১১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কুষ্টিয়ায় ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করে স্বপ্ন পূরণ করছে আশিকুল

ড্রাগন ফলে স্বপ্ন দেখছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া-চরপাড়া এলাকার কৃষক আশিকুল ইসলাম। বেসরকারি অ্যাগ্রো কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। নিজে কিছু করার ইচ্ছে ছিল তার। আর তাই বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ শুরু করেছেন তিনি। ধান, গম ও প্রচলিত শষ্যের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফল চাষ করছেন তিনি। এ বছর ড্রাগন, কমলা, মালটা, পেয়ারা, কুলসহ লিচুর চাষ করেছেন। ইচ্ছা ও মনোবল থাকায় নানা প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ড্রাগনে। তাকে দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন আধুনিক ফসলের চাষাবাদ। বিদেশি ফল ড্রাগন বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় তিনি গত বছর এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন। এ বছর আরও এক বিঘাতে নতুন করে চারা রোপণ করেছেন। প্রথম বছরেই ফল ধরেছিল গাছে। এ বছর আরও ভালো ফলনের আশা করছেন এ কৃষক।

আশিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে চিরকালই চাষাবাদ ভালো লাগে। তবে চাকরি করতাম তাই চাষাবাদ করতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখেছি ড্রাগন ফল চাষ বেশ লাভজনক। তবে খরচ একটু বেশি। একবার রোপণ করলে অনেক বছর ধরে এর ফল পাওয়া যায়। প্রথমে ইউটিউবে দেখি পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখেছি, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে আমি ঠিক করি আমিও ড্রাগন চাষ করবো। তাই আমি এই ফলের চাষ শুরু করি। গত বছর এক বিঘা জমিতে আমি পিংক রোজ নামের ড্রাগনের চাষ করি। এ বছর নতুন করে আরও এক বিঘা জমিতে রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। এক বিঘা জমিতে ২২০টি ড্রাগনের খুঁটি দেওয়া আছে। প্রতিটি খুটিতে ৩-৪টি গাছ দেওয়া রয়েছে। ড্রাগনের জন্য বেলে-দোয়াশ মাটি বেশ ভালো। এর সঙ্গে যদি এটেল মাটির মিশ্রন থাকে তাহলে আরও ভালো হয়। ড্রাগনের জন্য চারা বাইরে থেকে কেনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপন করলে ঐ গাছ থেকেই কাটিং করে চারা তৈরি করা যায়। খুঁটি দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বাগানও সুন্দর হয়।

তিনি আরও বলেন, ড্রাগন চাষের খরচ অন্য ফসলের তুলনায় একটু বেশি। এক বিঘায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে আমার। আশা করছি এ বছর ৮০০-৯০০ কেজি ড্রাগন পাবো। সেই সঙ্গে আগামী বছর আরও বেশি ফলন পাবো। এ বছর যে ড্রাগন হবে সেখানে ৭০ শতাংশ খরচ উঠে আসবে আশা করি। পরের বছর দ্বিগুন ফলন দেবে। ড্রাগনকে ভালোমতো যতœ করলে ২০-২৫ বছর ধরে ফল দেয়। যুগ অনুযায়ী কৃষকদের নিত্য নতুন ফসলের আবাদ করতে হবে। যে ফসলগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত না, তবে ভবিষ্যতে প্রচলিত হবে এমন ফসল চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। এটি অধিক লাভজনক একটি চাষ। তবে বিক্রয়ের একটা নিশ্চিয়তা পেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবে এই ড্রাগন চাষে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলাহ-আল-মামুন বলেন, ড্রাগন বিদেশি ফল হওয়া সত্তে¡ও আমাদের এলাকায় চাষ উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এ ফল চাষে বেশ আগ্রহী। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের এ ফল চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কুষ্টিয়াসহ ৬টি জেলায় ড্রাগন ফল চাষ সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের মধ্যে প্রদর্শনী দিয়েছি। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যের ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এবং উচ্চ মূল্যের ফল ও সবজি চাষে কৃষক ও কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

 

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কুষ্টিয়ায় ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করে স্বপ্ন পূরণ করছে আশিকুল

প্রকাশিত : ০৩:২৩:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

ড্রাগন ফলে স্বপ্ন দেখছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া-চরপাড়া এলাকার কৃষক আশিকুল ইসলাম। বেসরকারি অ্যাগ্রো কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। নিজে কিছু করার ইচ্ছে ছিল তার। আর তাই বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ শুরু করেছেন তিনি। ধান, গম ও প্রচলিত শষ্যের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফল চাষ করছেন তিনি। এ বছর ড্রাগন, কমলা, মালটা, পেয়ারা, কুলসহ লিচুর চাষ করেছেন। ইচ্ছা ও মনোবল থাকায় নানা প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ড্রাগনে। তাকে দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন আধুনিক ফসলের চাষাবাদ। বিদেশি ফল ড্রাগন বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় তিনি গত বছর এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন। এ বছর আরও এক বিঘাতে নতুন করে চারা রোপণ করেছেন। প্রথম বছরেই ফল ধরেছিল গাছে। এ বছর আরও ভালো ফলনের আশা করছেন এ কৃষক।

আশিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে চিরকালই চাষাবাদ ভালো লাগে। তবে চাকরি করতাম তাই চাষাবাদ করতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখেছি ড্রাগন ফল চাষ বেশ লাভজনক। তবে খরচ একটু বেশি। একবার রোপণ করলে অনেক বছর ধরে এর ফল পাওয়া যায়। প্রথমে ইউটিউবে দেখি পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখেছি, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে আমি ঠিক করি আমিও ড্রাগন চাষ করবো। তাই আমি এই ফলের চাষ শুরু করি। গত বছর এক বিঘা জমিতে আমি পিংক রোজ নামের ড্রাগনের চাষ করি। এ বছর নতুন করে আরও এক বিঘা জমিতে রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। এক বিঘা জমিতে ২২০টি ড্রাগনের খুঁটি দেওয়া আছে। প্রতিটি খুটিতে ৩-৪টি গাছ দেওয়া রয়েছে। ড্রাগনের জন্য বেলে-দোয়াশ মাটি বেশ ভালো। এর সঙ্গে যদি এটেল মাটির মিশ্রন থাকে তাহলে আরও ভালো হয়। ড্রাগনের জন্য চারা বাইরে থেকে কেনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপন করলে ঐ গাছ থেকেই কাটিং করে চারা তৈরি করা যায়। খুঁটি দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বাগানও সুন্দর হয়।

তিনি আরও বলেন, ড্রাগন চাষের খরচ অন্য ফসলের তুলনায় একটু বেশি। এক বিঘায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে আমার। আশা করছি এ বছর ৮০০-৯০০ কেজি ড্রাগন পাবো। সেই সঙ্গে আগামী বছর আরও বেশি ফলন পাবো। এ বছর যে ড্রাগন হবে সেখানে ৭০ শতাংশ খরচ উঠে আসবে আশা করি। পরের বছর দ্বিগুন ফলন দেবে। ড্রাগনকে ভালোমতো যতœ করলে ২০-২৫ বছর ধরে ফল দেয়। যুগ অনুযায়ী কৃষকদের নিত্য নতুন ফসলের আবাদ করতে হবে। যে ফসলগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত না, তবে ভবিষ্যতে প্রচলিত হবে এমন ফসল চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। এটি অধিক লাভজনক একটি চাষ। তবে বিক্রয়ের একটা নিশ্চিয়তা পেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবে এই ড্রাগন চাষে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলাহ-আল-মামুন বলেন, ড্রাগন বিদেশি ফল হওয়া সত্তে¡ও আমাদের এলাকায় চাষ উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এ ফল চাষে বেশ আগ্রহী। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের এ ফল চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কুষ্টিয়াসহ ৬টি জেলায় ড্রাগন ফল চাষ সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের মধ্যে প্রদর্শনী দিয়েছি। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যের ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এবং উচ্চ মূল্যের ফল ও সবজি চাষে কৃষক ও কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব