১২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

জীবন-জীবিকার উৎস্য পানি মুথার পাটি

ঠাকুরগাঁয়ের হরিপুর উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের পানি মুথা নামে খাল-বিল ও নুনার জলাশয়ে জন্ম নেওয়া এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি মাদুর বা পাটি বাজারে বিক্রি করে সুখে দুঃখে চলে তাদের জীবন জীবিকা। আর এ শিল্পকে পুঁজি করেই চলে তাদের জীবন সংসারের ভাগ্যের চাকা।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পানি মুথা দিয়ে তৈরি পাটি অন্যান্য পাটির চেয়ে দামে সস্তা হলেও শয্যা হিসাবে অনেক আরামদায়ক ও শীতল। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও, যামুন, মশালডাঙ্গী ও আটঘরিয়া গ্রামে ২৫ থেকে ৩০ বছর পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরির কাজ। কিন্তু দিনদিন মেলে মুথা বিলুপ্ত হওয়ায় জীবন সংসার ও এ শিল্পকে বাঁচাতে বিকল্পভাবে পানি মুথা নামে এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ (ঘাস) দিয়ে ৫-৭ বছর পূর্ব থেকে শুরু করেছে পানি মুথার পাটির বুনার কাজ। এই কাজের মাধ্যমে অনেকে খুঁজে পেয়েছে তাদের জীবন জীবিকা চলার ঠিকানা। পাটি বিক্রির উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলছে এসব পরিবারের সন্তানদের লেখা পড়াসহ সংসারের ভরণ পোষনের খরচ।

এলাকাবাসী জানান, পানি মুথা ঘাস জাতীয় এক শ্রেণীর জলজ উদ্ভিদ খাল, বিল ও নুনার জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয়। আর এই মুথা প্রতিবছর ভাদ্র আশ্বিন মাস থেকে পানি মুথাকে পাটি তৈরি করার জন্য সংগ্রহ করা হয়। অপরদিকে, পাটি তৈরির কারিগর জানান, মুথা কাটার পর তা বেছে এবং রোদে শুকিয়ে নিলে পাটি বুনানোর উপযোগী হয়। পানি মুথার পাটি তৈরির মূল উপকরণ হল মুথা, রং ও পাটের তৈরি চিকন দড়ি। স্থানীয়ভাবে তৈরি শান মেশিনে পাটের চিকন দড়ির সাহায্যে পাটি বানানো হয়। একটি শান মেশিন দিয়ে পাটি তৈরি করতে দুজন শ্রমিক বা কারিগরের প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই পাটি তৈরি করে বাজার জাত করা হয়। যামুন গ্রামের শ্রী নন্দন চন্দ্র জানান, আগে নিজে আবাদ করে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরি করতাম কিন্তু দিনদিন সার বিষসহ মুথা আবাদের সব কিছু দাম বেশি হওয়ার ফলে মেলে মুথা আবাদে অনেক কৃষক’ই আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে প্রায় বিলিনের পথে এ শিল্পের প্রকৃত উপকরণ। তাই জীবন সংসার বাঁচাতে আমরা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পানি মুথা কেটে নিয়ে নিজেই পাটি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে থাকি। একটি বড় মাপের মাদুর তৈরিতে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া মাঝারি ও ছোট আকারের পাটিতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। স্থানীয়ভাবে একটি ভাল মানের বড় পাটি বাজারে বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, মাঝারী পাটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ছোট আকারের পাটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এ উপজেলায় পানি মুথার পাটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় সরবরাহ করা হয়। পাটির শিল্পটি কুটির শিল্প ভূক্ত একটি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল- এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের জন্য কোন সরকারী ঋণের ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের নিজের পুঁজির উদ্যোগে পাটি তৈরি করে যা আয় হয় তাতে তাদের কোন রকম বেঁচে থাকার পথ চলে। এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারদের বেশিরভাগই ছেলে মেয়ে অশিক্ষিত ও পুষ্টিহীনতায় ভূগে। এ শিল্প ও পরিবারদের বাঁচাতে হলে সরকারকে সুদ মুক্ত বা স্বল্প সুদে ঋণ চালু করতে হবে। তা না হলে এই অসহায় পরিবারগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা এবং এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

জীবন-জীবিকার উৎস্য পানি মুথার পাটি

প্রকাশিত : ০১:৩৮:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঠাকুরগাঁয়ের হরিপুর উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের পানি মুথা নামে খাল-বিল ও নুনার জলাশয়ে জন্ম নেওয়া এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি মাদুর বা পাটি বাজারে বিক্রি করে সুখে দুঃখে চলে তাদের জীবন জীবিকা। আর এ শিল্পকে পুঁজি করেই চলে তাদের জীবন সংসারের ভাগ্যের চাকা।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পানি মুথা দিয়ে তৈরি পাটি অন্যান্য পাটির চেয়ে দামে সস্তা হলেও শয্যা হিসাবে অনেক আরামদায়ক ও শীতল। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও, যামুন, মশালডাঙ্গী ও আটঘরিয়া গ্রামে ২৫ থেকে ৩০ বছর পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরির কাজ। কিন্তু দিনদিন মেলে মুথা বিলুপ্ত হওয়ায় জীবন সংসার ও এ শিল্পকে বাঁচাতে বিকল্পভাবে পানি মুথা নামে এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ (ঘাস) দিয়ে ৫-৭ বছর পূর্ব থেকে শুরু করেছে পানি মুথার পাটির বুনার কাজ। এই কাজের মাধ্যমে অনেকে খুঁজে পেয়েছে তাদের জীবন জীবিকা চলার ঠিকানা। পাটি বিক্রির উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলছে এসব পরিবারের সন্তানদের লেখা পড়াসহ সংসারের ভরণ পোষনের খরচ।

এলাকাবাসী জানান, পানি মুথা ঘাস জাতীয় এক শ্রেণীর জলজ উদ্ভিদ খাল, বিল ও নুনার জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয়। আর এই মুথা প্রতিবছর ভাদ্র আশ্বিন মাস থেকে পানি মুথাকে পাটি তৈরি করার জন্য সংগ্রহ করা হয়। অপরদিকে, পাটি তৈরির কারিগর জানান, মুথা কাটার পর তা বেছে এবং রোদে শুকিয়ে নিলে পাটি বুনানোর উপযোগী হয়। পানি মুথার পাটি তৈরির মূল উপকরণ হল মুথা, রং ও পাটের তৈরি চিকন দড়ি। স্থানীয়ভাবে তৈরি শান মেশিনে পাটের চিকন দড়ির সাহায্যে পাটি বানানো হয়। একটি শান মেশিন দিয়ে পাটি তৈরি করতে দুজন শ্রমিক বা কারিগরের প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই পাটি তৈরি করে বাজার জাত করা হয়। যামুন গ্রামের শ্রী নন্দন চন্দ্র জানান, আগে নিজে আবাদ করে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরি করতাম কিন্তু দিনদিন সার বিষসহ মুথা আবাদের সব কিছু দাম বেশি হওয়ার ফলে মেলে মুথা আবাদে অনেক কৃষক’ই আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে প্রায় বিলিনের পথে এ শিল্পের প্রকৃত উপকরণ। তাই জীবন সংসার বাঁচাতে আমরা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পানি মুথা কেটে নিয়ে নিজেই পাটি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে থাকি। একটি বড় মাপের মাদুর তৈরিতে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া মাঝারি ও ছোট আকারের পাটিতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। স্থানীয়ভাবে একটি ভাল মানের বড় পাটি বাজারে বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, মাঝারী পাটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ছোট আকারের পাটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এ উপজেলায় পানি মুথার পাটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় সরবরাহ করা হয়। পাটির শিল্পটি কুটির শিল্প ভূক্ত একটি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল- এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের জন্য কোন সরকারী ঋণের ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের নিজের পুঁজির উদ্যোগে পাটি তৈরি করে যা আয় হয় তাতে তাদের কোন রকম বেঁচে থাকার পথ চলে। এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারদের বেশিরভাগই ছেলে মেয়ে অশিক্ষিত ও পুষ্টিহীনতায় ভূগে। এ শিল্প ও পরিবারদের বাঁচাতে হলে সরকারকে সুদ মুক্ত বা স্বল্প সুদে ঋণ চালু করতে হবে। তা না হলে এই অসহায় পরিবারগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা এবং এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব