১০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো বালু নদীও আজ দখলে দূষণে জর্জরিত!

সীমানা নিশ্চিত না হয়ে পিলার (খুটি) স্থাপন করায় তুরাগ-বালু নদী চলে গেছে ভুমি দস্যুদের পেটে। আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে ইটভাটা, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ তৈরি পোশাক কারখানা আর সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গিলে ফেলেছে তুরাগ আর বালু নদীকে। সরকার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে পিলার স্থাপন করে এখন নিজেই বলছেন যে এসব খুঁটি স্থাপন করা ঠিক হয়নি। সর্বনিন্ম দশ বর্গফুট থেকে শুরু করে তিন লাখ ৯০ হাজার বর্গফুটের দখলদারকে সরকারীভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্র জানায় কয়েক হাজার পিলার নদীর পেটে স্থাপন করা হয়েছে। পুনরায় জরিপ না করে সীমানা পিলার স্থাপন স্থগিত রাখারও সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত একটি মূল্যায়ণ কমিটি। অভিযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ছিল বলে এমনটা ঘটেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন আর সংবাদ মাধ্যমগুলো বার বার বিষয়টি তুলে ধরলেও এসব খুঁটি স্থাপনের সময় প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সব কিছু ঠিকঠাকভাবে করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে স্বীকার করা হয়েছে যে সঠিকভাবে পিলার স্থাপন করা হয়নি। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো বালু নদীও আজ দখলে দূষণে জর্জরিত। এই নদীতে কয়েক বছর আগেও বড় বড় লঞ্চ চলতো।এখন নাব্যতা সংকটে নদীর পানির প্রবাহও কমে গেছে। দখলের কারনে বিপন্ন হতে চলেছে নদীটি। প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর ১৮ কিলোমিটার তীরবর্তী এলাকা এখন দখলদারদের কব্জায়। এভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীটি গিলে খাচ্ছে।অভিযোগ রয়েছে থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে তারা দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে।ভূইয়াপাড়া, টেকপাড়া, পশ্চিমগাঁও, বালুরপার, নড়াইমোড়, ঠুলঠুলিয়া, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ, ডুমনি, মান্ডা, দক্ষিনগাঁও, কাজলা, ইউসুফগঞ্জ, কাঁচকুড়া, কাঁঠালদিয়া, ছোলমাইদ, ও পলারটেক এলাকাগুলো নদীতীরে অবস্থিত। নদী তীরের বেশিরভাগ জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসাকেন্দ্র।এ ছাড়া নদীর অপর প্রান্তে অবস্থিত টঙ্গী ও রূপগঞ্জ উপজেলার কিছু কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকা শতাধিক রাজনৈতিক নেতার অবৈধ দখলে।সেখনে ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ আট শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।মাসে আদায় হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা।ওই নেতাদের নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই।যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা সে দলের সমর্থক সেজে দখলে নামেন। দখল বাণিজ্যের কারনে টঙ্গী রেল ও ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু এখন ঝুঁকির মুখে।মূলত বালু নদী টঙ্গীর আবদুলাহপুর থেকে শুরু হয়ে ডেমরা পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিন মোমিন হাউজিং, চন্দ্রিমা উদ্যান হাউজিং, ড্যানিস হাউজিং, উত্তরা সিটি, গ্লোবাল সিটি, জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প এবং কপোতাক্ষ সিটির মতো সাতটি আকবাসন প্রকল্প তুরাগ এবং বালু নদের ভিতরে গড়ে ওঠেছে। এদের কেউ কেউ এরই মধ্যে বালু ফেলে নদী ভরাটও করে ফেলেছে। আবার কেউ কেউ সাইনবোর্ড গেড়ে দখলের প্রক্রিযা শুরু করেছে। আবাসন প্রকল্পের নদী খেকো, দখলবাজদের অত্যাচারে বালু ও তুরাগ নদী আজ মরতে বসেছে। অনেক আগেই হারিয়েছে স্রোতধারা।
আব্দুল্লাপুর এবং আচিরপুর মৌজায় নদী দখলের স্বীকার হয়েথে। জেলার পাগাড় মৌজায় পিলার ঠিকমতো না বসানোতে আনোয়ার গ্রুপ, জাবের জোবায়ের, প্যারাডাইস নদী দখল করেছে। হারবাইদ মৌজায় ১৫০ ফুট নদীর ভিতরে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পিলার তুলে ফেলেছে স্থানীয়রা। আবার কোন কোন জায়গায় মাল-মেটারিয়ালস ঠিক মতো না দেয়ার কারণে এমনিতে পিলার ভেঙ্গে গেছে। তুরাগের মতো বালু নদীতেও পিলার স্থাপনে যাচ্ছে তাই করেছে জেলা প্রশাসন। বালু নদীর ১৪ টি স্থানে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এই নদীতেও পিলার নদীর অনেক ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুরের তালিয়া ও মাঠবাড়ি মৌজায় সি এস এবং আর এস নক্সা অনুযায়ী প্রথমে পিলার স্থাপন না করায় নতুন করে পিলার স্থাপন করায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মাঠবাড়ি মৌজার বিনিময় প্রোপার্টিজের নামে সাইন বোর্ড স্থাপন করে বালু নদীকে দখল করা হয়েছে। ইউসুফগঞ্জ মৌজায় ঢাকার অংশে ৪০ ফুট এবং নারয়ণগঞ্জ অংশে ৩০ ফুট নদীর মধ্যে বসানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পর্শি মৌজায় ইছাপুরা ব্রিজ ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় সীমানা পিলার ঠিক মতো না বসানো কারণে পাঁচ হাজার বর্গফুট এলাকায় বালু ভরাট করে পল্টি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। পাতিড়া মৌজায় ঠিক মতো পিলার বসানো হয়নি। তিশা গ্রুপ নদী দখল করেছে। রায়রাজানি মৌজায় ছোলেমান ভুইয়া নামে এক ভুমিদস্যু ৩০ হাজার বর্গফুট নদী দখল করেছে। এর কিছু দুরে জলসিড়ি আবাশন প্রকল্প নদী দখল করেছে। নারায়ণগঞ্জের কায়েমসাইর মৌজায় কপোতাক্ষ সিটি নামে আরেকটি আবাসন প্রকল্প রয়েছে। সেখানেও কোন সীমানা পিলার নেই। পিলার স্থাপন সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে ষ্পষ্ট করেই বলা হয়েছে নদীর সংখ্যা অনুযায়ী তীর ভুমি সংরক্ষন করে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়নি। তুরাগ ও বালু নদীর বিভিন্ন স্থান এতই সংকীর্ণ যে নিরাপদে নৌপরিবহনের কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্যে নৌপথকে সর্বনিন্ম ১০০ মিটার প্রশস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়োজনে বালু ও তুরাগ নদীর যেসব স্থান বেশি সরু সেখানে জমি অধিগ্রহন করে হলেও নদীকে প্রশস্ত করতে হবে। ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথের অবস্থা এমন হয়েছে যে দখলদারদের কাছ থেকে উল্টো জমি কিনে নিয়ে নদী বাঁচাতে হবে। পরিবেশ রক্ষাকারি সংগঠনের এক্সপার্টরা লেছেন, দীর্ঘ দিন থেকে অবহেলা করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গাই মাত্র ১০০ মিটারের চেয়েও কম প্রশস্ত বালু ও তুরাগ নদী। অথচ বিগত ২২ বছর ধরে নদী বাঁচাও নামে আন্দোলন করে আসছে অনেক সংগঠন। সরকারের পালা বদলের খেলায় দখলকারিরা একটু নড়ে-চড়ে বসেন মাত্র। প্রভাবশালীরাই মূলত নদীর উপর জবর দখল করে।
সূত্র মতে, তুরাগ নদী ও বালু নদীর বড় দখলদারদের মধ্যে রয়েছে, এমবিসি ইটভাটা, এমআরএইচ ইটভাটা, মীর আক্তার সিমেন্ট রেডিমিক্স, এ্যাগ্রোভিটা, ক্রাউন সিমেন্ট রেডিমিক্স, গাও গেরাম কমিউনিটি সেন্টার, এনডিও রেডিমিক্স ((সেভেন রিংস) সিমেন্ট, সাজিদ ওয়াসিং প্ল্যান্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আজমীর গার্মেন্ট, এমএন ফেব্রিক্স, আনোয়ার গ্রুপ, জাবের জোবায়ের গং, প্যারাডাইস এবং তিশা গ্রুপ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দখলদার ক্ষমতাধর অথবা প্রভাবশালী হলেও এই উচ্ছেদের আওতায় পড়বেন। নদীর দখল ও দূষণ রোধ করার জন্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব সংস্থা সারা বছর ধরে কি করছে? তাদের কাজটাই বা কি? কেবল মাত্র দেশের সরকার প্রধান এ ক্ষেত্রে কোন কথা না বললে অথবা আদেশ না দিলে তারা কিছুই করতে পারে না। নাকি দখলকারিরাও সরকারের প্রভাবশালী নেতাকর্মী বলে তারা ভয় পায়। ভুমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব রফিউর আলমকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১০ সদেস্যর কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছেন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটি এর সমন্বয়ে যৌথ পরিদর্শন টিম গঠন করে অন্তত মাসে একবার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের প্রাণ গুরুত্বপূর্ন নদী রক্ষায় সরকার গঠিত কমিশনের কাছে প্রতিবেদন প্রদান করতে হবে। সীমানা পিলার ঠিকমতো না স্থাপন করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ না করার জন্যেও সুপারিশ করেছে এই কমিটি। তারা বলেছেন, সীমানা পিলার না বসিয়ে যেসব ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে তা স্থগিত করতে হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি নাগরিকের উপর ছিনতাইকারীর বর্বর হামলা ,দুই ছিনতাইকারী আটক

শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো বালু নদীও আজ দখলে দূষণে জর্জরিত!

প্রকাশিত : ০১:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২

সীমানা নিশ্চিত না হয়ে পিলার (খুটি) স্থাপন করায় তুরাগ-বালু নদী চলে গেছে ভুমি দস্যুদের পেটে। আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে ইটভাটা, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ তৈরি পোশাক কারখানা আর সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গিলে ফেলেছে তুরাগ আর বালু নদীকে। সরকার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে পিলার স্থাপন করে এখন নিজেই বলছেন যে এসব খুঁটি স্থাপন করা ঠিক হয়নি। সর্বনিন্ম দশ বর্গফুট থেকে শুরু করে তিন লাখ ৯০ হাজার বর্গফুটের দখলদারকে সরকারীভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্র জানায় কয়েক হাজার পিলার নদীর পেটে স্থাপন করা হয়েছে। পুনরায় জরিপ না করে সীমানা পিলার স্থাপন স্থগিত রাখারও সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত একটি মূল্যায়ণ কমিটি। অভিযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ছিল বলে এমনটা ঘটেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন আর সংবাদ মাধ্যমগুলো বার বার বিষয়টি তুলে ধরলেও এসব খুঁটি স্থাপনের সময় প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সব কিছু ঠিকঠাকভাবে করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে স্বীকার করা হয়েছে যে সঠিকভাবে পিলার স্থাপন করা হয়নি। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো বালু নদীও আজ দখলে দূষণে জর্জরিত। এই নদীতে কয়েক বছর আগেও বড় বড় লঞ্চ চলতো।এখন নাব্যতা সংকটে নদীর পানির প্রবাহও কমে গেছে। দখলের কারনে বিপন্ন হতে চলেছে নদীটি। প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর ১৮ কিলোমিটার তীরবর্তী এলাকা এখন দখলদারদের কব্জায়। এভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীটি গিলে খাচ্ছে।অভিযোগ রয়েছে থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে তারা দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে।ভূইয়াপাড়া, টেকপাড়া, পশ্চিমগাঁও, বালুরপার, নড়াইমোড়, ঠুলঠুলিয়া, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ, ডুমনি, মান্ডা, দক্ষিনগাঁও, কাজলা, ইউসুফগঞ্জ, কাঁচকুড়া, কাঁঠালদিয়া, ছোলমাইদ, ও পলারটেক এলাকাগুলো নদীতীরে অবস্থিত। নদী তীরের বেশিরভাগ জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসাকেন্দ্র।এ ছাড়া নদীর অপর প্রান্তে অবস্থিত টঙ্গী ও রূপগঞ্জ উপজেলার কিছু কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকা শতাধিক রাজনৈতিক নেতার অবৈধ দখলে।সেখনে ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ আট শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।মাসে আদায় হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা।ওই নেতাদের নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই।যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা সে দলের সমর্থক সেজে দখলে নামেন। দখল বাণিজ্যের কারনে টঙ্গী রেল ও ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু এখন ঝুঁকির মুখে।মূলত বালু নদী টঙ্গীর আবদুলাহপুর থেকে শুরু হয়ে ডেমরা পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিন মোমিন হাউজিং, চন্দ্রিমা উদ্যান হাউজিং, ড্যানিস হাউজিং, উত্তরা সিটি, গ্লোবাল সিটি, জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প এবং কপোতাক্ষ সিটির মতো সাতটি আকবাসন প্রকল্প তুরাগ এবং বালু নদের ভিতরে গড়ে ওঠেছে। এদের কেউ কেউ এরই মধ্যে বালু ফেলে নদী ভরাটও করে ফেলেছে। আবার কেউ কেউ সাইনবোর্ড গেড়ে দখলের প্রক্রিযা শুরু করেছে। আবাসন প্রকল্পের নদী খেকো, দখলবাজদের অত্যাচারে বালু ও তুরাগ নদী আজ মরতে বসেছে। অনেক আগেই হারিয়েছে স্রোতধারা।
আব্দুল্লাপুর এবং আচিরপুর মৌজায় নদী দখলের স্বীকার হয়েথে। জেলার পাগাড় মৌজায় পিলার ঠিকমতো না বসানোতে আনোয়ার গ্রুপ, জাবের জোবায়ের, প্যারাডাইস নদী দখল করেছে। হারবাইদ মৌজায় ১৫০ ফুট নদীর ভিতরে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পিলার তুলে ফেলেছে স্থানীয়রা। আবার কোন কোন জায়গায় মাল-মেটারিয়ালস ঠিক মতো না দেয়ার কারণে এমনিতে পিলার ভেঙ্গে গেছে। তুরাগের মতো বালু নদীতেও পিলার স্থাপনে যাচ্ছে তাই করেছে জেলা প্রশাসন। বালু নদীর ১৪ টি স্থানে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এই নদীতেও পিলার নদীর অনেক ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুরের তালিয়া ও মাঠবাড়ি মৌজায় সি এস এবং আর এস নক্সা অনুযায়ী প্রথমে পিলার স্থাপন না করায় নতুন করে পিলার স্থাপন করায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মাঠবাড়ি মৌজার বিনিময় প্রোপার্টিজের নামে সাইন বোর্ড স্থাপন করে বালু নদীকে দখল করা হয়েছে। ইউসুফগঞ্জ মৌজায় ঢাকার অংশে ৪০ ফুট এবং নারয়ণগঞ্জ অংশে ৩০ ফুট নদীর মধ্যে বসানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পর্শি মৌজায় ইছাপুরা ব্রিজ ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় সীমানা পিলার ঠিক মতো না বসানো কারণে পাঁচ হাজার বর্গফুট এলাকায় বালু ভরাট করে পল্টি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। পাতিড়া মৌজায় ঠিক মতো পিলার বসানো হয়নি। তিশা গ্রুপ নদী দখল করেছে। রায়রাজানি মৌজায় ছোলেমান ভুইয়া নামে এক ভুমিদস্যু ৩০ হাজার বর্গফুট নদী দখল করেছে। এর কিছু দুরে জলসিড়ি আবাশন প্রকল্প নদী দখল করেছে। নারায়ণগঞ্জের কায়েমসাইর মৌজায় কপোতাক্ষ সিটি নামে আরেকটি আবাসন প্রকল্প রয়েছে। সেখানেও কোন সীমানা পিলার নেই। পিলার স্থাপন সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে ষ্পষ্ট করেই বলা হয়েছে নদীর সংখ্যা অনুযায়ী তীর ভুমি সংরক্ষন করে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়নি। তুরাগ ও বালু নদীর বিভিন্ন স্থান এতই সংকীর্ণ যে নিরাপদে নৌপরিবহনের কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্যে নৌপথকে সর্বনিন্ম ১০০ মিটার প্রশস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়োজনে বালু ও তুরাগ নদীর যেসব স্থান বেশি সরু সেখানে জমি অধিগ্রহন করে হলেও নদীকে প্রশস্ত করতে হবে। ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথের অবস্থা এমন হয়েছে যে দখলদারদের কাছ থেকে উল্টো জমি কিনে নিয়ে নদী বাঁচাতে হবে। পরিবেশ রক্ষাকারি সংগঠনের এক্সপার্টরা লেছেন, দীর্ঘ দিন থেকে অবহেলা করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গাই মাত্র ১০০ মিটারের চেয়েও কম প্রশস্ত বালু ও তুরাগ নদী। অথচ বিগত ২২ বছর ধরে নদী বাঁচাও নামে আন্দোলন করে আসছে অনেক সংগঠন। সরকারের পালা বদলের খেলায় দখলকারিরা একটু নড়ে-চড়ে বসেন মাত্র। প্রভাবশালীরাই মূলত নদীর উপর জবর দখল করে।
সূত্র মতে, তুরাগ নদী ও বালু নদীর বড় দখলদারদের মধ্যে রয়েছে, এমবিসি ইটভাটা, এমআরএইচ ইটভাটা, মীর আক্তার সিমেন্ট রেডিমিক্স, এ্যাগ্রোভিটা, ক্রাউন সিমেন্ট রেডিমিক্স, গাও গেরাম কমিউনিটি সেন্টার, এনডিও রেডিমিক্স ((সেভেন রিংস) সিমেন্ট, সাজিদ ওয়াসিং প্ল্যান্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আজমীর গার্মেন্ট, এমএন ফেব্রিক্স, আনোয়ার গ্রুপ, জাবের জোবায়ের গং, প্যারাডাইস এবং তিশা গ্রুপ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দখলদার ক্ষমতাধর অথবা প্রভাবশালী হলেও এই উচ্ছেদের আওতায় পড়বেন। নদীর দখল ও দূষণ রোধ করার জন্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব সংস্থা সারা বছর ধরে কি করছে? তাদের কাজটাই বা কি? কেবল মাত্র দেশের সরকার প্রধান এ ক্ষেত্রে কোন কথা না বললে অথবা আদেশ না দিলে তারা কিছুই করতে পারে না। নাকি দখলকারিরাও সরকারের প্রভাবশালী নেতাকর্মী বলে তারা ভয় পায়। ভুমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব রফিউর আলমকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১০ সদেস্যর কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছেন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটি এর সমন্বয়ে যৌথ পরিদর্শন টিম গঠন করে অন্তত মাসে একবার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের প্রাণ গুরুত্বপূর্ন নদী রক্ষায় সরকার গঠিত কমিশনের কাছে প্রতিবেদন প্রদান করতে হবে। সীমানা পিলার ঠিকমতো না স্থাপন করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ না করার জন্যেও সুপারিশ করেছে এই কমিটি। তারা বলেছেন, সীমানা পিলার না বসিয়ে যেসব ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে তা স্থগিত করতে হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ