০৯:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বনামধন্য মুখরোচক মিষ্টান্ন হিসেবে পরিচিত (ছানামুখী) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।ছানামুখী এমন এক ধরনের সুস্বাদু মিষ্টান্ন যার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে সারা দেশ ব্যাপী।

তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া দেশের আর কোথাও ছানামুখী তৈরি হয় না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।

২৪সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষতির জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক (যার নমুনা এতদসঙ্গে সংযুক্ত আছে) নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই-৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক (১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত) মোঃ শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ‘ছানামুখী’ মিষ্টান্নকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির রেজিস্টারের কাছে ১০ পৃষ্টার একটি আবেদন পাঠান।

সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের প্রদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, জেলা তথ্য বাতায়নে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে উল্লেখ করা আছে এই ছানামুখীর নাম। ছানামুখীর উৎপত্তি ব্রিটিশ রাজত্বকালে সাংস্কৃতিক রাজধানীবখ্যাত বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত মুখরোচক ও সুস্বাদু এক কেজি ছানামুখী তৈরি করতে গাভির সাত থেকে আট লিটার দুধ লাগে আর প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম পড়ে ৭০০ টাকা।শুরু থেকেই অত্যন্ত সুকৌশল ও যত্নের সাথে শৈল্পিক হাতে ছানামুখী তৈরি করেন এর কারিগররা।

এ ব্যাপারে কথা বললে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আদর্শ মাতৃভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী ৭৭ বছর বয়সি রাখাল চন্দ্র মোদক বলেন, এই জেলা শহরে আমি প্রায় ৬৮ বছর ধরে মিষ্টির দোকান খুলে ব্যাবসা চালিয়ে আসছি।দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের হাতে তৈরি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় খুব আনন্দ লাগছে। এতে আমরা মিষ্টির দোকানী থেকে থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা কারিগর সবাই বেশ খুশি।এটা আমাদের জন্য বেশ সম্মানের। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া মহাদেব মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকেই মূলত ছানামুখীর যাত্রা শুরু হয়।আর এটার সুনাম ও মর্যাদা আমরা এখন অব্দি ধরে রেখেছি। আমাদের এই ছানামুখী এখন দেশের গন্ডিতে শুধু নয় দেশ পেরিয়ে নিয়মিত দেশের বাইরেও যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিং এর আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী

প্রকাশিত : ০৫:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বনামধন্য মুখরোচক মিষ্টান্ন হিসেবে পরিচিত (ছানামুখী) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।ছানামুখী এমন এক ধরনের সুস্বাদু মিষ্টান্ন যার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে সারা দেশ ব্যাপী।

তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া দেশের আর কোথাও ছানামুখী তৈরি হয় না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।

২৪সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষতির জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক (যার নমুনা এতদসঙ্গে সংযুক্ত আছে) নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই-৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক (১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত) মোঃ শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ‘ছানামুখী’ মিষ্টান্নকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির রেজিস্টারের কাছে ১০ পৃষ্টার একটি আবেদন পাঠান।

সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের প্রদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, জেলা তথ্য বাতায়নে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে উল্লেখ করা আছে এই ছানামুখীর নাম। ছানামুখীর উৎপত্তি ব্রিটিশ রাজত্বকালে সাংস্কৃতিক রাজধানীবখ্যাত বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত মুখরোচক ও সুস্বাদু এক কেজি ছানামুখী তৈরি করতে গাভির সাত থেকে আট লিটার দুধ লাগে আর প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম পড়ে ৭০০ টাকা।শুরু থেকেই অত্যন্ত সুকৌশল ও যত্নের সাথে শৈল্পিক হাতে ছানামুখী তৈরি করেন এর কারিগররা।

এ ব্যাপারে কথা বললে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আদর্শ মাতৃভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী ৭৭ বছর বয়সি রাখাল চন্দ্র মোদক বলেন, এই জেলা শহরে আমি প্রায় ৬৮ বছর ধরে মিষ্টির দোকান খুলে ব্যাবসা চালিয়ে আসছি।দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের হাতে তৈরি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় খুব আনন্দ লাগছে। এতে আমরা মিষ্টির দোকানী থেকে থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা কারিগর সবাই বেশ খুশি।এটা আমাদের জন্য বেশ সম্মানের। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া মহাদেব মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকেই মূলত ছানামুখীর যাত্রা শুরু হয়।আর এটার সুনাম ও মর্যাদা আমরা এখন অব্দি ধরে রেখেছি। আমাদের এই ছানামুখী এখন দেশের গন্ডিতে শুধু নয় দেশ পেরিয়ে নিয়মিত দেশের বাইরেও যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিং এর আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস