০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিলুপ্ত’র পথে গ্রাম বাংলার মহিষের গাড়ি

ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি চিল মারির বন্দরে। আবহমান বাংলার মরমী শিল্পী প্রয়াত আব্বাস উদ্দিনের গান থাকলেও নেই মহিষের গাড়ি। চোখে পড়েনা মহিষের গাড়ী হাঁকিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। নতুন প্রজন্মের অনেকেরই কাছে মহিষের গাড়ী নিয়ে রয়েছে কৌতুহল। শহরের অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুনী মহিষের গাড়ী চেনেই না। নেই গাড়িয়াল। সেই হৈ-হৈ-রৈ-রৈ হাঁকডাক, নেই গাড়ির চাকার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ। মহিষের হাম্বা অথবা গলায় ঝোলানো ঘন্টার টুং টাং আওয়াজ। মহিষের গাড়ীর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে, যন্ত্র-চালিত নছিমন, করিমন, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক। বিভিন্ন যন্ত্রযানের কারণে আজ যাদুঘরে স্থান হতে চলছে মহিষের গাড়ী। বংশ পরম্পরায় গাড়িয়ালরা জীবন জীবীকার তাগিদে পরিবর্তন করেছে এ পেশা। এদের কেউ শহরে মজুর খাঁটছে কেউবা রিকশার হেন্ডেল ধরেছে, কেউ অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। সিমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাট জেলায় মহিষের গাড়ীর প্রচলন আদিকাল থেকেই। মহিষের গাড়িতে বিয়ে, বরযাত্রী, মালামাল পরিবহন, নাইয়রি আনা নেয়া ইত্যাদি এক সময় হতো খুব জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আঙ্গিনায় শোভা পেত এই দু’চাকার গাড়ীটি। এ জেলার যে কোনো গ্রামে অবশ্যই চোখে পড়ত মহিষ চালিত গাড়ী। সেই দৃশ্য খুব একটা এখন চোখ পড়ে না। জেলা সদরের কাজীর চওড়া গ্রামের মহিষের গাড়িয়াল আমজাদ হোসেন ও কুতুব মিয়া বলেন, আগে সারা বছর গাড়ি চালাতাম। পৌষ মাস এলে ডাক পরতো বিয়ে বাড়ির। কাজে কামে ব্যস্ত সময় পার করতাম। এখন শুধু মাঝে মাঝে ডাক পড়লে কাজ করি। আর সারা বছর বেকার বসে থাকি। এখন সবাই ভটভটি, করিমন, নছিমন দিয়ে এ কাজ করায়। ফলে আমাদের চাহিদা কমে গেছে যার কারনে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছি।

কোদালখাতা গ্রামের কমল কান্তি বর্মণ ও ফুলগাছ গ্রামের হরিপদ রায় হরি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক পরিবহনে কৃষিপণ্য এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সহজে পরিবহন করা যায়। তাই এই এলাকা থেকে মহিষের গাড়ি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যারা এখন এ পেশা বদলায়নি, তারা বাপ-দাদার পেশা হিসেবে ধরে রেখে কাজের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল ও কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোয়া ইউনিয়নের কৃষক মান্নান মিয়া বলেন, যান্ত্রিক পরিবহনে খরচ বেশি। তাছাড়া সুবিধাও অনেক বেশি। যে সকল স্থানে যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সেখানে মহিষের গাড়ি সহজে ব্যবহার করা যায়। ফলে এখনও ২-১টি মহিষের গাড়ী এ অঞ্চলে দেখা যায়। হয়তো এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহনটা আর চোখে পড়বে না।

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ডিফেন্স বলেন, গ্রাম বাংলার চিরায়ত এ ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ির চাহিদা এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তাই যে সকল মহিষের গাড়ি এখনও টিকে আছেন তাদের বিভিন্ন সরকারি পরিবহন কাজে ব্যবহার করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যেমন- উপজেলা সদরের গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ, ভিজিডির চাল পরিবহন, সরকারি ঠিকাদারি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা সম্ভব।

এ ব্যপারে লালমনিরহাট জেলার কবি ও সাহিত্যিক ফেরদৌসি বেগম বিউটি বলেন, এ জেলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। তিনি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সাথে একমত পোষণ করে আরও বলেন, উপজেলা সদরের গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ, ভিজিডির চাল পরিবহন, সরকারি ঠিকাদারি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা সম্ভব।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

বিলুপ্ত’র পথে গ্রাম বাংলার মহিষের গাড়ি

প্রকাশিত : ০৭:১৮:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি চিল মারির বন্দরে। আবহমান বাংলার মরমী শিল্পী প্রয়াত আব্বাস উদ্দিনের গান থাকলেও নেই মহিষের গাড়ি। চোখে পড়েনা মহিষের গাড়ী হাঁকিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। নতুন প্রজন্মের অনেকেরই কাছে মহিষের গাড়ী নিয়ে রয়েছে কৌতুহল। শহরের অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুনী মহিষের গাড়ী চেনেই না। নেই গাড়িয়াল। সেই হৈ-হৈ-রৈ-রৈ হাঁকডাক, নেই গাড়ির চাকার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ। মহিষের হাম্বা অথবা গলায় ঝোলানো ঘন্টার টুং টাং আওয়াজ। মহিষের গাড়ীর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে, যন্ত্র-চালিত নছিমন, করিমন, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক। বিভিন্ন যন্ত্রযানের কারণে আজ যাদুঘরে স্থান হতে চলছে মহিষের গাড়ী। বংশ পরম্পরায় গাড়িয়ালরা জীবন জীবীকার তাগিদে পরিবর্তন করেছে এ পেশা। এদের কেউ শহরে মজুর খাঁটছে কেউবা রিকশার হেন্ডেল ধরেছে, কেউ অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। সিমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাট জেলায় মহিষের গাড়ীর প্রচলন আদিকাল থেকেই। মহিষের গাড়িতে বিয়ে, বরযাত্রী, মালামাল পরিবহন, নাইয়রি আনা নেয়া ইত্যাদি এক সময় হতো খুব জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ীর আঙ্গিনায় শোভা পেত এই দু’চাকার গাড়ীটি। এ জেলার যে কোনো গ্রামে অবশ্যই চোখে পড়ত মহিষ চালিত গাড়ী। সেই দৃশ্য খুব একটা এখন চোখ পড়ে না। জেলা সদরের কাজীর চওড়া গ্রামের মহিষের গাড়িয়াল আমজাদ হোসেন ও কুতুব মিয়া বলেন, আগে সারা বছর গাড়ি চালাতাম। পৌষ মাস এলে ডাক পরতো বিয়ে বাড়ির। কাজে কামে ব্যস্ত সময় পার করতাম। এখন শুধু মাঝে মাঝে ডাক পড়লে কাজ করি। আর সারা বছর বেকার বসে থাকি। এখন সবাই ভটভটি, করিমন, নছিমন দিয়ে এ কাজ করায়। ফলে আমাদের চাহিদা কমে গেছে যার কারনে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছি।

কোদালখাতা গ্রামের কমল কান্তি বর্মণ ও ফুলগাছ গ্রামের হরিপদ রায় হরি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক পরিবহনে কৃষিপণ্য এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সহজে পরিবহন করা যায়। তাই এই এলাকা থেকে মহিষের গাড়ি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যারা এখন এ পেশা বদলায়নি, তারা বাপ-দাদার পেশা হিসেবে ধরে রেখে কাজের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল ও কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোয়া ইউনিয়নের কৃষক মান্নান মিয়া বলেন, যান্ত্রিক পরিবহনে খরচ বেশি। তাছাড়া সুবিধাও অনেক বেশি। যে সকল স্থানে যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সেখানে মহিষের গাড়ি সহজে ব্যবহার করা যায়। ফলে এখনও ২-১টি মহিষের গাড়ী এ অঞ্চলে দেখা যায়। হয়তো এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহনটা আর চোখে পড়বে না।

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ডিফেন্স বলেন, গ্রাম বাংলার চিরায়ত এ ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ির চাহিদা এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তাই যে সকল মহিষের গাড়ি এখনও টিকে আছেন তাদের বিভিন্ন সরকারি পরিবহন কাজে ব্যবহার করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যেমন- উপজেলা সদরের গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ, ভিজিডির চাল পরিবহন, সরকারি ঠিকাদারি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা সম্ভব।

এ ব্যপারে লালমনিরহাট জেলার কবি ও সাহিত্যিক ফেরদৌসি বেগম বিউটি বলেন, এ জেলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। তিনি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সাথে একমত পোষণ করে আরও বলেন, উপজেলা সদরের গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ, ভিজিডির চাল পরিবহন, সরকারি ঠিকাদারি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা সম্ভব।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর