০৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

বইমেলায় অন্যতম বড় সায়েন্স ফিকশন ‘দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড’

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মোশতাক আহমেদ সায়েন্স ফিকশন রচনায় দিন দিন অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। লেখালেখির শুরু থেকেই তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস এবং সিরিজ। জনপ্রিয় এই লেখকের পঞ্চাশতম সায়েন্স ফিকশন ‌‘দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড’ এবারের বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে। ৩৩৬ পৃষ্ঠার বৃহৎ পরিসরে রচিত এই সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের পর বাংলাদেশে যিনি সায়েন্স ফিকশনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখক মোশতাক আহমেদ। তার প্রথম সায়েন্স ফিকশন রোবটিজম প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে। তারপর থেকে ক্রমাগত প্রতি বছর তিনি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস রচনা করছেন। মোশতাক আহমেদের উল্লেখযোগ্য সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে রয়েছে: নিহির ভালোবাসা, ক্লিটি ভাইরাস, রোবো, দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড, লাল মানব, সবুজ মানব, অনুমানব, ক্রিকি, প্রজেক্ট হাইপার, প্রজেক্ট ইক্টোপাস, নিতিনা, লাল শৈবাল, ইলিন, গামা, ইডিন, গিগো, পাইথিন, দ্বিতীয় পৃথিবী, অমর মানব, প্রজেক্ট হাইপার। রিবিট তার অত্যন্ত জনপ্রিয় বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি সায়েন্স ফিকশন সিরিজ।

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি সম্পর্কে মোশতাক আহমেদ জানান, ‘উপন্যাসটি এত বড় হবে আমি ভাবিনি। প্রাথমিকভাবে আমার পরিকল্পনা ছিল ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার শব্দের মধ্যে উপন্যাসটির সমাপ্তি টানা। কিন্তু গল্পটি যখন জমে উঠতে শুরু করে তখন আমি গল্পটিকে নিজের মতো এগোতে দেই। বইমেলা নিকটবর্তী হওয়ায়, একটা পর্যায়ে প্রচ্ছদ আঁকা শেষ হয় এবং প্রি অর্ডারও শুরু হয়ে যায়। তখনও লেখা শেষ হয়নি। প্রচন্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকি যে, উপন্যাসটিকে আমি পরিপূর্ণতা দেব। তাই স্বাধীন লেখক সত্ত্বাকে অগ্রাধিকার দিয়ে লিখতে থাকি। মনে পড়ে, আমি একদিন সকাল ছয়টায় লেখা শুরু করে পরের দিন ভোর চারটা পর্যন্ত লিখেছি। যেহেতু আমি সরাসরি কম্পিউটারে লিখি, আমার হাতের আঙ্গুল এবং চোখ ব্যথা হয়ে গিয়েছিল তখন। তারপরও এগিয়ে যেতে থাকি। মাত্র দুই মাস দশ দিনে উপন্যাসটি শেষ হয় প্রায় নব্বই হাজার শব্দে।’

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশতাক আহমেদ বলেন, উপন্যাস রচনার সময় বিষয়টা আমার কখনো মাথায় আসেনি। আমার মাথায় শুধু একটা বিষয়ই ছিল, কাহিনী জমজমাট এবং উপভোগ্য হতে হবে। পরে উপন্যাস প্রকাশের সময় আমারই এক শুভাকাঙ্খি ও লেখক রেদওয়ান মাসুদ জানান যে, উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন’।

মোশতাক আহমেদ জানান, বড় সায়েন্স ফিকশন লেখা আমার কাছে মূখ্য নয়, মূখ্য হলো গল্পের গাঁথুনি, কাহিনীর বাঁক, চমক আর উপভোগ্যতা। আমি বিশ্বাস করি দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসে আমি পরিপূর্ণতা দিতে পেরেছি এবং বরাবরের মতো উপন্যাসটি পাঠক সমাদৃত হবে।’

অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘দি নিউ ওয়ার্ল্ড’ তার রচিত সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের উপন্যাস কিনা জানতে চাইলে মোশতাক আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত ‘নক্ষত্রের রাজারবাগ’ আমার রচিত সববৃহৎ উপন্যাস’।

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড এর কাহিনী সংক্ষেপ
‘‘রিডিলিন নামের ভয়ংকর এক অজানা প্রাণী আক্রমণ করেছে পৃথিবীকে। পিঁপড়ার মতো আকারের এই প্রাণীগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে পৃথিবীর সকল ধাতব জিনিসকে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, গাড়ি, বাড়ি, বিমান, ইলেকিট্রক খুঁটি, সমরাস্ত্রসহ যত ধাতব জিনিস আছে সবকিছুকে অকার্যকর করে দেয়াই যেন রিডিলিনের কাজ। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা, ব্যহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, ভেঙ্গে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে এক মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে পৃথিবীতে। আর এই মহাবিপর্যয়ের নাম দেয়া হয়েছে ’রিডিলিন মহাবিপর্যয়’।

বাংলাদেশি ছাত্র নাফিন পড়তে গিয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেখানে পরিচয় হয় আর এক বাংলাদেশি ছাত্রী নাইশার সাথে। তাদের ভালোবাসা অগ্রযাত্রার পথে সবকিছু তছনছ করে দিতে থাকে রিডিলিন মহাবিপর্যয়। চরম খাদ্যাভাব আর জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার কারণে হতবিহ্বল সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশী কাউকে অবস্থান করতে দেবে না ইংল্যান্ডে। তাই দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় নাফিন আর নাইশা। কিন্তু এরই মধ্যে সকল ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে জাহাজ কিংবা বাস চলাচল। তাই ঘোড়ায় চড়ে আর পায়ে হেঁটে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় নাফিন। তাকে ফিরে আসতেই হবে। কারণ সে তার মায়ের একমাত্র সন্তান এবং তার মা তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। নাফিন আর নাইশার সঙ্গী হয় আফগানিস্তানের আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী আলিয়া, পাকিস্তানের খানভাই আর তুরস্কের তাবিব, ইশরা আর সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে তাবিশরা। যাত্রা শুরুর পরই তারা বুঝতে পারে গন্তব্যে পৌঁছান কতটা দুঃসাধ্য? কারণ তারা যে আর আধুনিক পৃথিবীতে নেই, অবস্থান করছে আদিম পৃথিবীতে যেখানে রিডিলিনের ভয়ে ধাতুর তৈরি সামান্য একটা ছুরিও সাথে রাখা যায় না!

শেষ পর্যন্ত কি নাফিন আর নাইশা ফিরতে পেরেছিল বাংলাদেশে? আর কী পরিসমাপ্তি ঘটেছিল রিডিলিন মহাবিপর্যয়ের? নাকি রিডিলিনই দখল করে নিয়েছিল সম্পূর্ণ পৃথিবীকে? জানতে হলে সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসটি পড়তে হবে।

অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্তাধিকারী আফজাল হোসেন জানান, দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটির কাটতি খুব ভালো। কারণ মোশতাক আহমেদ এর পূর্বের সায়েন্স ফিকশন দি নিউ ওয়ার্ল্ড ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাছাড়া মোশতাক আহমেদ এর সায়েন্স ফিকশনের প্রতি পাঠকদের আগ্রহও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বলতে পারি দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড পাঠককে সন্তুষ্ট করা বা তৃপ্তি দেয়ার মতো একটি সায়েন্স ফিকশন।

উল্লেখ্য, মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশ বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা একশত বিশটি। এবছর দি নিউ ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি হারানো জোছনার সুর নামে একটি প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস, মৃত্যুবাড়ি নামে একটি ভৌতিক এবং কিশোর গোয়েন্দা শিশিলিন সিরিজের রূপার সিন্দুক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, মোশতাক আহমেদ ২০১৮ সালে বাংলা একেডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার এবং চ্যানেল আই সিটি আনন্দ সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন। অন্যদিকে লেখালেখির বিগত দুই দশকে বহুবার বইমেলা এবং অনলাইনে বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহে তার বই বেস্ট সেলার হয়েছে। এবারের বইমেলায়ও অনিন্দ্য প্রকাশ এর স্টলে (প্যাভিলিয়ন ২০) এবং ওয়েবসাইটে আকর্ষণীয় ছাড়ে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া রকমারি ডটকমসহ বই বিক্রির অন্যান্য ওয়েবসাইটে উপন্যাসগুলো পাওয়া যাচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS

জনপ্রিয়

বইমেলায় অন্যতম বড় সায়েন্স ফিকশন ‘দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড’

প্রকাশিত : ০৩:৪৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মোশতাক আহমেদ সায়েন্স ফিকশন রচনায় দিন দিন অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। লেখালেখির শুরু থেকেই তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস এবং সিরিজ। জনপ্রিয় এই লেখকের পঞ্চাশতম সায়েন্স ফিকশন ‌‘দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড’ এবারের বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে। ৩৩৬ পৃষ্ঠার বৃহৎ পরিসরে রচিত এই সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের পর বাংলাদেশে যিনি সায়েন্স ফিকশনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখক মোশতাক আহমেদ। তার প্রথম সায়েন্স ফিকশন রোবটিজম প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে। তারপর থেকে ক্রমাগত প্রতি বছর তিনি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস রচনা করছেন। মোশতাক আহমেদের উল্লেখযোগ্য সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে রয়েছে: নিহির ভালোবাসা, ক্লিটি ভাইরাস, রোবো, দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড, লাল মানব, সবুজ মানব, অনুমানব, ক্রিকি, প্রজেক্ট হাইপার, প্রজেক্ট ইক্টোপাস, নিতিনা, লাল শৈবাল, ইলিন, গামা, ইডিন, গিগো, পাইথিন, দ্বিতীয় পৃথিবী, অমর মানব, প্রজেক্ট হাইপার। রিবিট তার অত্যন্ত জনপ্রিয় বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি সায়েন্স ফিকশন সিরিজ।

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি সম্পর্কে মোশতাক আহমেদ জানান, ‘উপন্যাসটি এত বড় হবে আমি ভাবিনি। প্রাথমিকভাবে আমার পরিকল্পনা ছিল ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার শব্দের মধ্যে উপন্যাসটির সমাপ্তি টানা। কিন্তু গল্পটি যখন জমে উঠতে শুরু করে তখন আমি গল্পটিকে নিজের মতো এগোতে দেই। বইমেলা নিকটবর্তী হওয়ায়, একটা পর্যায়ে প্রচ্ছদ আঁকা শেষ হয় এবং প্রি অর্ডারও শুরু হয়ে যায়। তখনও লেখা শেষ হয়নি। প্রচন্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকি যে, উপন্যাসটিকে আমি পরিপূর্ণতা দেব। তাই স্বাধীন লেখক সত্ত্বাকে অগ্রাধিকার দিয়ে লিখতে থাকি। মনে পড়ে, আমি একদিন সকাল ছয়টায় লেখা শুরু করে পরের দিন ভোর চারটা পর্যন্ত লিখেছি। যেহেতু আমি সরাসরি কম্পিউটারে লিখি, আমার হাতের আঙ্গুল এবং চোখ ব্যথা হয়ে গিয়েছিল তখন। তারপরও এগিয়ে যেতে থাকি। মাত্র দুই মাস দশ দিনে উপন্যাসটি শেষ হয় প্রায় নব্বই হাজার শব্দে।’

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশতাক আহমেদ বলেন, উপন্যাস রচনার সময় বিষয়টা আমার কখনো মাথায় আসেনি। আমার মাথায় শুধু একটা বিষয়ই ছিল, কাহিনী জমজমাট এবং উপভোগ্য হতে হবে। পরে উপন্যাস প্রকাশের সময় আমারই এক শুভাকাঙ্খি ও লেখক রেদওয়ান মাসুদ জানান যে, উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বড় মৌলিক সায়েন্স ফিকশন’।

মোশতাক আহমেদ জানান, বড় সায়েন্স ফিকশন লেখা আমার কাছে মূখ্য নয়, মূখ্য হলো গল্পের গাঁথুনি, কাহিনীর বাঁক, চমক আর উপভোগ্যতা। আমি বিশ্বাস করি দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসে আমি পরিপূর্ণতা দিতে পেরেছি এবং বরাবরের মতো উপন্যাসটি পাঠক সমাদৃত হবে।’

অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘দি নিউ ওয়ার্ল্ড’ তার রচিত সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের উপন্যাস কিনা জানতে চাইলে মোশতাক আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত ‘নক্ষত্রের রাজারবাগ’ আমার রচিত সববৃহৎ উপন্যাস’।

দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড এর কাহিনী সংক্ষেপ
‘‘রিডিলিন নামের ভয়ংকর এক অজানা প্রাণী আক্রমণ করেছে পৃথিবীকে। পিঁপড়ার মতো আকারের এই প্রাণীগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে পৃথিবীর সকল ধাতব জিনিসকে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, গাড়ি, বাড়ি, বিমান, ইলেকিট্রক খুঁটি, সমরাস্ত্রসহ যত ধাতব জিনিস আছে সবকিছুকে অকার্যকর করে দেয়াই যেন রিডিলিনের কাজ। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা, ব্যহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, ভেঙ্গে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে এক মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে পৃথিবীতে। আর এই মহাবিপর্যয়ের নাম দেয়া হয়েছে ’রিডিলিন মহাবিপর্যয়’।

বাংলাদেশি ছাত্র নাফিন পড়তে গিয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেখানে পরিচয় হয় আর এক বাংলাদেশি ছাত্রী নাইশার সাথে। তাদের ভালোবাসা অগ্রযাত্রার পথে সবকিছু তছনছ করে দিতে থাকে রিডিলিন মহাবিপর্যয়। চরম খাদ্যাভাব আর জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার কারণে হতবিহ্বল সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশী কাউকে অবস্থান করতে দেবে না ইংল্যান্ডে। তাই দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় নাফিন আর নাইশা। কিন্তু এরই মধ্যে সকল ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে জাহাজ কিংবা বাস চলাচল। তাই ঘোড়ায় চড়ে আর পায়ে হেঁটে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় নাফিন। তাকে ফিরে আসতেই হবে। কারণ সে তার মায়ের একমাত্র সন্তান এবং তার মা তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। নাফিন আর নাইশার সঙ্গী হয় আফগানিস্তানের আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী আলিয়া, পাকিস্তানের খানভাই আর তুরস্কের তাবিব, ইশরা আর সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে তাবিশরা। যাত্রা শুরুর পরই তারা বুঝতে পারে গন্তব্যে পৌঁছান কতটা দুঃসাধ্য? কারণ তারা যে আর আধুনিক পৃথিবীতে নেই, অবস্থান করছে আদিম পৃথিবীতে যেখানে রিডিলিনের ভয়ে ধাতুর তৈরি সামান্য একটা ছুরিও সাথে রাখা যায় না!

শেষ পর্যন্ত কি নাফিন আর নাইশা ফিরতে পেরেছিল বাংলাদেশে? আর কী পরিসমাপ্তি ঘটেছিল রিডিলিন মহাবিপর্যয়ের? নাকি রিডিলিনই দখল করে নিয়েছিল সম্পূর্ণ পৃথিবীকে? জানতে হলে সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসটি পড়তে হবে।

অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্তাধিকারী আফজাল হোসেন জানান, দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটির কাটতি খুব ভালো। কারণ মোশতাক আহমেদ এর পূর্বের সায়েন্স ফিকশন দি নিউ ওয়ার্ল্ড ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাছাড়া মোশতাক আহমেদ এর সায়েন্স ফিকশনের প্রতি পাঠকদের আগ্রহও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বলতে পারি দি ওল্ড ওয়ার্ল্ড পাঠককে সন্তুষ্ট করা বা তৃপ্তি দেয়ার মতো একটি সায়েন্স ফিকশন।

উল্লেখ্য, মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশ বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা একশত বিশটি। এবছর দি নিউ ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি হারানো জোছনার সুর নামে একটি প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস, মৃত্যুবাড়ি নামে একটি ভৌতিক এবং কিশোর গোয়েন্দা শিশিলিন সিরিজের রূপার সিন্দুক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, মোশতাক আহমেদ ২০১৮ সালে বাংলা একেডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার এবং চ্যানেল আই সিটি আনন্দ সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন। অন্যদিকে লেখালেখির বিগত দুই দশকে বহুবার বইমেলা এবং অনলাইনে বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহে তার বই বেস্ট সেলার হয়েছে। এবারের বইমেলায়ও অনিন্দ্য প্রকাশ এর স্টলে (প্যাভিলিয়ন ২০) এবং ওয়েবসাইটে আকর্ষণীয় ছাড়ে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া রকমারি ডটকমসহ বই বিক্রির অন্যান্য ওয়েবসাইটে উপন্যাসগুলো পাওয়া যাচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS