১০:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

পঞ্চগড়ে চা উৎপাদনে রেকর্ড, দামে হতাশা কৃষকদের

এ বছরও রেকর্ড হারে চা উৎপাদন হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। চলতি মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে ১৭ শতাংশ চা। সিলেট ও পার্বত্যাঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল। ২০২৩ সালে রেকর্ড ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৪০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। তবে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হলেও চাষিদের কাঁচা চা পাতার দাম না পাওয়ার হতাশায় অনেকেই চা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে চা বাগান উঠিয়ে ভিন্ন আবাদের দিকে ছুটছেন।

আঞ্চলিক চা কার্যালয় জানায়, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলায় নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৯টি। ২০টি অনিবন্ধিত, ৮ হাজার ৩৭১টি ক্ষুদ্রায়তন চাবাগান (নিবন্ধিত ২১৬৪টি)। আর চা কারখানা রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৭টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ১৩২.১৮ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব জমিতে চা বাগানে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের ২৮টি চা কারখানায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ৫৩.১২ একর জমিতে চায়ের চাষ বেড়েছে ও ১ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে। জাতীয় চা উৎপাদনে ১৭ দশমিক ৪৪ ভাগ চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ অঞ্চল।

উত্তরাঞ্চলের শুধু পঞ্চগড়ের নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ৬৫টি, বড় চা বাগান রয়েছে ৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫, বড় চাবাগান রয়েছে ২০টি। জেলায় মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১ হাজার ৪৭৩ ও অনিবন্ধিত চাবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৭৫ টি। ১০ হাজার ২৬৭.২৮ একর জমিতে আবাদকৃত বাগানে সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৭৭ কেজি। আর এসব পাতা থেকে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে।

এদিকে ৫ বছর উত্তরাঞ্চলে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও চা পাতার মূল্য নিয়ে হতাশ চাষিরা। কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত কাচা পাতার দাম না পাওয়ায় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে অনেক চাষি। গত বছর থেকে অনেক চাষি চা বাগানের তুলে সেখানে অন্য আবাদ করছেন। চা অর্থনীতিতে উৎপাদন রেকর্ড বাড়লে কৃষকরা উৎপাদিত চা পাতার দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

অভিযোগ রয়েছে, চা শিল্প ঘিরে জেলায় ২৭টি চা কারখানা চালু থাকলেও পাতার দাম পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে কাঁচা পাতার দাম ১৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করলেও তারা এ দামে কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেননি। কারখানায় পাতা নিয়ে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে ৩০-৪০% কর্তন ও কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বিক্রি করে কৃষকদের গুনতে হয়েছে লোকসান। মজুরি, পাতা উত্তোলন ও সার-কীটনাশকের খরচও উঠে আসছে না এ দামে চা বিক্রি করে। চা পাতার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে চায়ের আবাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসান কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চাষিরা। তেমনি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধির সঙ্গে উন্মোচিত হবে নতুন ব্যবসার দ্বার। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আরও হাজারো মানুষের।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, গুণগতমান সম্পন্ন চা উৎপাদনের বিকল্প নেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মান অনুযায়ী নিলাম মার্কেটে চা পাতার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। বিদেশে চা রপ্তানি বাড়াতে পারলে চা শিল্পের বিরাজমান সংকট কেটে যাবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

নরসিংদীতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন রোগীদের মাঝে কোটি টাকার চেক বিতরণ

পঞ্চগড়ে চা উৎপাদনে রেকর্ড, দামে হতাশা কৃষকদের

প্রকাশিত : ০৩:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

এ বছরও রেকর্ড হারে চা উৎপাদন হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। চলতি মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে ১৭ শতাংশ চা। সিলেট ও পার্বত্যাঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল। ২০২৩ সালে রেকর্ড ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৪০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। তবে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হলেও চাষিদের কাঁচা চা পাতার দাম না পাওয়ার হতাশায় অনেকেই চা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে চা বাগান উঠিয়ে ভিন্ন আবাদের দিকে ছুটছেন।

আঞ্চলিক চা কার্যালয় জানায়, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলায় নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৯টি। ২০টি অনিবন্ধিত, ৮ হাজার ৩৭১টি ক্ষুদ্রায়তন চাবাগান (নিবন্ধিত ২১৬৪টি)। আর চা কারখানা রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৭টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ১৩২.১৮ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব জমিতে চা বাগানে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের ২৮টি চা কারখানায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ৫৩.১২ একর জমিতে চায়ের চাষ বেড়েছে ও ১ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে। জাতীয় চা উৎপাদনে ১৭ দশমিক ৪৪ ভাগ চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ অঞ্চল।

উত্তরাঞ্চলের শুধু পঞ্চগড়ের নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ৬৫টি, বড় চা বাগান রয়েছে ৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫, বড় চাবাগান রয়েছে ২০টি। জেলায় মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১ হাজার ৪৭৩ ও অনিবন্ধিত চাবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৭৫ টি। ১০ হাজার ২৬৭.২৮ একর জমিতে আবাদকৃত বাগানে সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৭৭ কেজি। আর এসব পাতা থেকে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে।

এদিকে ৫ বছর উত্তরাঞ্চলে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও চা পাতার মূল্য নিয়ে হতাশ চাষিরা। কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত কাচা পাতার দাম না পাওয়ায় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে অনেক চাষি। গত বছর থেকে অনেক চাষি চা বাগানের তুলে সেখানে অন্য আবাদ করছেন। চা অর্থনীতিতে উৎপাদন রেকর্ড বাড়লে কৃষকরা উৎপাদিত চা পাতার দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

অভিযোগ রয়েছে, চা শিল্প ঘিরে জেলায় ২৭টি চা কারখানা চালু থাকলেও পাতার দাম পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে কাঁচা পাতার দাম ১৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করলেও তারা এ দামে কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেননি। কারখানায় পাতা নিয়ে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে ৩০-৪০% কর্তন ও কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বিক্রি করে কৃষকদের গুনতে হয়েছে লোকসান। মজুরি, পাতা উত্তোলন ও সার-কীটনাশকের খরচও উঠে আসছে না এ দামে চা বিক্রি করে। চা পাতার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে চায়ের আবাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসান কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চাষিরা। তেমনি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধির সঙ্গে উন্মোচিত হবে নতুন ব্যবসার দ্বার। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আরও হাজারো মানুষের।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, গুণগতমান সম্পন্ন চা উৎপাদনের বিকল্প নেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মান অনুযায়ী নিলাম মার্কেটে চা পাতার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। বিদেশে চা রপ্তানি বাড়াতে পারলে চা শিল্পের বিরাজমান সংকট কেটে যাবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে