০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

থেমে যায়নি বিনামূল্যের জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা

করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ যখন অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছিলো, তখন সর্বস্তরের মানুষের কাছে অক্সিজেন সেবা পৌছে দিতে কাজ শুরু করে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা। এখন কোভিডের প্রকোপ শেষ হয়েছে, স্বাভাবিক হয়েছে জীবনযাত্রা। কিন্তু চলমান রয়েছে ছাত্রলীগের সেই অক্সিজেন সেবা। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত রোগী নয়, অক্সিজেন প্রয়োজন এমন যেকোন রোগীর জন্যই অক্সিজেন সরবরাহ করেন ছাত্রলীগের এ নেতা-কর্মীরা। গত আড়াই বছরে এ সেবা পেয়েছে ১১ হাজার ৬৭ জন রোগী। উদ্যোক্তারা এখন পরিচিতি পেয়েছেন ‘অক্সিজেন ফেরিওয়ালা’ হিসেবেও।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে ১২টা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন এ সেবা। বর্তমানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১০ টিতে। সারাদেশে ছাত্রলীগের ১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোরে এবং জেলা পর্যায়ে ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুরে এ সেবা প্রদান করা হয়। যেসব জেলা শহরে সেবা নেই সেসব শহরে কুরিয়ার যোগে বা কোন এম্বুলেন্স ওই জেলা গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেয় উদ্যোক্তারা। এছাড়াও যে জেলায় সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায় সেসব জেলা অক্সিজেন সেবা চালু করে এ দলটি।

তিন ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।

কেন শুরু এই উদ্যোগ : উদ্যোগের বিষয়ে সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়। জুন, জুলাইয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, এক শ্রেণির মানুষ অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ মিনিটের অক্সিজেন সেবার দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে তখনই মূলত আমরা এই সেবা কার্যক্রম শুরু করার চিন্তা করি। এই সেবা কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন বলে জানান সাদ।
শুরুর ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ছয়টি নিজেদের টাকা দিয়ে কেনেন তিন ছাত্রলীগ নেতা। বাকি ছয়টি এক ‘বড় ভাই’ উপহার দেন। শুরুর দিকে প্রত্যেকটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরে এগুলোর দাম কমে।
সাদ বলেন, ‘সংকট বাড়লে রিফিল সেন্টারগুলোও সংকট তৈরি করে। ফলে প্রতিটি সিলিন্ডার রিফিল করতে ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্তও আমাদের খরচ হয়েছে।’

যেভাবে জোগাড় হয় অর্থ : এই টাকাটা কীভাবে যোগাড় হয় জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সবুর খান কলিন্স বলেন, আমরা কারও কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেয়া নিরুৎসাহিত করি। তবে কেউ রিফিল কস্ট (খরচ) দিতে চাইলে আমরা তাদের রিফিল সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেই। তারা সেখানেই মূল্যটা পরিশোধ করেন। মাঝে মাঝে রোগীরা সিলিন্ডারগুলো ফেরত পাঠানোর সময় রিফিল করে দেয়। এছাড়া আমাদের এ কাজে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এগিয়ে আসে। এসব আমরা প্রতিমাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক লাইভে হিসাব দেই। তারপরও কোনো সময় কোথাও আটকে গেলে ছাত্রলীগ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সাহায্য করা হয়।
উদ্যোক্ত রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, শুরুর দিকে আমাদের জন্য কাজটি সহজ ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখন মানুষের মাঝে বিরাজ করছিল করোনার মারাত্মক ভীতি। কোনো বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেলে আশপাশের মানুষের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। এমনও হয়েছে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ছেলে সামনে আসেনি। তার বাবাকে আমরাই অক্সিজেন সেট করে দিয়ে এসেছি।

বেশি ফোন রাতে, তাই ঘুম শুরু সকালে : অক্সিজেন সরবরাহ শুরুর পর থেকে ঘুমের রুটিন পাল্টে গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের। সাদ বলেন, ‘রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে যখন অক্সিজেনের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখনই মূলত আমাদের কাছে বেশি ফোন আসে। আর সেজন্য আমরা অনেকে সকাল হলে তারপর ঘুমাতে যাই, আর বাকিরা তখন সজাগ থাকে। এভাবে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের এই সেবা চলছে।’ গভীর রাতে অক্সিজেন সেবা পেয়ে ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকার তানভীর রহমান। তিনি লেখেন, গত রাতে কিছুক্ষণের জন্য হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি। হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন নেয়াটা জরুরি হয়ে পরে। ফোন দেই জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের সাদ বিন কাদের ভাইকে। কিন্তু কোনো সিলিন্ডার ফাঁকা ছিল না, অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আমার বাসায় সিলিন্ডারটি পৌঁছে দেয়া হয়। অক্সিজেন নেয়ার পর আমি এখন স্বাভাবিক।

সেবার নামে জয় বাংলা কেন : অক্সিজেন সেবার এই নাম রাখার কারণ জানতে চাইলে সাদ বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। ‘জয় বাংলা’ আমাদের শক্তি। ‘জয় বাংলা’ মানে মুক্তি। এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য আমরা ‘জয় বাংলা’ নামটা ব্যবহার করেছি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

থেমে যায়নি বিনামূল্যের জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা

প্রকাশিত : ০৯:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২

করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ যখন অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছিলো, তখন সর্বস্তরের মানুষের কাছে অক্সিজেন সেবা পৌছে দিতে কাজ শুরু করে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা। এখন কোভিডের প্রকোপ শেষ হয়েছে, স্বাভাবিক হয়েছে জীবনযাত্রা। কিন্তু চলমান রয়েছে ছাত্রলীগের সেই অক্সিজেন সেবা। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত রোগী নয়, অক্সিজেন প্রয়োজন এমন যেকোন রোগীর জন্যই অক্সিজেন সরবরাহ করেন ছাত্রলীগের এ নেতা-কর্মীরা। গত আড়াই বছরে এ সেবা পেয়েছে ১১ হাজার ৬৭ জন রোগী। উদ্যোক্তারা এখন পরিচিতি পেয়েছেন ‘অক্সিজেন ফেরিওয়ালা’ হিসেবেও।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে ১২টা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন এ সেবা। বর্তমানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১০ টিতে। সারাদেশে ছাত্রলীগের ১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোরে এবং জেলা পর্যায়ে ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুরে এ সেবা প্রদান করা হয়। যেসব জেলা শহরে সেবা নেই সেসব শহরে কুরিয়ার যোগে বা কোন এম্বুলেন্স ওই জেলা গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেয় উদ্যোক্তারা। এছাড়াও যে জেলায় সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায় সেসব জেলা অক্সিজেন সেবা চালু করে এ দলটি।

তিন ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।

কেন শুরু এই উদ্যোগ : উদ্যোগের বিষয়ে সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়। জুন, জুলাইয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, এক শ্রেণির মানুষ অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ মিনিটের অক্সিজেন সেবার দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে তখনই মূলত আমরা এই সেবা কার্যক্রম শুরু করার চিন্তা করি। এই সেবা কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন বলে জানান সাদ।
শুরুর ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ছয়টি নিজেদের টাকা দিয়ে কেনেন তিন ছাত্রলীগ নেতা। বাকি ছয়টি এক ‘বড় ভাই’ উপহার দেন। শুরুর দিকে প্রত্যেকটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরে এগুলোর দাম কমে।
সাদ বলেন, ‘সংকট বাড়লে রিফিল সেন্টারগুলোও সংকট তৈরি করে। ফলে প্রতিটি সিলিন্ডার রিফিল করতে ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্তও আমাদের খরচ হয়েছে।’

যেভাবে জোগাড় হয় অর্থ : এই টাকাটা কীভাবে যোগাড় হয় জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সবুর খান কলিন্স বলেন, আমরা কারও কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেয়া নিরুৎসাহিত করি। তবে কেউ রিফিল কস্ট (খরচ) দিতে চাইলে আমরা তাদের রিফিল সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেই। তারা সেখানেই মূল্যটা পরিশোধ করেন। মাঝে মাঝে রোগীরা সিলিন্ডারগুলো ফেরত পাঠানোর সময় রিফিল করে দেয়। এছাড়া আমাদের এ কাজে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এগিয়ে আসে। এসব আমরা প্রতিমাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক লাইভে হিসাব দেই। তারপরও কোনো সময় কোথাও আটকে গেলে ছাত্রলীগ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সাহায্য করা হয়।
উদ্যোক্ত রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, শুরুর দিকে আমাদের জন্য কাজটি সহজ ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখন মানুষের মাঝে বিরাজ করছিল করোনার মারাত্মক ভীতি। কোনো বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেলে আশপাশের মানুষের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। এমনও হয়েছে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ছেলে সামনে আসেনি। তার বাবাকে আমরাই অক্সিজেন সেট করে দিয়ে এসেছি।

বেশি ফোন রাতে, তাই ঘুম শুরু সকালে : অক্সিজেন সরবরাহ শুরুর পর থেকে ঘুমের রুটিন পাল্টে গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের। সাদ বলেন, ‘রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে যখন অক্সিজেনের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখনই মূলত আমাদের কাছে বেশি ফোন আসে। আর সেজন্য আমরা অনেকে সকাল হলে তারপর ঘুমাতে যাই, আর বাকিরা তখন সজাগ থাকে। এভাবে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের এই সেবা চলছে।’ গভীর রাতে অক্সিজেন সেবা পেয়ে ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকার তানভীর রহমান। তিনি লেখেন, গত রাতে কিছুক্ষণের জন্য হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি। হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন নেয়াটা জরুরি হয়ে পরে। ফোন দেই জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের সাদ বিন কাদের ভাইকে। কিন্তু কোনো সিলিন্ডার ফাঁকা ছিল না, অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আমার বাসায় সিলিন্ডারটি পৌঁছে দেয়া হয়। অক্সিজেন নেয়ার পর আমি এখন স্বাভাবিক।

সেবার নামে জয় বাংলা কেন : অক্সিজেন সেবার এই নাম রাখার কারণ জানতে চাইলে সাদ বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। ‘জয় বাংলা’ আমাদের শক্তি। ‘জয় বাংলা’ মানে মুক্তি। এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য আমরা ‘জয় বাংলা’ নামটা ব্যবহার করেছি।