উন্নত জাতের বরই চাষ করে এলাকায় বাজিমাত সৃষ্টি করছেন মিষ্টু মিয়া নামের এক কৃষক। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আলুবাগান এলাকায় প্রায় ৬ একর যায়গাজুড়ে বাগান করেছেন তিনি। নিজ বাসা নরসিংদী জেলার বেলাবো থানায় হলেও দীর্ঘদিন থেকে আলু বাগান এলাকায় বাস করছেন। প্রায় ১১বছর প্রবাসে ছিলেন। তারপর দেশে কিছু করার জন্য চলে আসেন নিজ দেশে।
দেশে এসে বন্ধুদের অনুপ্রাণিতে এবং ইউটিউব দেখে পরিকল্পনা করেন কুল চাষের। পরে আলুবাগানে এসে পতিত জমি পছন্দ করেন। প্রায় ১০ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। বাগান তৈরির জন্য মুলধন থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করেন।
প্রথমে ১১৫৬টি চারা আনেন চুয়াডাঙ্গা থেকে। বর্তমানে তার জমিতে নানা জাতের বরইয়ে ছেয়ে গেছে বাগান।
চাষ শুরু হওয়ার ১০মাসের মাথায় বাগানে ফলও ধরেছে আশাতীত। তবে, এ বছর মিস্টু মিয়া এখান থেকে ৮-১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তাই এই কুল দিয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার মুখেও হাসি ফুঁটেছে।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের কুল ঘেঁষে প্রায় ১০বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই বাগান করেছেন তিনি। প্রতি গাছেই ৮-১০ কেজি করে বরই ঝুলে আছে। বাগানের চারপাশ জাল দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। সাথে আরও দু’জন রয়েছেন বাগান পরিচর্যা ও দেখভালের দায়িত্বে। নিবিড় পরিচর্যায় গাছগুলো বেড়ে উঠেছিল।
বাগানজুড়ে রয়েছে বাউকুল, আপেল কুল ও বল সুন্দরী। এসব কুল খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক।
এছাড়াও বাগানের অপর একপাশে তরমুজের ফলন করছেন তিনি।
তার এরকম উদ্যোগে ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার এই বাগানটি দেখে স্থানীয় এলাকার অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
ওপাশে ভারতের বড় বড় পাহাড়। পাশে রয়েছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের কাছেই তার বাগান হওয়ায় প্রকৃতি প্রেমিরাও ভিড় করেন। যা এখন স্থানীয়দের কাছে মিস্টু মিয়ার কুল বাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মিস্টু মিয়া জানান, এরআগে এরকম বাগান করিনি। ইউটিউব ও টিভি চ্যানেলে দেখে শখ হয় একটি বাগান করার। তারপর এক বন্ধুর সহায়তায় জায়গাটি ঘুরে দেখি৷ এলাকায় যখন এক-দুটি কুল গাছ দেখেছি তখন আমার মনে হল এখানে জমিতে ভাল কুল হবে। যায়গাটি চমৎকার হওয়ায় এখানে চাষে আগ্রহী হই। তারপর চুয়াডাঙ্গা থেকে ছয় ইঞ্চি সাইজের চারা এনে চাষ শুরু করি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যায়গা চুক্তিসহ প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই ফলগুলো বাজারজাত করতে পারবো’।
সব মিলিয়ে এ বছর লাভমান না হলেও ৭-৮ লাখ টাকার মুলধন উঠে আসবে।
তাছাড়াও সরকারিভাবে যদি কোন সহায়তা পাই তাহলে বাগানটি আরও বড় করার ইচ্ছে আছে।
বাগানটির যায়গার মালিক ওমর ফারুক জানান, আসলে বাগানে না আসলে বিশ্বাসই হতো না এতো সুন্দর একটা বাগান তৈরি করেছেন মিস্টু মিয়া। ওনি যখন ১০মাস আগেও পরিকল্পনা করেন তখন আমি নিজেও আতঙ্কে ছিলাম। এখানে ভালো হবে কি না। ওনার পরিশ্রমের ফসল হিসেবে এতো সুন্দর একটি বাগান হওয়ায় আমি নিজেও অভিভূত। আমাদের এলাকায় যারা অন্যান্য কৃষক আছে আমি তাদেরকে বলবো আপনারা আসেন। বাগানটি দেখেন। আমার মনে হয় এরকম অনেক যায়গা পতিত আছে। যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে কৃষি সম্ভাবনা গড়ে উঠবে। তাই এরকম বাগান তৈরিতে স্থানীয় অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হবেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন জানান, ফিল্ড সুপারভাইজার মারফতে জানতে পেরেছি নরসিংদী হতে আসা এক কৃষক কূল বাগানটি করেছেন৷ আমার ফিল্ড সুপারভাইজার বাগানটি কয়েকবার পরির্দশন করে কৃষককে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছেন। দ্রুত বাগানটি পরিদর্শন করবো।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ