০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ডায়রিয়া আক্রান্ত দুই হাজারের অধিক

লক্ষ্মীপুরে বানের পানি কমতে শুরু করায় পানিবাহিত রোগ ডায়েরিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার ৫ টি উপজেলায় শিশু সহ দুই হাজারের অধিক বানবাসী মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে বেশীর ভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। জ্বর, সর্দি ও রোগীর সংখ্যাও কম নয়। গত দুইদিন ধরে স্বাস্থ্য উপ কেন্দ্রসহ সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। শর্য্যা সংকটের কারনে অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝেতে নিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তারসহ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভায়োটিকসহ ওষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহিরে থেকে স্যালাইন সহ ঔষধ কিন্তে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিল ধারনের জায়গা নেই। এক একটি বেডে একাধিক ডায়রিয়ার রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেক রোগীকেই সীটে জায়গা না দিতে পারায় হাসপাতালের ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর্যাপ্ত নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একই অবস্থা জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও অবস্থা।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ডায়রিয়ার ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তিই আছে ১২৫ জন রোগী। এক দুজন নার্স দিয়ে এতো গুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্ট কর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে- দশ জন ডাকে ঔষধ দিতে। তার উপরে স্যালাইন ও ডায়রিয়া এন্টিভায়েটিক ঔষধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে কিনে আনলে তাদিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।
দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সাথে ৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমর সমান পানিতে বন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে একাকার। এখন আমার ৭ মাসের ছেলের জ্বর আর ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতেল এসে আরো অস্বস্থিতে পড়েছি। গুদাম ঘরের মত পরিস্থিতি।
একই কথা বললেন শহরের মুক্তিগঞ্জ থেকে শিশু কন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমুজুর খোকন। তিনি বলেন, বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যালাইন সহ সব ঔষধই বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলে ঔষধ নাই কেথায় থেকে দিবো?
চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমন সহ কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা দূর্গন্ধ আর রোগী ভীড়ে খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে।
ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ নিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। যেভাবে রোগী ভর্তি হচ্ছে তার সবই বন্যাক্রান্ত এলাকার। গত শুক্রবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩২জন ভর্তি হলেও গত চার দিনে গণ হারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১০ জনের বেড তো খালি নেই। মেঝেতেও হাটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, হাসপাতালে, কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভায়োটিকসহ ঔষধের তীব্র সংকট। যেতুটু ছিলো সব রোগিদের সমহারে বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে ঔষধ কিনছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার বন্যাক্রান্ত ৪শত আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসক দিলেও তা অপযাপ্ত। এতে মাবেতর জীবনযাপন করছেন আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানিয়রা।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আহমদ কবির জানান, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রায়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইন সহ ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দু তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ঔষধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন করা হবে বলে জানান তিনি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

মামলার এজাহারে কারও নাম থাকলেই গ্রেপ্তার নয়: ডিএমপি কমিশনার

ডায়রিয়া আক্রান্ত দুই হাজারের অধিক

প্রকাশিত : ০৯:২৬:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে বানের পানি কমতে শুরু করায় পানিবাহিত রোগ ডায়েরিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার ৫ টি উপজেলায় শিশু সহ দুই হাজারের অধিক বানবাসী মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে বেশীর ভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। জ্বর, সর্দি ও রোগীর সংখ্যাও কম নয়। গত দুইদিন ধরে স্বাস্থ্য উপ কেন্দ্রসহ সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। শর্য্যা সংকটের কারনে অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝেতে নিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তারসহ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভায়োটিকসহ ওষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহিরে থেকে স্যালাইন সহ ঔষধ কিন্তে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিল ধারনের জায়গা নেই। এক একটি বেডে একাধিক ডায়রিয়ার রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেক রোগীকেই সীটে জায়গা না দিতে পারায় হাসপাতালের ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর্যাপ্ত নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একই অবস্থা জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও অবস্থা।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ডায়রিয়ার ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তিই আছে ১২৫ জন রোগী। এক দুজন নার্স দিয়ে এতো গুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্ট কর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে- দশ জন ডাকে ঔষধ দিতে। তার উপরে স্যালাইন ও ডায়রিয়া এন্টিভায়েটিক ঔষধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে কিনে আনলে তাদিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।
দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সাথে ৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমর সমান পানিতে বন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে একাকার। এখন আমার ৭ মাসের ছেলের জ্বর আর ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতেল এসে আরো অস্বস্থিতে পড়েছি। গুদাম ঘরের মত পরিস্থিতি।
একই কথা বললেন শহরের মুক্তিগঞ্জ থেকে শিশু কন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমুজুর খোকন। তিনি বলেন, বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যালাইন সহ সব ঔষধই বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলে ঔষধ নাই কেথায় থেকে দিবো?
চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমন সহ কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা দূর্গন্ধ আর রোগী ভীড়ে খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে।
ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ নিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। যেভাবে রোগী ভর্তি হচ্ছে তার সবই বন্যাক্রান্ত এলাকার। গত শুক্রবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩২জন ভর্তি হলেও গত চার দিনে গণ হারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১০ জনের বেড তো খালি নেই। মেঝেতেও হাটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, হাসপাতালে, কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভায়োটিকসহ ঔষধের তীব্র সংকট। যেতুটু ছিলো সব রোগিদের সমহারে বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে ঔষধ কিনছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার বন্যাক্রান্ত ৪শত আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসক দিলেও তা অপযাপ্ত। এতে মাবেতর জীবনযাপন করছেন আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানিয়রা।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আহমদ কবির জানান, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রায়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইন সহ ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দু তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ঔষধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন করা হবে বলে জানান তিনি।