দেশের অর্থনীতির লাইফ-লাইন খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা ও শিপ ইয়ার্ডের দুর্ঘটনার কারণে হতাহতের শিকার হচ্ছেন অনেকে। দুর্ঘটনা ঘটলেই আহত ব্যক্তিকে নিয়ে স্বজন বা উদ্ধারকারীরা প্রথমেই ছুটে যান সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু সেখানে জরুরী এসব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পথেই মারা যান অনেক রোগী এবং হাসপাতালটিতে দীর্ঘ বছর ধরে অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের পদটি শূন্য রয়েছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের শূন্য পদটি পূরণের পাশাপাশি এ এলাকায় ট্রমা সেন্টার স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন।
সীতাকুণ্ডে ২টি হাইওয়ে থানা পুলিশের তথ্য অনুসারে, উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে একটি করে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। গত জানুয়ারী থেকে চলতি মাস নভেম্বর পর্যন্ত এই ১১ মাসে ৭৭টি দুর্ঘটনায় ৬২জন নিহত ও ১২০ জন আহত হয়েছে। তবে দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে আহত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টার না থাকায় তারা চিকিৎসা বঞ্চিত হন। হাসপাতালের চিকিৎসকের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে আহত রোগীদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহতদের চিকিৎসার স্বার্থে সীতাকুণ্ডে পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার চালু করা জরুরী হয়ে পড়েছে। জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রায়শ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রবণ হওয়ার পরও এ অঞ্চলে এতদিনেও একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার কেন প্রতিষ্ঠা করা হলো না, এই আক্ষেপ সীতাকুণ্ডবাসীর।
কুমিরা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির রব্বানী বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ট্রমা সেন্টার চালু করা জরুরী।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলার ওপর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়কে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু এখানে কোনো ট্রমা সেন্টার নেই। একটি ট্রমা সেন্টার চালু করা হলে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দারা উপকৃত হতেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আলতাপ হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে একটি অত্যাবশ্যকীয় ট্রমা সেন্টার খুবই জরুরী। কিন্তু এটা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়ছে। ফলস্বরূপ, আহতদের জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে প্রায়শই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে ট্রমা সেন্টার জরুরী এবং দীর্ঘ বছর ধরে অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের পদটি শূন্য রয়েছে। অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের শূন্য পদ পূরণের পাশাপাশি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসে জেলায় আমাদের মাসিক মিটিংয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আমি বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।



















