লালমনিরহাটের ধরলা নদীর পাড় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামে ধরলা নদীর ভাঙ্গনে কয়েক শত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবাদি জমি, বাঁশঝাড়, গাছ-পালা হারিয়ে দিশাহারা ধরলা নদীর পাড়ের সাধারণ মানুষ। বসতভিটা হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন এ এলাকার মানুষজন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের ধরলা নদীর ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ব্যাপারীটারী ঘাটের পার হইতে কুরুল পর্যন্ত এবং ফলিমারীর চড়ের তীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ফলিমারী চড়ের তীর এর খুব কাছাকাছি রয়েছে ১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ১টি মসজিদ ও ১টি স্কুল। চরে ১ শতাধিকেরও বেশি পরিবার বসবাস করেন। ভাঙ্গণ রোধ করতে না পারলে এসব নদী গর্ভে চলে যাবে। এছাড়া ৪ নং ওয়ার্ডে কুরুল নাড়ুর বাড়ীর পাশে এবং বুমকা ছয় মাথা পাকার মাথা হইতে ৬৮ মিটার পর্যন্ত নদীর তীর ভাঙ্গতেছে। উক্ত নদীর তীর ভাঙ্গন রোধ না করতে পারলে লোকালয় পর্যন্ত ভেঙ্গে যাবে।
কর্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা কুসুম বালা, কৃষ্ণ, নারায়ণ চন্দ্র সেন, আবুল হোসেন, লক্ষী রাণী জানান, ধরলা নদীর ভাঙ্গন রোধে আমরা দিশেহারা। বর্তমানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীর স্রোত ডান দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা রাস্তা, মসজিদ ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ হাট-বাজার।
এসব গ্রামগুলোতে প্রায় ৩ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে। নদী-ভাঙ্গনে একেকজন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত বসতভিটা সরিয়েছেন। জায়গা-জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও নেই। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষ উঁচু ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের এক সময় সহায় সম্বল সব কিছুই ছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। ছিলোনা অভাব-অনটন কিন্তু ধরলার বন্যা আর নদী-ভাঙ্গনে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তাদের। ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে নদী-ভাঙ্গনের শিকার কয়েক হাজার মানুষজন।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ দুলাল হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জোনাব আলী ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আসাদুল হক মন্টু জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা/ জিও ব্যাগ ও ব্লক স্থাপন শুরু করেনি। এভাবে অরক্ষিত থাকলে ধরলা নদীর প্রবল পানির স্রোতে নতুন নতুন জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩ নং ও ৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমানে প্রায় ৭ শত ৮০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তাই সরকারীভাবে ভাঙ্গন-রোধের ব্যবস্থার দাবী জানান তারা।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় জানান, মোগলহাটের ধরলা নদীতে এ রকম প্রায় কয়েকটি এলাকায় কম বেশি ভাঙ্গন হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।
ডিএস./