সৈকত নগরীর কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নারকেল গাছে ফলন নেই মরে যাচ্ছে প্রায় গাছ, আবার যে গাছ গুলো রয়েছে তার অধিকাংশই রোগাক্রান্ত,সাদা সাদা পোকামাকড়েই পুরো গাছ সাদা ও হলদেটে হয়ে গেছে। পেকুয়া উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে তিনটা বাগান ও প্রত্যেক বাড়িতে ৬/৭টি এমনকি শতাধিক নারকেল গাছ রয়েছে। তবে তাতে এখন আর নারকেল ধরছেনা। যে বাড়িতে নারকেলেরের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতো সেই বাড়িতে এখন বাজার থেকে নারকেল ক্রয় করে পারিবারিক চাহিদা মেটাচ্ছে।
গ্রামের মানুষের পিঠা তৈরী ও খেতে খুবই পছন্দ। মৌসুম অনুযায়ী পিঠা তৈরি করে ছেলে-মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে থাকে।একেক মৌসুমে একেক পিঠা তৈরী করে।
গ্রীষ্ম কালে জালা পিঠা, আতিক্কা পিঠা ও মধুভাত, এগুলো তৈরি করে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বিল করে। এই পিঠা গুলো তৈরিতে নারকেলের প্রয়োজন, নারকেল ছাড়া এই পিঠা চিন্তা করা যায় না।
শীত কাল মানে অন্য মৌসুম থেকে আলাদা। শীতকাল আসলেই পিঠা তৈরীর ধুম পড়ে যায় বাড়িতে বাড়িতে। খেজুর রস দিয়ে ভাপা পিঠা বা ধোঁয়া পিঠা খাওয়ার স্বাদ অন্য রকম। এই পিঠা তৈরীর অন্যতম উপকরণ হিসাবে নারকেল ব্যবহার হয়।
বর্ষাকালে নানান পিঠা তৈরী হয়।যেমন কাঁঠাল দিয়ে মালি পিঠা,তালের রস দিয়ে তালের পিঠা। এই পিঠা তৈরীতে নারকেলের ভুমিকা অপরিহার্য।
পিঠা তৈরীতে নারকেলের ভুমিকা থেমে নেই।পানি শূন্য রোগীর পথ্য হিসেবে ডাবের ভূমিকা অন্যতম। আর এই নারকেল দিয়ে তৈরি হয় নারকেল তেল, যা মেয়েদের পছন্দের। সেই নারকেল এখন খুঁজে পাওয়া মুস্কিল।আশপাশের ইউনিয়নে গেলেও ডাব-নারকেলের দেখা পাওয়া যায় না। সর্বত্র একই কথা ডাব-নারকেল আর ধরছে না। আবার বাজারে নারকেলের গায়ে হাত দেয়া যায় না। এক জোড়া দাম প্রায় ২শ টাকা। এমন একটি প্রয়োজনীয় ফল গাছ আজ বিলুপ্তির পথে।
উজানটিয়া ইউনিয়নে বাসিন্দা আক্তার আহমেদ বলেনঃ ২ বছর পূর্বে তাদের বাড়িতে ৩৫ টি নারকেল গাছ ছিল বর্তমানে ২৭টি গাছ আছে তা-ও আবার খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে, গাছে কতগুলো সাদা পোকামাকড় এসেছে,নানারকম কীটনাশক দিয়েছি কোনো কাজ হচ্ছে না ।দুই বছর আগে এই গাছ থেকে নারকেল বিক্রি করে অনেক টাকা পেতাম,এখন নিজে খাওয়ার জন্য নারকেল পাচ্ছি না,বাজার থেকে ক্রয় করে পারিবারিক চাহিদা মেটাচ্ছি।
উজানটিয়ার পেকুয়ারচর এলাকার রাসেল জানানঃ তাঁর বাড়িতে ৬০টি নারকেল গাছ আছে। এখন কিছু মরে গেছে আর গুলো নামে মাত্র নারকেল গাছ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে একটা নারকেল পর্যন্ত নেই।
রাজাখালীর বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেনঃ আমার বাড়িতে ৩০টি নারকেল আছে কিন্তু নারকেল নেই একটি গাছেও।প্রত্যেক গাছের পাতা প্রথমে সাদা এরপর কালো হয়ে গেছে। গাছগুলো প্রায় আধা মরা হয়ে যাচ্ছে।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজ উল্লাহ বলেনঃবাড়ীতে ১০টি নারকেল গাছ ছিল, গত একবছরে ৬টি গাছ মারা গেছে আর বাকিগুলো এখন ফল শুন্যে।অনেক কীটনাশক দিয়েছি তবুও কাজ হচ্ছে না।প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে নারকেল এখন বিলুপ্তির পথে।
পেকুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তপন কুমার রায় বলেনঃ নারকেল গাছে সাদা পোকা, ও প্রথমে পাতা সাদা হয় এরপর কালো হয়ে যায় এটা ব্লাইট রোগ, এই রোগ হওয়ার কারণ হলো অপুষ্টি, গাছে নিয়মিত সার না দেওয়া ও পরিচর্যা না করা। একটা নারকেল গাছে কমপক্ষে বছরে দুইবার সার দিতে হবে।সার না দেওয়ার কারণে এই রোগ হচ্ছে। তাই TiLT কীটনাশক হাফ মি.লি ১লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে এবং নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব


























