১০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

শিমুল ফুটেছে ডালে, গাইছে বসন্তের গান

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরে ঘেঁষে গড়ে ওঠা জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল গাছের বাগান । দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল গালিছা বিছিয়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসুদের। আর চোখের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দেশ-বিদেশি এই বাগান দেখতে ছুটে আসছেন হাজার পর্যটক।

নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী, নদীর তীর ও মানিগাও গ্রাম ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মনোহর শিমুল গাছের বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে টকটকে লাল শিমুল ফুল ফুটেছে, যেন গাইছে বসন্তের গান। সেই সাথে কিচির মিচিরে ব্যস্ত অগনিত পাখিরা আর বাসন্তি হাওয়ায় হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছেন আগত পর্যটকরা। শিমুলের রক্ত রাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ফুলের পাপঁড়ি ছিটিয়ে মেতে উঠেছেন ভালোবাসার রঙে আগতরা।

শিমৃুল বাগানে বেড়াতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা জানান, ফাল্গুন চলে এলেই বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে ফুল ফুটতে শুরু করে আর দেশ-বিদেশ থেকে আসতে শুরু করেন প্রকৃতিপ্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় যেন আগত পর্যটকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে আর সৌন্দর্য শব্দের আসল অর্থ খুঁজে পেয়েছি। তবে এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সড়ক পথের উন্নয়ন খুব প্রয়োজন।

সেখানে আগত দর্শনার্থীদের কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি, কেউ সাদা নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ হাতে হাত রেখে শিমুলের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউবা শিমুলের ফুলের পাপঁড়ি প্রিয়জনের উপরে ছিটিয়ে মেতেছেন ভালোবাসার রঙে।

শিমুলের রক্তরাঙা বসন্তের সৌন্দর্য দেখতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হওয়ায় জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে বেড়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে ঝরে পড়া শিমুল ফুল কুড়িয়ে সেই ফুল দিয়ে মালা গেথে বিক্রি করা গ্রামীণ নারী, শিশু ও ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যে।

বেড়াতে আসা পর্যটক রিয়াজুর রহমান জানান, বাগানে ফোটা ফুল দেখলেই বোঝা যায় বসন্ত এসে গেছে। শিমুল বাগানের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তবে বাগানে আরও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও ভাল মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা এখন খবু দরকার। এইগুলো না থাকায় আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

বাগানের স্বত্বাধিকারী বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বাবা নেই, তবে বাবার রেখে যাওয়া এই বাগান দেখাশুনা করছি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পুরো এলাকা জুড়ে শিমুল বাগানের প্রতিটি ডালে ডালে টকটকে লাল শিমুল ফুল দেখা যায়। রক্ত রাঙা শিমুল ফুল আর বাগানের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসছেন। তারা যেন নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আগত পর্যটকদের জন্য একটি রিসোর্ট করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যাদুকাটা নদী ঘেঁষে মানিগাও গ্রামের পাশেই ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মরহুম
জয়নাল আবেদীন। প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা ওই শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে রক্তিম আভায় বসন্তের প্রতীক।

ডিএস..

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কুমিল্লা (উঃ) জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

শিমুল ফুটেছে ডালে, গাইছে বসন্তের গান

প্রকাশিত : ১০:১৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরে ঘেঁষে গড়ে ওঠা জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল গাছের বাগান । দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল গালিছা বিছিয়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসুদের। আর চোখের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দেশ-বিদেশি এই বাগান দেখতে ছুটে আসছেন হাজার পর্যটক।

নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী, নদীর তীর ও মানিগাও গ্রাম ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মনোহর শিমুল গাছের বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে টকটকে লাল শিমুল ফুল ফুটেছে, যেন গাইছে বসন্তের গান। সেই সাথে কিচির মিচিরে ব্যস্ত অগনিত পাখিরা আর বাসন্তি হাওয়ায় হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছেন আগত পর্যটকরা। শিমুলের রক্ত রাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ফুলের পাপঁড়ি ছিটিয়ে মেতে উঠেছেন ভালোবাসার রঙে আগতরা।

শিমৃুল বাগানে বেড়াতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা জানান, ফাল্গুন চলে এলেই বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে ফুল ফুটতে শুরু করে আর দেশ-বিদেশ থেকে আসতে শুরু করেন প্রকৃতিপ্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় যেন আগত পর্যটকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে আর সৌন্দর্য শব্দের আসল অর্থ খুঁজে পেয়েছি। তবে এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সড়ক পথের উন্নয়ন খুব প্রয়োজন।

সেখানে আগত দর্শনার্থীদের কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি, কেউ সাদা নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ হাতে হাত রেখে শিমুলের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউবা শিমুলের ফুলের পাপঁড়ি প্রিয়জনের উপরে ছিটিয়ে মেতেছেন ভালোবাসার রঙে।

শিমুলের রক্তরাঙা বসন্তের সৌন্দর্য দেখতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হওয়ায় জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে বেড়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে ঝরে পড়া শিমুল ফুল কুড়িয়ে সেই ফুল দিয়ে মালা গেথে বিক্রি করা গ্রামীণ নারী, শিশু ও ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যে।

বেড়াতে আসা পর্যটক রিয়াজুর রহমান জানান, বাগানে ফোটা ফুল দেখলেই বোঝা যায় বসন্ত এসে গেছে। শিমুল বাগানের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তবে বাগানে আরও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও ভাল মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা এখন খবু দরকার। এইগুলো না থাকায় আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

বাগানের স্বত্বাধিকারী বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বাবা নেই, তবে বাবার রেখে যাওয়া এই বাগান দেখাশুনা করছি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পুরো এলাকা জুড়ে শিমুল বাগানের প্রতিটি ডালে ডালে টকটকে লাল শিমুল ফুল দেখা যায়। রক্ত রাঙা শিমুল ফুল আর বাগানের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসছেন। তারা যেন নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আগত পর্যটকদের জন্য একটি রিসোর্ট করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যাদুকাটা নদী ঘেঁষে মানিগাও গ্রামের পাশেই ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মরহুম
জয়নাল আবেদীন। প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা ওই শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে রক্তিম আভায় বসন্তের প্রতীক।

ডিএস..