১২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়িতে গাড়ি চলাচল সীমিত, সেনা পুলিশ বিজিবির টহল

জুম্ম ছাত্রজনতার ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে। অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে জেলা সদরের কথাও পিকেটিং-এর খবরও পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়িতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির অতিরিক্ত টহল দিতে দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচগুলো সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরে প্রবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতির সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান মো. আরিফ জানান, সাজেকে যাওয়ার সব গাড়ি বন্ধ রয়েছে। প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত দিলে গাড়ি ছাড়া হবে। গতকাল শুক্রবার খাগড়াছড়ি থেকে ৮০টি গাড়ি সাজেক গেছে। প্রায় ৬শর মতো পর্যটক সাজেকে রয়েছেন।

নওগাঁ থেকে খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসা পর্যটক আরাফাত আলী মন্ডল বলেন, সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০ জনের একটি টিম নিয়ে তারা খাগড়াছড়ি এসেছেন। খাগড়াছড়ি এসে জানতে পেরেছেন অবরোধের কথা।

তিনি বলেন, আগে থেকে হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, হোটেল থেকে অবরোধের কথা জানানো হয়নি।

দুই জেলায় নিহত ৪
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘাতের রেশ পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও ছড়ায়। পার্বত্য এই দুই জেলায় ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল শুক্রবার দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

খাগড়াছড়িতে নিহতরা হলেন— রুবেল ত্রিপুরা (২৫), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও জুনান চাকমা (২০)। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাঙামাটিতে সংঘাত হয়। জেলা সদরের বনরূপা, উত্তর কালিন্দীপুর, কালিন্দীপুর ও বিজন সরণি এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘাত চলে। এতে একজনের মৃত্যু হয়। নিহত ওই ব্যক্তির নাম অনিক কুমার চাকমা। তার গ্রামের বাড়ি রাঙামাটি সদরের নোয়াদমের জীবতলী ইউনিয়নে। তবে অনিক কোথায় এবং কীভাবে মারা গেছেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়।

যে কারণে ছড়ায় সহিংসতা
এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার জেলার দীঘিনালায় সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলে হামলা করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জেলা শহরের নিউজিল্যান্ড এলাকায় মো. মামুন নামের একজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে জেলার দীঘিনালায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। দীঘিনালায় পরিকল্পিতভাবে দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা করে। মূলত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই দেশি-বিদেশি চক্রগুলোর সহযোগিতায় পাহাড়ি সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে স্বপ্ন দেখছে স্বায়ত্তশাসনের।

অপরদিকে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। দলটির মুখপাত্র নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির সহিংস ঘটনায় পাহাড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গুজবের কারণে ভয়ভীতিতে আছেন পাহাড়ের সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতে প্রত্যেককে সহনশীল হতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার
তিন পার্বত্য জেলায় শান্ত থাকতে সকলেল প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে এ কথা।

আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

জনপ্রিয়

বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা

খাগড়াছড়িতে গাড়ি চলাচল সীমিত, সেনা পুলিশ বিজিবির টহল

প্রকাশিত : ১০:৪৫:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জুম্ম ছাত্রজনতার ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে। অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে জেলা সদরের কথাও পিকেটিং-এর খবরও পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়িতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির অতিরিক্ত টহল দিতে দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচগুলো সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরে প্রবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতির সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান মো. আরিফ জানান, সাজেকে যাওয়ার সব গাড়ি বন্ধ রয়েছে। প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত দিলে গাড়ি ছাড়া হবে। গতকাল শুক্রবার খাগড়াছড়ি থেকে ৮০টি গাড়ি সাজেক গেছে। প্রায় ৬শর মতো পর্যটক সাজেকে রয়েছেন।

নওগাঁ থেকে খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসা পর্যটক আরাফাত আলী মন্ডল বলেন, সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০ জনের একটি টিম নিয়ে তারা খাগড়াছড়ি এসেছেন। খাগড়াছড়ি এসে জানতে পেরেছেন অবরোধের কথা।

তিনি বলেন, আগে থেকে হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, হোটেল থেকে অবরোধের কথা জানানো হয়নি।

দুই জেলায় নিহত ৪
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘাতের রেশ পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও ছড়ায়। পার্বত্য এই দুই জেলায় ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল শুক্রবার দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

খাগড়াছড়িতে নিহতরা হলেন— রুবেল ত্রিপুরা (২৫), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও জুনান চাকমা (২০)। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাঙামাটিতে সংঘাত হয়। জেলা সদরের বনরূপা, উত্তর কালিন্দীপুর, কালিন্দীপুর ও বিজন সরণি এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘাত চলে। এতে একজনের মৃত্যু হয়। নিহত ওই ব্যক্তির নাম অনিক কুমার চাকমা। তার গ্রামের বাড়ি রাঙামাটি সদরের নোয়াদমের জীবতলী ইউনিয়নে। তবে অনিক কোথায় এবং কীভাবে মারা গেছেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়।

যে কারণে ছড়ায় সহিংসতা
এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার জেলার দীঘিনালায় সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলে হামলা করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জেলা শহরের নিউজিল্যান্ড এলাকায় মো. মামুন নামের একজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে জেলার দীঘিনালায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। দীঘিনালায় পরিকল্পিতভাবে দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা করে। মূলত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই দেশি-বিদেশি চক্রগুলোর সহযোগিতায় পাহাড়ি সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে স্বপ্ন দেখছে স্বায়ত্তশাসনের।

অপরদিকে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। দলটির মুখপাত্র নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির সহিংস ঘটনায় পাহাড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গুজবের কারণে ভয়ভীতিতে আছেন পাহাড়ের সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতে প্রত্যেককে সহনশীল হতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার
তিন পার্বত্য জেলায় শান্ত থাকতে সকলেল প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে এ কথা।

আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।