০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ড্রাগন ফল চাষে সফল ভালুকার বিল্লাল হোসেন

ড্রাগন ফল যার উৎপত্তি সেন্ট্রাল আমেরিকায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এটি সর্বাধিক চাষ হয় ভিয়েতনামে। বলা বাহুল্য, ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুর বেশ সাদৃশ্যের কারণে দিন দিন বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ।
ড্রাগন ফল। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। ভালুকাতেও ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ। এতে কৃষকরা ফলটি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।
১০ বিগা জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ভিয়েতনামী ফল ড্রাগনের এক বিশাল খামার। প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। জানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিয়াদী গ্রামের বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর।
নতুন ফল ড্রাগন চাষে সফলতা পাওয়া কৃষক বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ২০১৭ সালে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৫ শত চারা দিয়ে। ৫ বছরে এখন তিনি নিজের ১০ বিগা জমির উপরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় স্বযতেœ ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু কাছে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা খামার। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার।
ড্রাগন চাষের সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, “ড্রাগন অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। এটি চাষে সুবিধা হলো রোগ-বালাই কম হয় এবং রাসায়নিক সার অত্যন্ত কম লাগে। এছাড়া, চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।” খরচ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু রাসায়নিক সার লাগেনা সেহেতু খরচটা অনেকাংশে কমে যায়। ড্রাগন চাষে প্রধানত জৈব সার লাগে। আর এক্ষেত্রে তিনি গোবর সার এবং হাস-মুরগীর মলমূত্র, বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে আর শেষ হয়ে খাবার উপযুক্ত হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়িত হয়ে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের কিংবা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত রোপণের সময় ২ ফিট দৈর্ঘ প্রস্থ করে গর্ত করে সার গোবর দিয়ে বেলে দোআঁশ মাটিতে চারা রোপণ করতে হয়।


কৃষিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকায়,ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে,আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম ও চর্বি কমায়, ড্রাগনের বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা, ক্যালসিয়ামে হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত, ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ত্বক মসৃণ, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। ড্রাগনে এতসব ঔষধি গুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকায় এর কদর ছড়িয়ে পড়ছে দেশ জুড়ে, লাভবান হয়ে উঠছে চাষি, গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাও হয়ে উঠছে সচল। দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার।
চাষী বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ২০০১ এ ব্রæনাই যান এবং ২০০৬ সালে দেশে ফিরে প্রথমে মাছ ব্যবসা শুরু করেন পরে ২০১৭ সালে বন্ধু আনিছুর রহমানকে নিয়ে যৌথ ভাবে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৫ শত চারা ৭ শত খুটিতে রোপণ করে। ৫ বছরে এখন তিনি নিজের প্রায় ১০ বিগা জমির উপরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৩ হাজার খুটিতে সারে ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ৫ বছরে তিনি ড্রাগন চাষ করে মোট ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৩ চালান বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ উঠিয়ে নিয়েছেন এবং বর্তমানে তার বাগানটি প্রায় লাভের উপরে রয়েছে। ভালুকাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগন ফল পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করেন।
এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে আর শেষ হয়ে খাবার উপযুক্ত হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
এখন প্রতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ মণ করে। যা বাজারে পাইকারি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এখন প্রতিদিন তার খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারা। তিনি আরও বলেন এবছর করোনার মধ্যে এতো পরিমাণ চাহিদা ক্রেতাদের যা আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, ছোট-বড় খামার করছে। ড্রাগন চাষ বিশেষ করে করোনাকালে বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, ভালুকার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকেরা এ ফল চাষে ঝুঁকছেন। এতে বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ঘাটতি কমে আসছে, অর্থনীতিও হয়ে উঠছে শক্তিশালী, কৃষকরা যাতে ড্রাগন ফল আরও বেশী করে চাষ করতে পারে তার জন্যে নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, এর মধ্যদিয়েই ভালুকা ড্রাগন বিদেশেও রপ্তানি করে অর্থ আয় করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা । ‘কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি এবং এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করার ফলে উপজেলার অনেক কৃষক ড্রাগন চাষ করছেন।’

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন, আহত ১৮

ড্রাগন ফল চাষে সফল ভালুকার বিল্লাল হোসেন

প্রকাশিত : ০৪:৩৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১

ড্রাগন ফল যার উৎপত্তি সেন্ট্রাল আমেরিকায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এটি সর্বাধিক চাষ হয় ভিয়েতনামে। বলা বাহুল্য, ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুর বেশ সাদৃশ্যের কারণে দিন দিন বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ।
ড্রাগন ফল। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। ভালুকাতেও ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ। এতে কৃষকরা ফলটি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।
১০ বিগা জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ভিয়েতনামী ফল ড্রাগনের এক বিশাল খামার। প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। জানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিয়াদী গ্রামের বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর।
নতুন ফল ড্রাগন চাষে সফলতা পাওয়া কৃষক বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ২০১৭ সালে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৫ শত চারা দিয়ে। ৫ বছরে এখন তিনি নিজের ১০ বিগা জমির উপরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় স্বযতেœ ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু কাছে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা খামার। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার।
ড্রাগন চাষের সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, “ড্রাগন অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। এটি চাষে সুবিধা হলো রোগ-বালাই কম হয় এবং রাসায়নিক সার অত্যন্ত কম লাগে। এছাড়া, চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।” খরচ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু রাসায়নিক সার লাগেনা সেহেতু খরচটা অনেকাংশে কমে যায়। ড্রাগন চাষে প্রধানত জৈব সার লাগে। আর এক্ষেত্রে তিনি গোবর সার এবং হাস-মুরগীর মলমূত্র, বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে আর শেষ হয়ে খাবার উপযুক্ত হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়িত হয়ে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের কিংবা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত রোপণের সময় ২ ফিট দৈর্ঘ প্রস্থ করে গর্ত করে সার গোবর দিয়ে বেলে দোআঁশ মাটিতে চারা রোপণ করতে হয়।


কৃষিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকায়,ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে,আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম ও চর্বি কমায়, ড্রাগনের বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা, ক্যালসিয়ামে হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত, ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ত্বক মসৃণ, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। ড্রাগনে এতসব ঔষধি গুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকায় এর কদর ছড়িয়ে পড়ছে দেশ জুড়ে, লাভবান হয়ে উঠছে চাষি, গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাও হয়ে উঠছে সচল। দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার।
চাষী বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ২০০১ এ ব্রæনাই যান এবং ২০০৬ সালে দেশে ফিরে প্রথমে মাছ ব্যবসা শুরু করেন পরে ২০১৭ সালে বন্ধু আনিছুর রহমানকে নিয়ে যৌথ ভাবে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৫ শত চারা ৭ শত খুটিতে রোপণ করে। ৫ বছরে এখন তিনি নিজের প্রায় ১০ বিগা জমির উপরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৩ হাজার খুটিতে সারে ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ৫ বছরে তিনি ড্রাগন চাষ করে মোট ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৩ চালান বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ উঠিয়ে নিয়েছেন এবং বর্তমানে তার বাগানটি প্রায় লাভের উপরে রয়েছে। ভালুকাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগন ফল পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করেন।
এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে আর শেষ হয়ে খাবার উপযুক্ত হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
এখন প্রতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ মণ করে। যা বাজারে পাইকারি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এখন প্রতিদিন তার খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারা। তিনি আরও বলেন এবছর করোনার মধ্যে এতো পরিমাণ চাহিদা ক্রেতাদের যা আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, ছোট-বড় খামার করছে। ড্রাগন চাষ বিশেষ করে করোনাকালে বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, ভালুকার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকেরা এ ফল চাষে ঝুঁকছেন। এতে বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ঘাটতি কমে আসছে, অর্থনীতিও হয়ে উঠছে শক্তিশালী, কৃষকরা যাতে ড্রাগন ফল আরও বেশী করে চাষ করতে পারে তার জন্যে নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, এর মধ্যদিয়েই ভালুকা ড্রাগন বিদেশেও রপ্তানি করে অর্থ আয় করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা । ‘কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি এবং এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করার ফলে উপজেলার অনেক কৃষক ড্রাগন চাষ করছেন।’

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ