একদিকে সন্ত্রাসের মামলা। অন্যদিকে আদালত অবমাননার মামলা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারক শাইক উসমানি বলেছেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা ক্রিমিনাল। অভিযুক্ত হলে ৬ মাসের জেল হতে পারে তার। যদি তা-ই হয়, তাহলে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন তিনি। এ সময়ে তিনি কোনো নির্বাচনেই দাঁড়াতে পারবেন না।
তবে পাকিস্তানে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার নতুন নয়। বিরোধী দল এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকার সময় ইমরান খানের সরকারও তা ব্যবহার করেছে। একজন বিচারক, পুলিশের দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ‘সন্ত্রাসের’ দায়ে মামলা হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে। রোববার রাতে এই মামলার পর আগাম জামিন নিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
আদালত তাকে তিন দিনের জন্য অর্থাৎ ২৫শে আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে। কিন্তু ইসলামাবাদ হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ মঙ্গলবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে শোকজ নোটিশ জারি করেছে। কারণ, তিনি অতিরিক্ত সেশন জজ জেবা চৌধুরীকে হুমকি দিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি আদালত অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার যে বেঞ্চ থেকে তাকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে তাতে দায়িত্বে ছিলেন বিচারক মোহসিন আখতার কায়ানি, বিচারক বাবর সাত্তার এবং বিচারক মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেব। তারা শোকজ নোটিশে আগামী ৩১শে আগস্ট ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন ইমরান খানকে। একই সঙ্গে এই বেঞ্চে আরও বিচারককে অন্তর্ভুক্তির জন্য মামলাটি তারা ফরোয়ার্ড করেছেন প্রধান বিচারপতির কাছে। কয়েকদিন আগে ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ, তার চিফ অব স্টাফ শেহবাজ গিল’কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তা হেফাজতে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ২০শে আগস্ট ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। ওই র্যালি থেকে ইসলামাবাদের ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে ‘ছেড়ে দেয়া হবে না’ বলে হুমকি দেন ইমরান। শেহবাজ গিল’কে ‘অমানবিক নির্যাতনের’ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন তিনি। একই সঙ্গে শেহবাজ গিল’কে পুলিশের আবেদনে রিমান্ডে পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত সেশন জজ জেবা চৌধুরীকে আক্রমণ করেন ইমরান। জেবা’কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যা করেছেন তার জন্য তাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। শেহবাজ গিল দেশে সেনাবাহিনীর ভেতরে উস্কানি দিয়ে বিদ্রোহ সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সেই শেহবাজ গিলের ইস্যুতে ইমরান খান যা বলেছেন, এ জন্য তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। একই সঙ্গে তিনি আদালত অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ওদিকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই। তারা বলছে, সরকার বিরোধী র্যালিতে ইমরান খানকে নেতৃত্ব দেয়া থেকে আটকে দিতে এসব অভিযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওদিকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রেকর্ড জমা দেয়ার জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন ইসলামাবাদ এডভোকেট জেনারেল জাহাঙ্গীর খান জাদুন। এ আবেদনে তিনি আদালতের কাছে অনুরোধ করেন যে, ইমরান খান এর আগে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা, বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে রেকর্ড জমা দিতে চান। বলেন, ইমরান খানের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ আমি রেকর্ডে দিতে চাই। পিটিশনার যাতে আদালতকক্ষে বিচার বিভাগের এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইমরানের বক্তব্য বাজিয়ে শোনেন সেই আবেদনও করেছেন। এক্ষেত্রে ইউএসবি বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব




















