০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি

লালমনিরহাটে গ্রাম-বাংলার এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির পাশা-পাশি মহিষের গাড়ি। কালের বিবর্তনে আজ তা বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটায় হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের সব চিরচেনা ঐতিহ্য।

জানা গেছে, মহিষ এর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিষ্টজন্মের ১৫ থেকে ১৬শত বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ি ও মহিষের গাড়িতে চলাচল প্রচলন ছিল। সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা বিলুপ্তির পথে। কুড়িগ্রামের চিলমারীর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন গরুর ও মহিষের গাড়ির ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে তিনি “ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে” এ গানটি গেয়ে অনেক সুনাম অর্জণ করেছেন।

এক সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার একমাত্র জনপ্রিয় বাহন ছিল মহিষের গাড়ি। বিশেষ করে লালমনিরহাট জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের বাহন ছিল ওই গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ওই সব বাহন। এখন শুধু স্মৃতি! মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি মহিষ এর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও এ বাহনের শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।

প্রায় ২ যুগ আগেও মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। মহিষ ও গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে এসব বাহন ছিল একমাত্র পরিবহন। মহিষের গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ২ টি গান “আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল”এ রকম যুগান্তকারী সেই সব ভাওয়াইয়া গান। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির ওই যানটির ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, অটোরিকশা, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে।

মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটর গাড়ি, রেল গাড়ি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যান-বাহন। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না মহিষের গাড়ি। অথচ মহিষের গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের জনপ্রিয় ওই বাহন প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।

লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ মিজানুর রহমান মিজু জানান, আমাদের অতিত ঐতিহ্যের অংশ মহিষের গাড়ি। যা আজ বিলুপ্তির পথে। এ ঐতিহ্য কিছুটা গ্রামাঞ্চলের মানুষ ধরে রেখেছে। তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তিনি নিজেও মহিষ পালন করছেন। সম্প্রতি লালমনিরহাটের কালীগন্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমাড়ীর প্রত্যন্ত চর অঞ্চলে সরেজমিনে গেলে বিলুপ্ত প্রায় মহিষের গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। চরে মানুষ ও বিভিন্ন মালামাল এখনো বহন করে চলছেন।

গাড়িয়াল মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, চরের বুকে মহিষের গাড়ি এখনও একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার প্রত্যন্ত চর অঞ্চল গুলোতে এখনো মহিষের গাড়ী, গরুর পাল, ভেড়া ছাগলের পাল নিয়ে রাঁখাল বাঁশি নিয়ে পাল ছাড়িয়ে মনের সুখে ওকি গাড়িয়াল ভাই এর জনপ্রিয় গান বাঁশির সুরে গাইছেন।

বিজনেস বাংলদেশ/DS

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি

প্রকাশিত : ০৪:৩০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪

লালমনিরহাটে গ্রাম-বাংলার এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির পাশা-পাশি মহিষের গাড়ি। কালের বিবর্তনে আজ তা বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটায় হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের সব চিরচেনা ঐতিহ্য।

জানা গেছে, মহিষ এর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিষ্টজন্মের ১৫ থেকে ১৬শত বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ি ও মহিষের গাড়িতে চলাচল প্রচলন ছিল। সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা বিলুপ্তির পথে। কুড়িগ্রামের চিলমারীর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন গরুর ও মহিষের গাড়ির ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে তিনি “ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে” এ গানটি গেয়ে অনেক সুনাম অর্জণ করেছেন।

এক সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার একমাত্র জনপ্রিয় বাহন ছিল মহিষের গাড়ি। বিশেষ করে লালমনিরহাট জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের বাহন ছিল ওই গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ওই সব বাহন। এখন শুধু স্মৃতি! মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি মহিষ এর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও এ বাহনের শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।

প্রায় ২ যুগ আগেও মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। মহিষ ও গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে এসব বাহন ছিল একমাত্র পরিবহন। মহিষের গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ২ টি গান “আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল”এ রকম যুগান্তকারী সেই সব ভাওয়াইয়া গান। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির ওই যানটির ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, অটোরিকশা, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে।

মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটর গাড়ি, রেল গাড়ি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যান-বাহন। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না মহিষের গাড়ি। অথচ মহিষের গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের জনপ্রিয় ওই বাহন প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।

লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ মিজানুর রহমান মিজু জানান, আমাদের অতিত ঐতিহ্যের অংশ মহিষের গাড়ি। যা আজ বিলুপ্তির পথে। এ ঐতিহ্য কিছুটা গ্রামাঞ্চলের মানুষ ধরে রেখেছে। তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তিনি নিজেও মহিষ পালন করছেন। সম্প্রতি লালমনিরহাটের কালীগন্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমাড়ীর প্রত্যন্ত চর অঞ্চলে সরেজমিনে গেলে বিলুপ্ত প্রায় মহিষের গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। চরে মানুষ ও বিভিন্ন মালামাল এখনো বহন করে চলছেন।

গাড়িয়াল মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, চরের বুকে মহিষের গাড়ি এখনও একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার প্রত্যন্ত চর অঞ্চল গুলোতে এখনো মহিষের গাড়ী, গরুর পাল, ভেড়া ছাগলের পাল নিয়ে রাঁখাল বাঁশি নিয়ে পাল ছাড়িয়ে মনের সুখে ওকি গাড়িয়াল ভাই এর জনপ্রিয় গান বাঁশির সুরে গাইছেন।

বিজনেস বাংলদেশ/DS