র্যাব ম্যানডেটের আলোকে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র্যাব জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখ কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ০৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ২৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। উক্ত ঘটনা গণমাধ্যম সমূহে বহুলভাবে আলোচিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ০৪ জন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র্যাব। পরবর্তীতে গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ০৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখ মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ০৩ জন ও নিরুদ্দেশ ০৪ তরুণসহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব । গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে শাহ মোঃ হাবিবুল্লাহহাবিব (৩২)নেয়ামত উল্লাহ (৪৩)মোঃ হোসাইন (২২)রাকিব হাসনাত নিলয় (২৮)মোঃ সাইফুল ইসলাম রণি জায়দ চৌধুরী (১৯)নোয়াখালী’দেরকে গ্রেফতার করে র্যাব ।উদ্ধার করা হয় ০৫টি উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রায় তিনশত লিফলেট এবং ০৫টি ব্যাগ।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রাথমিকভাবে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত।
উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেফতারকৃত হোসাইন ০১ বছর পূর্বে, গ্রেফতারকৃত সাইফুল দেড় মাস পূর্বে এবং গ্রেফতারকৃত রাকিব ০২ মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়। এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।
তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক।এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকুরীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করত। প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের নিকট হতে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত।
নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়।
হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ০১ বছর যাবত সে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। সে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এর মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে প্রায় ০২ মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় বলে জানায়। সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব


























