১১:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

আফগানিস্তানে বিশ্ব ব্যাংকের ৬০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প স্থগিত

আফগানিস্তানে ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রকল্প স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মূলত ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণের চারটি প্রকল্প স্থগিত করেছে সংস্থাটি। আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল খোলার পরও শাসকগোষ্ঠী তালেবান সেগুলো আবার বন্ধ ঘোষণা করায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। স্থগিত করা এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিখাতে উন্নতির লক্ষ্য ছিল। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্প থেকে মেয়ে ও নারীরা যেন উপকৃত হতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে বলে আগেই জানিয়েছিল সংস্থাটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত ২৩ মার্চ আফগানিস্তানে খুলেছিল মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় ক্লাসে ফিরেছিল মেয়ে শিক্ষার্থীরাও।

কিন্তু স্কুল খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেসময় এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এএফপি’র একটি টিম রাজধানী কাবুলের জারঘোনা হাইস্কুলে উপস্থিত ছিলেন। এসময় এক শিক্ষক সেখানে প্রবেশ করে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়া নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে আসা শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনা পেয়ে অশ্রুসিক্তভাবে স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। অবশ্য তালেবান দাবি করেছে, ‘শরিয়া আইন ও আফগান ঐতিহ্য’ অনুসারে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই স্কুলগুলো আবারও চালু হবে। তবে খোলার পরও স্কুল বন্ধ ঘোষণার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে তালেবান। বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে পুরুষদের মতো নারী ও মেয়েদেরকে অধিকার নিশ্চিত করতেই বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন ট্রাস্ট ফান্ড (এআরটিএফ)-র অর্থায়নে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

তবে গত বছর তালেবান গোষ্ঠী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে এই ফান্ড ফ্রিজ করা হয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্য-সহ ‘জরুরি প্রয়োজন’ মেটাতে ব্যয় করার জন্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবহার করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী বোর্ড। এই পরিকল্পনার অধীনে বিপুল এই অর্থ তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করে এর পরিবর্তে জাতিসংঘের সংস্থা এবং এর সহায়ক গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিতরণ করার কথা বলা হয়। গত এক মার্চ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, ‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিখাতে জরুরি প্রয়োজনের পাশাপাশি আফগান নাগরিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চারটি প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এআরটিএফ’র দাতারা।’

তবে স্থগিত ঘোষণার পর বিবিসি বলছে, এই প্রকল্পগুলো তখনই পুনরায় চালু করা হবে যখন নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে বলে ব্যাংক আত্মবিশ্বাসী হবে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশের কর্মকর্তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে মেয়েদের স্কুল বন্ধের বিষয়ে তালেবানের পদক্ষেপকে ‘গভীরভাবে বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তালেবানের সঙ্গে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য একটি বৈঠক বাতিলের কথাও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। ২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ দেশ তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি না দিলেও তারা বারবার মানবধিকার ও নারী অধিকারের বিষয়টি তুলেছে। তাদের অন্যতম দাবি ছিল, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তালেবান সরকারের স্বীকৃতি এবং আফগানিস্তানকে ত্রাণসাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও নারী অধিকার ও শিক্ষার বিষয়টি তারা সামনে এনেছে। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। তখন তারা মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। অধিকাংশ চাকরি মেয়েরা করতে পারত না। এবার তালেবান আবার আফগানিস্তান শাসন করার পর মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি সংখ্যায় স্কুল ও কলেজে ফিরেছে। অবশ্য তালেবান বরাবরই বলছে, তারা নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।

ট্যাগ :

ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

আফগানিস্তানে বিশ্ব ব্যাংকের ৬০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প স্থগিত

প্রকাশিত : ১২:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২

আফগানিস্তানে ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রকল্প স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মূলত ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণের চারটি প্রকল্প স্থগিত করেছে সংস্থাটি। আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল খোলার পরও শাসকগোষ্ঠী তালেবান সেগুলো আবার বন্ধ ঘোষণা করায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। স্থগিত করা এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিখাতে উন্নতির লক্ষ্য ছিল। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্প থেকে মেয়ে ও নারীরা যেন উপকৃত হতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে বলে আগেই জানিয়েছিল সংস্থাটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত ২৩ মার্চ আফগানিস্তানে খুলেছিল মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় ক্লাসে ফিরেছিল মেয়ে শিক্ষার্থীরাও।

কিন্তু স্কুল খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেসময় এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এএফপি’র একটি টিম রাজধানী কাবুলের জারঘোনা হাইস্কুলে উপস্থিত ছিলেন। এসময় এক শিক্ষক সেখানে প্রবেশ করে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়া নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে আসা শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনা পেয়ে অশ্রুসিক্তভাবে স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। অবশ্য তালেবান দাবি করেছে, ‘শরিয়া আইন ও আফগান ঐতিহ্য’ অনুসারে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই স্কুলগুলো আবারও চালু হবে। তবে খোলার পরও স্কুল বন্ধ ঘোষণার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে তালেবান। বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে পুরুষদের মতো নারী ও মেয়েদেরকে অধিকার নিশ্চিত করতেই বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন ট্রাস্ট ফান্ড (এআরটিএফ)-র অর্থায়নে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

তবে গত বছর তালেবান গোষ্ঠী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে এই ফান্ড ফ্রিজ করা হয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্য-সহ ‘জরুরি প্রয়োজন’ মেটাতে ব্যয় করার জন্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবহার করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী বোর্ড। এই পরিকল্পনার অধীনে বিপুল এই অর্থ তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করে এর পরিবর্তে জাতিসংঘের সংস্থা এবং এর সহায়ক গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিতরণ করার কথা বলা হয়। গত এক মার্চ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, ‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিখাতে জরুরি প্রয়োজনের পাশাপাশি আফগান নাগরিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চারটি প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এআরটিএফ’র দাতারা।’

তবে স্থগিত ঘোষণার পর বিবিসি বলছে, এই প্রকল্পগুলো তখনই পুনরায় চালু করা হবে যখন নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে বলে ব্যাংক আত্মবিশ্বাসী হবে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশের কর্মকর্তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে মেয়েদের স্কুল বন্ধের বিষয়ে তালেবানের পদক্ষেপকে ‘গভীরভাবে বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তালেবানের সঙ্গে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য একটি বৈঠক বাতিলের কথাও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। ২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ দেশ তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি না দিলেও তারা বারবার মানবধিকার ও নারী অধিকারের বিষয়টি তুলেছে। তাদের অন্যতম দাবি ছিল, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তালেবান সরকারের স্বীকৃতি এবং আফগানিস্তানকে ত্রাণসাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও নারী অধিকার ও শিক্ষার বিষয়টি তারা সামনে এনেছে। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। তখন তারা মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। অধিকাংশ চাকরি মেয়েরা করতে পারত না। এবার তালেবান আবার আফগানিস্তান শাসন করার পর মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি সংখ্যায় স্কুল ও কলেজে ফিরেছে। অবশ্য তালেবান বরাবরই বলছে, তারা নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।