০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

বিলুপ্তির পথে শন ও শনের তৈরী ঘর

বিলুপ্তির পথে শন ও শনের তৈরী ঘর। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে শন। এবং শনের তৈরী পাহাড়ীদের তংঘর, মাছাং ঘর ও গ্রাম বাংলার শনের তৈরী বেড়া ও গুদামঘর। হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য।

শন হলো- একধরনের খড়ের মত চিকন, লম্বা পাতা জাতীয় ছোট উদ্ভিদ। এগুলো দেখতে অনেকটা খাগড়ার পাতার মত হলেও চিকুন কিন্তু সরু মাটি থেকে সরাসরি উঠে যা ৫ ফুটের বেশি লম্বা হয়। ঘর চাউনি তৈরিতে বেশি উপযোগী।  বলতে গেলে বর্তমানে গ্রামের ভিতরে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়না এবং চোখে পড়েনা। শহরের বেলায় তো কথাই নেই।মানুষ এখন শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত-আগের দিনে মানুষ গরু-মহিষ দিয়ে চাষাবাদ করত, প্রযুক্তি আবিস্কারের ফলে বর্তমানে মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করত। তেমনি যুগের সাথেই তাল মিলিয়ে মানুষ এখন শনের তৈরী কাঁচা (মাছাং) ঘরে থাকতে চাইছেন না। পাহাড়ে জুম চাষ ও সমতলে কৃষি চাষের ফলে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে শন।

আজ থেকে প্রায় দুই যুগের আগে বাড়ির আনাসে- কানাসে বা চারিপাশে জঙ্গলে যেখানে- সেখানে শন দেখা যেত। বাড়ির বা ঘরের চাউনি হিসেবে মানুষ শন ব্যবহার করত এবং শন সংরক্ষণ করতো অতি প্রয়োজন বলে।

তখনকার সময়ে অর্থনৈতিক আয়ের উৎস বলা হতো শনকে।বন্দা হিসেবে বিক্রয় করলে প্রতি বন্দা ১৫-২০ টাকা হতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। যেমন ধরুন আপনার ১ টি বড় শনহলা বা শনের বাগান আছে তা অনেক দামে বিক্রয় করতে পারবেন।

মানুষ কচু, আদা,সবজি ক্ষেতে জাক ও জৈব সার হিসেবে পঁচা শন ব্যবহার করতো। যখন ডেউটিন আবিষ্কার হয়নি, তার আগে যুগ যুগ ধরে বেশি ভাগ মানুষ শনের তৈরী কাঁচা ঘরে বাস করতো। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যে করা যেতে পারে মধ্য যুগে (পনের শতক হতে উনিশ শতকের) ।আদিম যুগের মানুষের বেলায়তো কথা নেই, যা ইতিহাস পড়লে জানা যায়। আমাদের বাপ- দাদা আমলেও ব্যাপক শনের ব্যবহার প্রচলন ছিল।

কালের বিবর্তন এবং যুগ পরিবর্তন আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে মানুষ শনের পরিবর্তে ব্যবহার করছে ঢেউটিন ও অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম। কিন্তু শনের তৈরী কাঁচা ঘরে বসবাস করা একটা আলাদা শস্তিদায়ক। প্রখর রোদে ও বেশ ঠান্ডা এবং ঝড়- বাদলে ও শব্দ দূষণ হয়না। বাতাসও কম ধরে।মাটিও ক্ষয় কম হয়।

সবচেয়ে সুবিধা হলো সুউচ্চ পাহাড়ের পাহাড়ীদের জুমের মাঝখানে শনের চাউনি দিয়ে তৈরী করা খোলা মাছাং ঘরে ঘুমনো। দক্ষিণা মুক্ত বাতাস দোলা দিয়ে যায় যখন, পরশে ঘুমিয়ে পড়বে কখন তুমি নিজেও জানবে না। সবকিছু মিলিয়ে শনের তৈরী কাঁচা ঘর দেখতে একটা আলাদা সুন্দর লাগতো। যা ঐতিহ্যও বলা হতো।

আর না ঘুমালেও দক্ষিণা বাতাস যখন গায়ে দোলা দিত মনে পড়তো প্রিয় জনের কথা। শিল্পীরা তাই এই জুমঘরকে নিয়ে গানও তৈরি করেছেন -মুন উগুরে জুম গুচ্ছি ইক্কু ইদু আমা ঘর, তুই এবে তুই এবে বিলিনে চেঙে পুরি দাগদন অর্থাৎ পাহাড়ের উপড়ে জুম চাষ করেছি, তুমি আসবে অপেক্ষায় আসি।তাই শন রক্ষায় এগিয়ে আসুন, পরিবেশকে বাঁচান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

বিলুপ্তির পথে শন ও শনের তৈরী ঘর

প্রকাশিত : ০৯:০৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১

বিলুপ্তির পথে শন ও শনের তৈরী ঘর। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে শন। এবং শনের তৈরী পাহাড়ীদের তংঘর, মাছাং ঘর ও গ্রাম বাংলার শনের তৈরী বেড়া ও গুদামঘর। হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য।

শন হলো- একধরনের খড়ের মত চিকন, লম্বা পাতা জাতীয় ছোট উদ্ভিদ। এগুলো দেখতে অনেকটা খাগড়ার পাতার মত হলেও চিকুন কিন্তু সরু মাটি থেকে সরাসরি উঠে যা ৫ ফুটের বেশি লম্বা হয়। ঘর চাউনি তৈরিতে বেশি উপযোগী।  বলতে গেলে বর্তমানে গ্রামের ভিতরে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়না এবং চোখে পড়েনা। শহরের বেলায় তো কথাই নেই।মানুষ এখন শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত-আগের দিনে মানুষ গরু-মহিষ দিয়ে চাষাবাদ করত, প্রযুক্তি আবিস্কারের ফলে বর্তমানে মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করত। তেমনি যুগের সাথেই তাল মিলিয়ে মানুষ এখন শনের তৈরী কাঁচা (মাছাং) ঘরে থাকতে চাইছেন না। পাহাড়ে জুম চাষ ও সমতলে কৃষি চাষের ফলে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে শন।

আজ থেকে প্রায় দুই যুগের আগে বাড়ির আনাসে- কানাসে বা চারিপাশে জঙ্গলে যেখানে- সেখানে শন দেখা যেত। বাড়ির বা ঘরের চাউনি হিসেবে মানুষ শন ব্যবহার করত এবং শন সংরক্ষণ করতো অতি প্রয়োজন বলে।

তখনকার সময়ে অর্থনৈতিক আয়ের উৎস বলা হতো শনকে।বন্দা হিসেবে বিক্রয় করলে প্রতি বন্দা ১৫-২০ টাকা হতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। যেমন ধরুন আপনার ১ টি বড় শনহলা বা শনের বাগান আছে তা অনেক দামে বিক্রয় করতে পারবেন।

মানুষ কচু, আদা,সবজি ক্ষেতে জাক ও জৈব সার হিসেবে পঁচা শন ব্যবহার করতো। যখন ডেউটিন আবিষ্কার হয়নি, তার আগে যুগ যুগ ধরে বেশি ভাগ মানুষ শনের তৈরী কাঁচা ঘরে বাস করতো। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যে করা যেতে পারে মধ্য যুগে (পনের শতক হতে উনিশ শতকের) ।আদিম যুগের মানুষের বেলায়তো কথা নেই, যা ইতিহাস পড়লে জানা যায়। আমাদের বাপ- দাদা আমলেও ব্যাপক শনের ব্যবহার প্রচলন ছিল।

কালের বিবর্তন এবং যুগ পরিবর্তন আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে মানুষ শনের পরিবর্তে ব্যবহার করছে ঢেউটিন ও অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম। কিন্তু শনের তৈরী কাঁচা ঘরে বসবাস করা একটা আলাদা শস্তিদায়ক। প্রখর রোদে ও বেশ ঠান্ডা এবং ঝড়- বাদলে ও শব্দ দূষণ হয়না। বাতাসও কম ধরে।মাটিও ক্ষয় কম হয়।

সবচেয়ে সুবিধা হলো সুউচ্চ পাহাড়ের পাহাড়ীদের জুমের মাঝখানে শনের চাউনি দিয়ে তৈরী করা খোলা মাছাং ঘরে ঘুমনো। দক্ষিণা মুক্ত বাতাস দোলা দিয়ে যায় যখন, পরশে ঘুমিয়ে পড়বে কখন তুমি নিজেও জানবে না। সবকিছু মিলিয়ে শনের তৈরী কাঁচা ঘর দেখতে একটা আলাদা সুন্দর লাগতো। যা ঐতিহ্যও বলা হতো।

আর না ঘুমালেও দক্ষিণা বাতাস যখন গায়ে দোলা দিত মনে পড়তো প্রিয় জনের কথা। শিল্পীরা তাই এই জুমঘরকে নিয়ে গানও তৈরি করেছেন -মুন উগুরে জুম গুচ্ছি ইক্কু ইদু আমা ঘর, তুই এবে তুই এবে বিলিনে চেঙে পুরি দাগদন অর্থাৎ পাহাড়ের উপড়ে জুম চাষ করেছি, তুমি আসবে অপেক্ষায় আসি।তাই শন রক্ষায় এগিয়ে আসুন, পরিবেশকে বাঁচান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর