আমের রাজধানী নামে খ্যাত কানসাট বাজারে পার্শে রাজার বাগানে ম্যাংগো মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে হতাশাগ্রস্থ আমচাষীদের মাঝে দীর্ঘদিন পর আশার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে।শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাতে প্রায় ৩৭হাজার হেক্টর জমিতে ৩লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি হয়। শিবগঞ্জে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮০% লোকের জীবনজীবীকার আমের উপর নির্ভরশীল। অনেক বছর আগে থেকেই শিবগঞ্জে আম অর্থকারী ফসল বলে আখ্যায়িত।মধ্যখানে আমের ঐতিহ্য কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিবগঞ্জের কানসাট রাজার বাগানে বঙ্গবন্ধু ম্যাংগো মিউজিয়াম। যার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু ম্যাংগো মিউজিয়ামের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিবগঞ্জের আমের হারানো গৌরব ফিরে পাবে , অন্যদিকে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। সংগে চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রেও এ স্থানটি সুনাম অর্জন করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আম ব্যবসা্য়ীয়দের সূত্রে জানা গেছে এখানে প্রায় ৩২ একর খাস জমির উপর ১শ বছরের পুরাতন ১৬ জাতের ২১শ টি আম গাছ আছে। যা ১শ বছর আগে ময়মনসিংহের জমিদার রাজা শসিতকান্ত আচার্য কানসাটে কাচারী বাড়ি নির্মানের মাধ্যমে খাজনা আদায় করতো। তার হাতে এ আম বাগান তৈরী। যা কুজ্জা রাজার বাগান নামে পরিচিত। বাগানটির ঐতিহাসিক ঐতিহ্য থাকায় দেশ বিদেশ হতে অনেকে এ বাগানটি পরিদর্শনে আসতো। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার কারনে পরিদর্শনে আসা পর্যটকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে কথিত আছে।শুধু তাই নয় এ বিশাল বাগানটি ঘিরে এখানে বসতো মাদকের হাট ও আড্ডা, চলতো নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ। লুটপাট হতো বিশাল অংকের সরকারী রাজ্স্ব। যা শিবগঞ্জ উপজলো নির্বাহী কর্তকর্তা মোঃ সাকিব আল রাব্বির নজরে আসলে বঙ্গবন্ধু ম্যাংগা মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করার সিন্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন।প্রথমে সেখানে অবৈধভাবে ২৭টি স্থাপণা ও বাড়ি উচ্ছেদ করে তাদের অন্যস্থানে পূর্নবাসন করে সীমানাহীন বাগানটির সীমানা নিধারণ করা হয়েছে। জরাজীর্ন রেষ্টহাউসটিকে আধুনিকরণ করা হয়েছে। জাতির পিতার মুর্যালসহ দৃষ্টি নন্দন গেইট নির্মান, পুকুর খনন, ১‘শ জাতেরআমের নামকরণসহ ম্যাংগো পিডিয়া প্রকাশনা, আধুনিক জার্মাপ্লাজমের চারা রোপন, টপ ওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে পুরাতন গাছকে আধুনিক গাছে রুপান্তরিত করা, নার্সারী নির্মান, পর্যটকদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা, বাগানের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ম্যাংগো মিউজিয়ামকে পর্যটকদের আকর্ষণীয় করা ও পর্যটক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য অনেক উদ্যোক্তা তৈরী করা হয়েছে।ইসরাইলের প্রযুক্তিতে প্রতি একরে ১৫মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষে আলট্রাহাইডেন সিটি পদ্ধতিতে আম চাষের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।দেশ বিদেশ হতে আমের জাত সংগ্রহ ও জার্ম প্লাজম তৈরী হচ্ছে।যেখান থেকে আমচাষীরা উন্নত জাতের স্যাপলিং সগ্রহ করে আম ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাতে পারবে। এ মিউজিয়াম হতে জি আই সনদ প্রাপ্ত খিরসাপাত আমের স্যাপলিং সংগ্রহ হচ্ছে।এখানে বিদেশী আমের কর্ণার স্থাপনের মাধ্যমে জাপানের মিয়াজাকি, দিল্লীর চোষা, আমেরিকার ব্লাকষ্টারসুম্ষিটা চিয়াং মাই অ্যাপেল, ম্যাংগো ও ব্লু ম্যাংগো লাগানো হয়েছে এবং আরো লাগানো হবে।তাছাড়া এখানে বিলুপ্ত প্রজাতির আম মেমপছন্দ, গর্জিত, বৌভুলানোসহ বিভিন্ন ধরনের আমের চারা উৎপাদন করা যাবে। এবছর এখানে বিভিন্ন প্রজাতির চারা তৈরীর পরিকল্পনা রয়েছে।শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বীর উদ্যেগ গ্রহনের পর সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়াম্যান এবি এম আজাদ মিউজিয়ামের মধ্যে বারি কর্ণারের শুভ উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মিউজিয়াম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শিবগঞ্জের হারানো গৌরব ফিরে আসবে, আমচাষীরা তাদের নায্য অধিকার ফিরে পাবে। জেলার শিবগঞ্জের আমের আলাদা স্বাদের ইতিহাস ফিরে আসবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং দেশ বিদেশে ম্যাংগো মিউজিয়ারে খ্যাতি বৃদ্ধি পাবে। শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুর ইসলাম,স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা:সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন বঙ্গবন্ধু ম্যাংগো মিউজিয়ামের মাধ্যমে শিবগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন তা অক্ষুন্ন থাকে সে ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর