বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হচ্ছে বাঁশ শিল্প। আগেকার দিনে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো বাঁশ দিয়ে। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল বেশ ভারী। গ্রামের ঘরে ঘরে একসময় বাঁশ শিল্পের দেখা মিললেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিকের নানান পণ্য।
প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পের ঠিকানা এখন অনেকটাই জাদুঘরে।
এই বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দুলাল হোসেন (৩৬)।
দুলালের বাবা এই বাঁশ শিল্পের সাথেই জড়িত ছিলেন। পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে দুলালও ২৩ বছর আগে তার বাবার হাত ধরে এই শিল্পকে হাতে তুলে নেন। শিখে ফেলেন বাঁশের হরেক রকম পণ্য তৈরির কাজ। বাবার সাথে তিনিও বাঁশের পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেন। বাবা,মা, ৬ বোন ও তিনিসহ মোট ৯ জন সদস্য নিয়ে তার পরিবার ছিলো। বয়সের ভাড়ে বাবা সংসারের বোঝা বহন করতে হিমসিম খাওয়ায় তিনি হাল ধরেন সংসারের।
বাঁশ দিয়ে বাহারি রকমের পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ও গ্রামে গ্রামে বিক্রি করেন। এই উপার্জনেই ৬ বোনের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। পরিবারের সবার চাহিদা মেটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন দুলাল। ২০ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনিও এরপর তাদের ঘর আলোকিত করে আসে এক ছেলে ও মেয়ে।
দুলাল হোসেন হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকার ফটিক আলীর ছেলে।
বাঁশের কারিগর দুলাল হোসেন বলেন, অনেক ছোট থেকে এই শিল্পের সাথে জড়িত। অভাবের সংসার তাই বাবার সাথে আমিও এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। এই বাঁশের পণ্য বিক্রি করেই চলে সংসার। ৩০ প্রকারের পণ্য তৈরি করি এই বাঁশ দিয়ে। যখন মৌসুম থাকে তখন প্রতি সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ হাজার ও অন্য সময় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এবং দৈনিক ৮শত থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি করি। এই উপার্জন দিয়েই আমি সংসার চালাচ্ছি।
এক সময় নিজের কোন জমি জায়গা ছিলো না এখন এই কাজ করে নিয়েছে কয়েক শতক জমি। আগেকার দিনে এই বাঁশের দ্রব্য সামগ্রীর চাহিদা অধিক হারে থাকলেও দিনে দিনে অনেকটাই কমে যাচ্ছে।




















