০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলবে

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের দিনই আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম খুচরা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। বাজেট পদক্ষেপের ফলে সামনে অপেক্ষা করছে জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় আরও অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ঘটাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়াতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম স্থায়ী করার আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে আমরা ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি চালু করেছি।“এ কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর অধীনে করোনাকালে নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ ২৫০০ টাকা করে পেয়েছে যেসব পরিবার, তারাসহ মোট ১ কোটি পরিবার টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সহায়তা পাচ্ছে।

সরকারি এ উদ্যোগের ফলে দেশের প্রায় ৫ কোটি স্বল্প আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। যা বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’অপ্রত্যাশিত অভিঘাত করোনার প্রভাব কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর মাধ্যমে সৃষ্ট চলমান সংঘাতের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ ভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়তে থাকে। অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বিশ্ববাজারে বেড়েছে ১২ গুণ। ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছর মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২৯ শতাংশ এবং গমের দাম ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চিনির দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) তথ্য মতে, মূল্যবৃদ্ধির এই হার ২০২২ সাল জুড়েও অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না। সংসার চালাতে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের বেশির ভাগ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, ‘জাতির পিতা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেখানে যেন মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা থাকে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য না থাকে সে জন্য সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিধানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন।

‘তার হাত ধরে যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়েছিল, সেটি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনচক্রনির্ভর ব্যাপক কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই প্রতি বছর সামাজিক সুরক্ষা কাভারেজ ও বাজেট বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে দেশের ২৯ শতাংশ পরিবার এই সুরক্ষার আওতায় এসেছে। বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীলতায় না ফেরা পর্যন্ত দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে এমনকি বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণের পরিকল্পনা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলবে

প্রকাশিত : ১২:০০:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের দিনই আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম খুচরা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। বাজেট পদক্ষেপের ফলে সামনে অপেক্ষা করছে জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় আরও অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ঘটাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়াতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম স্থায়ী করার আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে আমরা ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি চালু করেছি।“এ কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর অধীনে করোনাকালে নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ ২৫০০ টাকা করে পেয়েছে যেসব পরিবার, তারাসহ মোট ১ কোটি পরিবার টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সহায়তা পাচ্ছে।

সরকারি এ উদ্যোগের ফলে দেশের প্রায় ৫ কোটি স্বল্প আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। যা বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’অপ্রত্যাশিত অভিঘাত করোনার প্রভাব কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর মাধ্যমে সৃষ্ট চলমান সংঘাতের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ ভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়তে থাকে। অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বিশ্ববাজারে বেড়েছে ১২ গুণ। ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছর মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২৯ শতাংশ এবং গমের দাম ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চিনির দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) তথ্য মতে, মূল্যবৃদ্ধির এই হার ২০২২ সাল জুড়েও অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না। সংসার চালাতে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের বেশির ভাগ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, ‘জাতির পিতা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেখানে যেন মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা থাকে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য না থাকে সে জন্য সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিধানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন।

‘তার হাত ধরে যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়েছিল, সেটি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনচক্রনির্ভর ব্যাপক কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই প্রতি বছর সামাজিক সুরক্ষা কাভারেজ ও বাজেট বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে দেশের ২৯ শতাংশ পরিবার এই সুরক্ষার আওতায় এসেছে। বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীলতায় না ফেরা পর্যন্ত দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে এমনকি বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণের পরিকল্পনা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’