পাহাড়ে পাহাড়িদের ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে আড়ি ও সাম্মু। এইসব সুনিপুণ হস্তশিল্প তৈরি করা মত বর্তমানে কোন দক্ষ কারিগর না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এইসব শিল্প। বর্তমান অনেক এলাকায় খুঁজলেও এরকম একটা আড়ি ও মানসম্মত সাম্মু পাওয়া কঠিন ব্যাপার।
তহলে জানা যাক আড়ি কি?
স্বানীয় ভাষায় (গলা, মরিছা) বা বেতের তৈরি নির্দিষ্ট একটি খাঁচা।চাকমা ভাষায় আড়ি এবং তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় আঈ বলে। যা আগের দিনে মানুষেরা ধান মাপার জন্য ব্যবহার করত।এটি আবার এক ধরণের ছোট মাপের তঙ্ ও বলে বলে অনেকে, তবে তঙ্ এর সঙ্গে বৈশিষ্ট্য সম্পুর্ন আলাদা। এইসব বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ৮০ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ পিতার কাছেই জানতে চাইলে তিনি জানান, গোলাঘরে ধান মাপার সুবিধা জন্য বেতের তৈরি একটি খাঁচা’কে আড়ি বলা হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট মাপ থাকে যা ১৬ সের সমপরিমাণ ধান রাখা যায় এই আড়িতে।এটি আবার ভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন রকম ও ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। তিনি আরও জানান, আগে দিনে যোগাযোগের ব্যবস্থা অনুন্নত হলেও অভাব ছিলনা কোন মানুষের মাঝে, ছিল গোলাভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু।পাড়ার কোন ব্যক্তি জুম ও জমি চাষ করে কোনো কারণে যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তিকে পাড়া প্রধানের নির্দ্দেশে বছরে কত আড়ি লাগবে ঐ হিসেবে প্রত্যেকে নিজ থেকে আড়িতে ধান দিয়ে বছর খোরাক দিত।তিনি দুঃখ করে বলেন,এখন সেই আগের মত দয়ামায়া দিন নেই বলেও জানান।
সাম্মু কি :-
সাম্মু হচ্ছে একধরনের শোকেস। এগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা তৈরী করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের সম্মু আছে, স্বানীয় ভাষায় বলা হয় যেমন-( চাই কুন্য,আইত কুইন্য ও ১৬ কুইন্যা সম্মূ অর্থাৎ একটিতে চার কোণ, আট কোণ,ষৌল কোণ পর্যন্ত থাকে বলে জানা যায়। আগের দিনে মানুষেরা স্বর্ণ- অলংঙ্কার,ধন দৌলত এইসব সম্মু বা সম্মুয়া ভিতরে যত্ন করে রাখেন ব’লেও জানা যায়। বর্তমানে পেশাদারি হস্তশিল্প তৈরি করার কোন দক্ষ ব্যক্তি বা কারিগর না থাকার কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। তাই পাহাড়ে পাহাড়িদের হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।