল কিছুই করতে পারলাম না। তারপর কিস্তি নিয়া আবার ২টা গরু কিনলাম কোরবানীর সময় বিক্রি করব বলে। একের পর এক লকডাউনে ভয় লাগে কোরবানী পশু বিক্রি করতে পারমু তো। ঈদের আগ পর্যন্ততো লকডাউনই।

গরু বিক্রি করতে না পারলে কিস্তির টাকা পরিশোধ করমু কেমনে?? আল্লাহই জানে। একেবারে মরে যামু গো মামা।” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার উত্তরপাড়া এলাকার চাষি জুলহাস মিয়া।
রূপগঞ্জে কোরবানীর গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শত শত খামারীরা। অন্যদিকে তেমনি দুঃশ্চিন্তায় আছেন ক্রেতারাও। চলমান লকডাউনের কারণে এই শঙ্কা আর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতাগণ। মানিক মিয়া একজন গরুর খামারী। তিনি বলেন, লাগাতার ভারী বর্ষণে গরু নিয়ে বড়ই বিপাকে আছি। লকডাউনে দোকানপাট ঠিক মতো খুলতে পারতেছে না। গরুর খাবারও কিনতে পারছি না। অন্যদিকে কৃষি জমি বালি দিয়ে ভরাট করার কারণে গোটা রূপগঞ্জের গো খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবছর কাঞ্চন, তারাব পৌরসভা সহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছোট বড় খামার এবং পারিবারিক থেকে গরু পালনে প্রায় ২৫ হাজার গরু লালন পালন করে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিক্রয় করা হবে। তবে চলমান লকডাউনের কারনে সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে বিক্রয় করতে পারবেন কিনা এই শঙ্কা করছেন গরুর মালিকরা।
খামারীরা জানায়, প্রতিবছর ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই ঢাকার ব্যাবসায়ীকরা খামার ও গরু মালিকের বাড়ি বাড়ি এসে দাম দর করে গরু কিনেন। এবছর সেই কেনা বেচা নাই। ঢাকার কোন ব্যবসায়ীকরাই এখন পর্যন্ত আসে নাই।
উপজোলার মানিক ডেইরী ফার্মের পরিচালনক মানিক মিয়া জানান, আমার খামারে সিদ্ধি, শাহীওয়াল, বার্মা ও দেশী জাতের ২১টি গরু আছে। আমি গরুর ছবি ও ভিডিও সহ অনলাইনে বিক্রয়ের চাহিদা দিয়েছি। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাই নাই।
বাঘবেড় গ্রামের নায়েব আলী জানান, আমার দুটি দেশী জাতের গরু আছে। বাড়িতে এসে স্থানীয় কয়েকজন দাম দর করে গেছেন। কিন্তু তারা যে দাম করেছেন বাজার মুল্যের অর্ধেক। আরেকজন চাষি জাকির মিয়া বলেন, আমরা মূখ্যশুখ্য মানুষ। এসব অনলাইন টাইন বুঝি না। কিভাবে যে কি করি কিছুই বুঝতে পারছি না।
পাড়াগাও গ্রামের মুক্তার হোসেন বলেন, প্রতিবছর আমরা স্থানীয়ভাবে কোরবানীর পশুর হাটে গরু নিয়ে যাই এবং সেখানে দাম দর যাচাই বাছাই করি। তার পর বাজার বুঝে বিক্রয় করি। এবছর ওই হাট যদি না বসে তাহলে আমরা কোথায় বিক্রয করবো।
এ দিকে ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, হাটে যেভাবে অনেক গরু দেখে দাম দর করে মনের মত গরু ক্রয় করা যেত তাই করোনা কালিন বিধি নিষেধের কারনে পশুর হাট বন্ধ থাকায় দুঃশ্চিন্তায় আছেন ক্রেতারাও।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ রিগেন মোল্লা বলেন, আমরা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই খামারীদের গরুর ছবি, নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে রূপগঞ্জ অনলাইন কোরবানীর পশুর হাট নামে ফেসবুক পেইজে গরু বেচা কেনার ব্যবস্থা করেছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ