১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

প্রতিশোধ নিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টির ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। ‘সেমিফাইনালের দল’ নিউজিল্যান্ড গত চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই ফাইনালে! গতকাল ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে আরেকটি ফাইনালের পাশাপাশি কেন উইলিয়ামসনরা নিয়েছেন মধুর প্রতিশোধ। ২০১৯ সালে লর্ডসের মহাকাব্যিক ফাইনালে উত্তেজনা-উন্মাদনা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল শেষে নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে শিরোপা জিতেছিল যে ইংল্যান্ডই।

ড্যারিল মিচেলের তখনো অভিষেক হয়নি। শিরোপা হারাতে দেখে কাঁদছিলেন ফুঁপিয়ে। সেই মিচেলের ব্যাটেই স্বপ্নপূরণ। মধুর প্রতিশোধ নিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জ একটা সময় পাহাড় সমান হয়ে পড়েছিল কিউইদের জন্য। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ৫৭ রান! ড্যারিল মিচেলের ৪৭ বলে ৭২ রানের বিস্ফোরণে সেই পাহাড়ও টপকে যায় নিউজিল্যান্ড। অথচ তখনো বাকি পুরো এক ওভার!

নিউজিল্যান্ডের পরিচিতি ‘সেমিফাইনালের দল’। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে ছয়বার! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুবার বাদ পড়েছে শেষ চার থেকে। ওয়ানডেতে টানা দুইবার ফাইনাল খেলে কাটিয়েছিল খরাটা। সপ্তমবার এসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছেই হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। গতকালের জয়ে মনের জ্বালাটা জুড়ানোরই কথা তাদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এত দিন সর্বোচ্চ ১৪০ রান তাড়া করেই জেতার নজির ছিল কিউইদের।

গতকাল আবুধাবিতে বদলাল সেই ইতিহাসও।

১৬৭ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড চাপে পড়ে তিন ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে। মার্টিন গাপটিলের পর কেন উইলিয়ামসনকেও ফেরান ক্রিস ওকস। দলের সেরা দুই ব্যাটারকে হারানোর পর ইনিংস গড়ায় মনোযোগ দেন ডেরিল মিচেল ও ডেভন কনওয়ে। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ৮২ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে কিউইরা। লিয়াম লিভিংস্টোনের লেগ স্পিনে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসেছিলেন কনওয়ে। টার্নে বিভ্রান্ত হন তিনি। উইকেটের

পেছনে থাকা জস বাটলারের স্টাম্পিংয়ে শেষ হয় তাঁর ৪৬ রানের ইনিংস।

শেষ ২৪ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৫৭ রান। তখনই ক্রিস জর্ডানের ওপর চড়াও জিমি নিশাম। জর্ডানের করা ১৭তম ওভারে আসে ২৩ রান। ২ ছক্কা আর ১টি বাউন্ডারি আসে নিশামের ব্যাট থেকে। ঘুরে যায় ম্যাচের গতিপথ। লর্ডস-ম্যানচেস্টারে থাকা সমর্থকরা যায় চুপসে। পৃথিবীর আরেক পাশে থাকা ক্রাইস্টচার্চ-হ্যামিল্টনে তখনো উৎসবের রং। ১০ বলে ২৬ করে নিশাম ফিরলেও ড্যারিল মিচেল তখনো অবিচল। হ্যামিল্টনের এই ক্রিকেটার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কিউইদের পৌঁছে দেন ফাইনালে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করা ইংল্যান্ড ঝড় তুলতে পারেনি প্লেতে। ৬ ওভারে কেবল ৪০ রান। ফর্মের তুঙ্গে থাকা জস বাটলারও করতে পারেননি তেমন কিছু। তবে বিশ্বকাপে নিজের সেরা ব্যাটিংটা সেমিফাইনালেই করলেন মঈন আলী। ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় খেলেন ৫১* রানের ইনিংস।

এবারের বিশ্বকাপে টস গুরুত্বপূর্ণ শুরু থেকেই। শিশিরের কারণে রান তাড়া করা দল পেয়েছে বাড়তি সুবিধা। সেমিফাইনালে ভাগ্যটা পক্ষে ছিল না ইংল্যান্ডের। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে হয়েছে তাই। জেসন রয় না থাকায় মিডল অর্ডার থেকে উন্নতি পাওয়া জনি বেয়ারস্টোকে নামানো হয় ওপেনিংয়ে। আর দলের ভারসাম্য বাড়াতে মিডলঅর্ডারে নামানো হয় স্যাম বিলিংসকে। সেই বিলিংস শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি! বেয়ারস্টো শুরু থেকে ধুঁকছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদির সুইংয়ে। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ ওভারে অ্যাডাম মিলনেকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে কেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন ১৩ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭১* আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১০১* রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলেন জস বাটলার। তাঁর ব্যাটে ঝড় ওঠেনি গতকাল। ইশ সোধির বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান ২৯ রান করা বাটলার। এর পরই হালটা ধরেন ডেভিড মালান ও মঈন আলী। তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৬৩ রানের জুটি। ইংল্যান্ড ভালো একটা স্কোরের ভিত পেয়েছিল তাতে। ৪১ করা মালানকে ফিরিয়ে জুটিটা ভাঙেন টিম সাউদি। অবশ্য উইকেটরক্ষক ডেভন কনওয়ে ক্যাচ না ছাড়লে ১০ রানেও আউট হতে পারতেন মালান।

ইংল্যান্ড শেষ ১০ ওভারে তোলে ৯৯ রান। ডেভিড মালান দলের হয়ে প্রথম ছক্কা মারেন ১৬তম ওভারের প্রথম বলে। এরপর ইনিংসজুড়ে ইংল্যান্ডের ছক্কা ৪টি। পাওয়ার প্লেতে গুটিয়ে থেকেও ইংল্যান্ডের রানের ফোয়ারা ছোটানোর দায় ট্রেন্ট বোল্টেরও। নিউজিল্যান্ডের সময়ের সেরা এই পেসার ৪ ওভারে ৪০ রান খরচায় ছিলেন উইকেটহীন। বিস্ময়করভাবে ছন্দে থাকা মিচেল স্যান্টনার করেছেন ১টিই ওভার। সেই স্যান্টনার ব্যাট হাতে নেমেছিলেন সাত নম্বরে। নিউজিলান্ডকে সাফল্যের সপ্তাকাশে নিতে কিছুটা অবদান রাখায় রাতটা উৎসবময় কাটার কথা তাঁর। সঙ্গে পুরো নিউজিল্যান্ডেরই।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার

ক্ষুদে মেসির  দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

প্রতিশোধ নিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টির ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত : ১১:৪০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। ‘সেমিফাইনালের দল’ নিউজিল্যান্ড গত চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই ফাইনালে! গতকাল ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে আরেকটি ফাইনালের পাশাপাশি কেন উইলিয়ামসনরা নিয়েছেন মধুর প্রতিশোধ। ২০১৯ সালে লর্ডসের মহাকাব্যিক ফাইনালে উত্তেজনা-উন্মাদনা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল শেষে নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে শিরোপা জিতেছিল যে ইংল্যান্ডই।

ড্যারিল মিচেলের তখনো অভিষেক হয়নি। শিরোপা হারাতে দেখে কাঁদছিলেন ফুঁপিয়ে। সেই মিচেলের ব্যাটেই স্বপ্নপূরণ। মধুর প্রতিশোধ নিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জ একটা সময় পাহাড় সমান হয়ে পড়েছিল কিউইদের জন্য। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ৫৭ রান! ড্যারিল মিচেলের ৪৭ বলে ৭২ রানের বিস্ফোরণে সেই পাহাড়ও টপকে যায় নিউজিল্যান্ড। অথচ তখনো বাকি পুরো এক ওভার!

নিউজিল্যান্ডের পরিচিতি ‘সেমিফাইনালের দল’। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে ছয়বার! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুবার বাদ পড়েছে শেষ চার থেকে। ওয়ানডেতে টানা দুইবার ফাইনাল খেলে কাটিয়েছিল খরাটা। সপ্তমবার এসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছেই হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। গতকালের জয়ে মনের জ্বালাটা জুড়ানোরই কথা তাদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এত দিন সর্বোচ্চ ১৪০ রান তাড়া করেই জেতার নজির ছিল কিউইদের।

গতকাল আবুধাবিতে বদলাল সেই ইতিহাসও।

১৬৭ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড চাপে পড়ে তিন ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে। মার্টিন গাপটিলের পর কেন উইলিয়ামসনকেও ফেরান ক্রিস ওকস। দলের সেরা দুই ব্যাটারকে হারানোর পর ইনিংস গড়ায় মনোযোগ দেন ডেরিল মিচেল ও ডেভন কনওয়ে। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ৮২ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে কিউইরা। লিয়াম লিভিংস্টোনের লেগ স্পিনে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসেছিলেন কনওয়ে। টার্নে বিভ্রান্ত হন তিনি। উইকেটের

পেছনে থাকা জস বাটলারের স্টাম্পিংয়ে শেষ হয় তাঁর ৪৬ রানের ইনিংস।

শেষ ২৪ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৫৭ রান। তখনই ক্রিস জর্ডানের ওপর চড়াও জিমি নিশাম। জর্ডানের করা ১৭তম ওভারে আসে ২৩ রান। ২ ছক্কা আর ১টি বাউন্ডারি আসে নিশামের ব্যাট থেকে। ঘুরে যায় ম্যাচের গতিপথ। লর্ডস-ম্যানচেস্টারে থাকা সমর্থকরা যায় চুপসে। পৃথিবীর আরেক পাশে থাকা ক্রাইস্টচার্চ-হ্যামিল্টনে তখনো উৎসবের রং। ১০ বলে ২৬ করে নিশাম ফিরলেও ড্যারিল মিচেল তখনো অবিচল। হ্যামিল্টনের এই ক্রিকেটার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কিউইদের পৌঁছে দেন ফাইনালে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করা ইংল্যান্ড ঝড় তুলতে পারেনি প্লেতে। ৬ ওভারে কেবল ৪০ রান। ফর্মের তুঙ্গে থাকা জস বাটলারও করতে পারেননি তেমন কিছু। তবে বিশ্বকাপে নিজের সেরা ব্যাটিংটা সেমিফাইনালেই করলেন মঈন আলী। ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় খেলেন ৫১* রানের ইনিংস।

এবারের বিশ্বকাপে টস গুরুত্বপূর্ণ শুরু থেকেই। শিশিরের কারণে রান তাড়া করা দল পেয়েছে বাড়তি সুবিধা। সেমিফাইনালে ভাগ্যটা পক্ষে ছিল না ইংল্যান্ডের। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে হয়েছে তাই। জেসন রয় না থাকায় মিডল অর্ডার থেকে উন্নতি পাওয়া জনি বেয়ারস্টোকে নামানো হয় ওপেনিংয়ে। আর দলের ভারসাম্য বাড়াতে মিডলঅর্ডারে নামানো হয় স্যাম বিলিংসকে। সেই বিলিংস শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি! বেয়ারস্টো শুরু থেকে ধুঁকছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদির সুইংয়ে। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ ওভারে অ্যাডাম মিলনেকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে কেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন ১৩ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭১* আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১০১* রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলেন জস বাটলার। তাঁর ব্যাটে ঝড় ওঠেনি গতকাল। ইশ সোধির বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান ২৯ রান করা বাটলার। এর পরই হালটা ধরেন ডেভিড মালান ও মঈন আলী। তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৬৩ রানের জুটি। ইংল্যান্ড ভালো একটা স্কোরের ভিত পেয়েছিল তাতে। ৪১ করা মালানকে ফিরিয়ে জুটিটা ভাঙেন টিম সাউদি। অবশ্য উইকেটরক্ষক ডেভন কনওয়ে ক্যাচ না ছাড়লে ১০ রানেও আউট হতে পারতেন মালান।

ইংল্যান্ড শেষ ১০ ওভারে তোলে ৯৯ রান। ডেভিড মালান দলের হয়ে প্রথম ছক্কা মারেন ১৬তম ওভারের প্রথম বলে। এরপর ইনিংসজুড়ে ইংল্যান্ডের ছক্কা ৪টি। পাওয়ার প্লেতে গুটিয়ে থেকেও ইংল্যান্ডের রানের ফোয়ারা ছোটানোর দায় ট্রেন্ট বোল্টেরও। নিউজিল্যান্ডের সময়ের সেরা এই পেসার ৪ ওভারে ৪০ রান খরচায় ছিলেন উইকেটহীন। বিস্ময়করভাবে ছন্দে থাকা মিচেল স্যান্টনার করেছেন ১টিই ওভার। সেই স্যান্টনার ব্যাট হাতে নেমেছিলেন সাত নম্বরে। নিউজিলান্ডকে সাফল্যের সপ্তাকাশে নিতে কিছুটা অবদান রাখায় রাতটা উৎসবময় কাটার কথা তাঁর। সঙ্গে পুরো নিউজিল্যান্ডেরই।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার