০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

কটিয়াদীতে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোল ও বাঁশির হাট

কটিয়াদীতে এবারও বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকঢোলের হাট। এ হাট বসেছে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে। প্রতি বছরের মতো এবারও ২ দিনব্যাপী ৫শ বছরের এ ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট শুরু হয়েছে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজার সব আয়োজন প্রায় শেষ। এখন শুধু ঢোলের বাজনা আর সানাইয়ের সুরের অপেক্ষা।

এরই মধ্যে ঢাকঢোল,সানাই,বাঁশি নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেছে দল বেঁধে। দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যবাহী হাট সম্পর্কে দেশের প্রায় সর্বত্রই সুনাম রয়েছে। পূজার আয়োজকরা ভাল মানের বাদক নিতে ছুটে আসেন এই হাটে। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামন্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি শুরু হওয়া এহাট সপ্তমী পূজা পর্যন্ত চলবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ,সিলেট,ঢাকা,বি-বাড়িয়া,নরসিংদী,গাজীপুর,নারায়নগঞ্জ,কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চল বিপুল সংখ্যক পূজা আয়োজক এই হাট থেকে বাদ্যযন্ত্রীদের পূজার দু-একদিন আগে বায়নায় নিয়ে যান।

জনশ্রুতি রয়েছে ষোড়শ শতাব্দির মাঝামাঝি স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দূর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিঃ মিঃ উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজ প্রাসাদ। পূজা উপলক্ষে রাজপ্রাসাদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয় ঢাকঢোলে,বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। সে সময় নৌপথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী- মঠখোলা সড়কের পাশে পুরাতন নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুইদিন আগে আসতেন। পরে পার্শ্ববতী মসুয়া গ্রামের বিশ্বনন্দিত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহাধুমধামে পূজা শুরু হয়।সেই সঙ্গে পূজায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা চলে।দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারন নিয়ে দ্ব›দ্ধ শুরু হয়। অবশেষে স্থান পরিবর্তন করে আড়িঁয়াল খা নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারের প্রেসক্লাবের বাছে ঢাকের হাট বসে। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই বলে জানান আয়োজকরা।

নরসিংদীর ঢাকি সত্যহিৎ পাল (৩৫) বলেন,অনেক আশায় থাকি দুর্গাপূজার এই ক’টা দিনের জন্য। এককালীন কিছু বেশি উপার্জন হয় এই দুর্গাৎসবের সময়। প্রতিবছর এই হাটে এসে বিভিন্ন মন্ডপে গিয়ে ঢোল বাজিয়ে আসছি। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে আসা সনকুমারসহ কয়েকজন ঢাকিরা জানান, আমার বাপ-দাদারা এই হাটে আসতেন। আমিও এই ঢাকের হাটে ২০ বছর ধরে আসি। প্রত্যেকবারই বায়না হয়ে যায় । গত দুই বছর করোনার জেরে তাদের ভালো বায়না জুটেনি। এবার পূজার আয়োজন বেশি। এ কারণে ভালো বায়না প্রত্যাশা করছেন তারা। কটিয়াদী উপজেলা ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বেণী মাধব ঘোষ বলেন, এ হাটের ইতিহাস ৫০০ বছরের পুরনো। এখানে আসা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। কটিয়াদী পৌর মেয়র শওকত উসমান বলেন,ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাটটি এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ঢাকিদের বিশ্রামের জন্য একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ হাটের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন,হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। তাদের নিরাপত্তার জন্য কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এসএম শাহাদত হোসেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদারকি করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাটটি আমাদের এলাকায় সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসবে পরিণত হয়। ঢাকিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

কটিয়াদীতে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোল ও বাঁশির হাট

প্রকাশিত : ১২:৩০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

কটিয়াদীতে এবারও বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকঢোলের হাট। এ হাট বসেছে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে। প্রতি বছরের মতো এবারও ২ দিনব্যাপী ৫শ বছরের এ ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট শুরু হয়েছে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজার সব আয়োজন প্রায় শেষ। এখন শুধু ঢোলের বাজনা আর সানাইয়ের সুরের অপেক্ষা।

এরই মধ্যে ঢাকঢোল,সানাই,বাঁশি নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেছে দল বেঁধে। দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যবাহী হাট সম্পর্কে দেশের প্রায় সর্বত্রই সুনাম রয়েছে। পূজার আয়োজকরা ভাল মানের বাদক নিতে ছুটে আসেন এই হাটে। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামন্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি শুরু হওয়া এহাট সপ্তমী পূজা পর্যন্ত চলবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ,সিলেট,ঢাকা,বি-বাড়িয়া,নরসিংদী,গাজীপুর,নারায়নগঞ্জ,কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চল বিপুল সংখ্যক পূজা আয়োজক এই হাট থেকে বাদ্যযন্ত্রীদের পূজার দু-একদিন আগে বায়নায় নিয়ে যান।

জনশ্রুতি রয়েছে ষোড়শ শতাব্দির মাঝামাঝি স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দূর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিঃ মিঃ উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজ প্রাসাদ। পূজা উপলক্ষে রাজপ্রাসাদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয় ঢাকঢোলে,বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। সে সময় নৌপথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী- মঠখোলা সড়কের পাশে পুরাতন নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুইদিন আগে আসতেন। পরে পার্শ্ববতী মসুয়া গ্রামের বিশ্বনন্দিত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহাধুমধামে পূজা শুরু হয়।সেই সঙ্গে পূজায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা চলে।দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারন নিয়ে দ্ব›দ্ধ শুরু হয়। অবশেষে স্থান পরিবর্তন করে আড়িঁয়াল খা নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারের প্রেসক্লাবের বাছে ঢাকের হাট বসে। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই বলে জানান আয়োজকরা।

নরসিংদীর ঢাকি সত্যহিৎ পাল (৩৫) বলেন,অনেক আশায় থাকি দুর্গাপূজার এই ক’টা দিনের জন্য। এককালীন কিছু বেশি উপার্জন হয় এই দুর্গাৎসবের সময়। প্রতিবছর এই হাটে এসে বিভিন্ন মন্ডপে গিয়ে ঢোল বাজিয়ে আসছি। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে আসা সনকুমারসহ কয়েকজন ঢাকিরা জানান, আমার বাপ-দাদারা এই হাটে আসতেন। আমিও এই ঢাকের হাটে ২০ বছর ধরে আসি। প্রত্যেকবারই বায়না হয়ে যায় । গত দুই বছর করোনার জেরে তাদের ভালো বায়না জুটেনি। এবার পূজার আয়োজন বেশি। এ কারণে ভালো বায়না প্রত্যাশা করছেন তারা। কটিয়াদী উপজেলা ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বেণী মাধব ঘোষ বলেন, এ হাটের ইতিহাস ৫০০ বছরের পুরনো। এখানে আসা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। কটিয়াদী পৌর মেয়র শওকত উসমান বলেন,ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাটটি এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ঢাকিদের বিশ্রামের জন্য একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ হাটের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন,হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। তাদের নিরাপত্তার জন্য কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এসএম শাহাদত হোসেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদারকি করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাটটি আমাদের এলাকায় সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসবে পরিণত হয়। ঢাকিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব