০২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

টাঙ্গাইলে দুই দিনেও সূর্য উঠেনি, তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

টাঙ্গাইলে গত দুই দিনে আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। গত কয়েক দিন যাবত উত্তরের বাতাস বইছে। এতে করে প্রতিদিনই তাপমাত্রা নিচের দিকে যাচ্ছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া সর্বনিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়াও এদিকে কুয়াশার কারণে সরিষা ও বোরো মৌসুমের বীজতলার ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন যাবত টাঙ্গাইলে উত্তরের বাতাস বইছে। আরও ৪/৫ দিন এই বাতাস থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বুধবার টাঙ্গাইলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিন টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুর টাকুর পাড়া, কাগমারা, এনায়েতপুর, বাঘিল ইউনিয়নের দুরিয়াবাড়ী, ধরেরবাড়ী, টাবলাপাড়া, যুগনী, দাইন্যা ইউনিয়নের বাউসা, বাইমাইল ও পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের খাড়জানাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই উত্তরের তীব্র ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতের কারনে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ গরম পোশাক পড়ে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। কাগমারা ও দুরিয়া বাড়ি এলাকায় সরিষা ও বোরোর বীজতলা ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয় কৃষক।

শহরের জেলা সদর বস্তি এলাকার বাসিন্দা কাশেম মিয়া জানান, শীতের কারনে তিনি সকালে রিকশা নিয়ে বের হননি। তার জমানো টাকা দিয়ে বাজার করে তাকে খেতে হচ্ছে। অন্য বছর এই মৌসুমে শীত বস্ত্র পেলেও এ বছর তাদের বস্তিতে কেউ কোন সহযোগিতা করেননি। অপরজন রাশেদা বেগম জানান, তার এলাকায় অনেকেই শীত সহ্য করতে না পেরে দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। শীতের কারণে তার বস্তির অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এনায়েতপুর এলাকার আনিসুর রহমান জানান, তিনি ৩০ কেজি বোরো ধানের বীজতলা করেছেন। কিন্তু শীতের কারনে তেমন ভাল হচ্ছে না। এই এলাকার কৃষি অফিসার পরিবর্তন হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর যাবত কৃষি অফিসারের কোন পরামর্শ তারা পান না। এতে তার এলাকার কৃষকরা পরামর্শের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুরিয়াবাড়ী এলাকার মো. শাহিন মিয়া বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। তার সরিষা গাছে ফুল ধরেছে। কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারনে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, বর্তমানে টাঙ্গাইলে যে তাপমাত্রা আছে, এতে কোন ফসলের ক্ষতি হবে না। এতে সরিষা ও গমের উপকার হবে। কয়েক দিন রোদ উঠলে সবজির জন্যও উপকার হবে। তবে টানা ১০ দিন এই অবস্থা থাকলে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ পড়ে। হলুদ রঙের হলেও তেমন ক্ষতি হয় না। স্বাভাবিক হয়ে যায়।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ জামাল উদ্দিন বলেন, টাঙ্গাইলে যে বাতাস বইছে এটাকে শৈত প্রবাহ বলা যায় না। ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটাকে শৈত প্রবাহ বলে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো না দেখার কারনে ম্যাক্সিমামটা বাড়ছে না। ম্যাক্সিমাম তাপমাত্রা না বাড়ার কারনে মিনিয়ামটা কাছাকাছি। অন্যান্য দিনের তুলনায় শীতের প্রকোপটা একটু বেশি। শীতের প্রবাহ আরও ৪/৫ দিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, ইতিমধ্যে তিনি পাঁচ শতাধিক শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন। এছাড়াও আরও দুই হাজার কম্বল দুই একদিনের মধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে। এই তীব্র শীতে জনপ্রতিনিধিদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল হতে ৬০ হাজার কম্বল ১২ উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার কম্বল ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে মধ্যে সেগুলো জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ও জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

ডাকসু নির্বাচনে দুপুরের মধ্যে প্যানেল ঘোষণা করবে ছাত্রদল

টাঙ্গাইলে দুই দিনেও সূর্য উঠেনি, তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত : ০৩:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

টাঙ্গাইলে গত দুই দিনে আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। গত কয়েক দিন যাবত উত্তরের বাতাস বইছে। এতে করে প্রতিদিনই তাপমাত্রা নিচের দিকে যাচ্ছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া সর্বনিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়াও এদিকে কুয়াশার কারণে সরিষা ও বোরো মৌসুমের বীজতলার ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন যাবত টাঙ্গাইলে উত্তরের বাতাস বইছে। আরও ৪/৫ দিন এই বাতাস থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বুধবার টাঙ্গাইলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিন টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুর টাকুর পাড়া, কাগমারা, এনায়েতপুর, বাঘিল ইউনিয়নের দুরিয়াবাড়ী, ধরেরবাড়ী, টাবলাপাড়া, যুগনী, দাইন্যা ইউনিয়নের বাউসা, বাইমাইল ও পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের খাড়জানাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই উত্তরের তীব্র ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতের কারনে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ গরম পোশাক পড়ে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। কাগমারা ও দুরিয়া বাড়ি এলাকায় সরিষা ও বোরোর বীজতলা ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয় কৃষক।

শহরের জেলা সদর বস্তি এলাকার বাসিন্দা কাশেম মিয়া জানান, শীতের কারনে তিনি সকালে রিকশা নিয়ে বের হননি। তার জমানো টাকা দিয়ে বাজার করে তাকে খেতে হচ্ছে। অন্য বছর এই মৌসুমে শীত বস্ত্র পেলেও এ বছর তাদের বস্তিতে কেউ কোন সহযোগিতা করেননি। অপরজন রাশেদা বেগম জানান, তার এলাকায় অনেকেই শীত সহ্য করতে না পেরে দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। শীতের কারণে তার বস্তির অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এনায়েতপুর এলাকার আনিসুর রহমান জানান, তিনি ৩০ কেজি বোরো ধানের বীজতলা করেছেন। কিন্তু শীতের কারনে তেমন ভাল হচ্ছে না। এই এলাকার কৃষি অফিসার পরিবর্তন হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর যাবত কৃষি অফিসারের কোন পরামর্শ তারা পান না। এতে তার এলাকার কৃষকরা পরামর্শের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুরিয়াবাড়ী এলাকার মো. শাহিন মিয়া বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। তার সরিষা গাছে ফুল ধরেছে। কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারনে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, বর্তমানে টাঙ্গাইলে যে তাপমাত্রা আছে, এতে কোন ফসলের ক্ষতি হবে না। এতে সরিষা ও গমের উপকার হবে। কয়েক দিন রোদ উঠলে সবজির জন্যও উপকার হবে। তবে টানা ১০ দিন এই অবস্থা থাকলে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ পড়ে। হলুদ রঙের হলেও তেমন ক্ষতি হয় না। স্বাভাবিক হয়ে যায়।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ জামাল উদ্দিন বলেন, টাঙ্গাইলে যে বাতাস বইছে এটাকে শৈত প্রবাহ বলা যায় না। ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটাকে শৈত প্রবাহ বলে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো না দেখার কারনে ম্যাক্সিমামটা বাড়ছে না। ম্যাক্সিমাম তাপমাত্রা না বাড়ার কারনে মিনিয়ামটা কাছাকাছি। অন্যান্য দিনের তুলনায় শীতের প্রকোপটা একটু বেশি। শীতের প্রবাহ আরও ৪/৫ দিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, ইতিমধ্যে তিনি পাঁচ শতাধিক শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন। এছাড়াও আরও দুই হাজার কম্বল দুই একদিনের মধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে। এই তীব্র শীতে জনপ্রতিনিধিদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল হতে ৬০ হাজার কম্বল ১২ উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার কম্বল ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে মধ্যে সেগুলো জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ও জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব