বিএনপি’র মনোনয়নকে ঘিরে টানা ১০ দিনের মত আন্দোলন ও বিক্ষোভ চলছে সাতক্ষীরা ৩ আসনে। জাতীয় পার্টির (নাফি) থেকে সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য ডঃ শহিদুল আলমকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন দিনকে দিন বেগবান হচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমগম থেকে শুরু হয়ে লাখো জনতার জনসমুদ্রে রূপ নিতে দেখা গেছে এই আন্দোলন সংগ্রাম।
এই আসনটিতে বিভিন্ন বিষয়ে ইতিপূর্বে অনেক আন্দোলন দেখা গেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর নেতৃত্বে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ৮০ ও ৯০ এর দশকে এবং ২০০৮ সহ কয়েকটি আন্দোলন দেখা গেছে। ২০১৩ ও ১৪ সালে জামাত-বিএনপি মিলে সরকার বিরোধী আন্দোলনও দেখা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদির নেতৃত্বে ১৪ ও ১৮ সালে কয়েকটি আন্দোলন সংগ্রাম দেখা গেছে।
কিন্তু বর্তমানে সাতক্ষীরা ৩ আসনে কালীগঞ্জ ও আশাশুনিতে কাজী আলাউদ্দিনকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেখা গিয়েছে। কাজী আলাউদ্দিনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে এবং ডঃ শহিদুল আলম কে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন দিনকে দিন বেগবান হচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমগম থেকে শুরু হয়ে লাখো জনতার জনসমুদ্রে রূপ নিতে দেখা গেছে এই আন্দোলন সংগ্রাম।
নভেম্বরের ২ তারিখ থেকে শুরু করে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) অবধি টানা ৮ দিন তাদের এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে এবং থাকবে। সোমবার বিকালের বিক্ষোভ সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সনাতনী ধর্ম অবলম্বীদের বিশাল জমায়েত হয়। একইভাবে মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় উপজেলা বিএনপি’র কার্যালয় থেকে এক নজিরবিহীন মহিলা সমাবেশ শুরু হয়। দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি ডঃ শহিদুল আলম কে ভালোবেসে হিন্দু ধর্মের রেকর্ড পরিমাণ নারী-পুরুষ এবং সাধারন মানুষও দলে দলে যোগ দিয়েছে এই বিক্ষোভ মিছিলে। দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও আশাশুনির এই আন্দোলন। বর্তমান চলমান এই আন্দোলনটিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, সাতক্ষীরা ৩ আসনে বিগত ৫০ বছরেও এরকম টানা আন্দোলন দেখা যায়নি। এবং একটি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র তার মনোনয়নের জন্য এত মানুষের সমাগম ইতিপূর্বে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন প্রবীণরা।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সহ উপজেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি সফল হচ্ছে ডঃ শহিদুল আলম এর ভক্তবৃন্দ ও ভালোবাসার মানুষের অংশগ্রহণে। আমরা তার নমিনেশন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না। নেতারা আরো জানান, সর্বশেষ অত্র অঞ্চলের নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় নিয়ে ঢাকা মুখি হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করবেন। না হলে কোনভাবেই যদি শহীদুল আলম নমিনেশন ফিরে না পান, তাহলে নিশ্চিত এই আসনটি ধানের শীষ মার্কা নিয়ে বিএনপি চিরতরে হারিয়ে ফেলবে। তাই তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিএনপি’র এই আসনটি বিজয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে। এবং বিএনপি’র বিজয় সুনিশ্চিত করতে। আন্দোলনকারীদের মতে, মনোনয়ন পাওয়া কাজী আলাউদ্দিন দ্বারা সাতক্ষীরা ৩ আসনটি বিএনপি’র ভরাডুবি হবে। কাজী আলাউদ্দিনকে এই আসনে তেমন কেউ চেনেন না। সে বিগত সময়ে সাতক্ষীরা ৪ এর প্রার্থী ছিল। এবং বিগত ২০ বছরের মধ্যে সে কখনো এলাকায় আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা জানান, ডা: শহীদুল আলমের নমিনেশন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বৃহৎ থেকে বৃহত্তর আন্দোলন চলবে। কারণ ডঃ শহিদুল আলম না আসলে এই আসনে বিএনপি’র অন্য কেউ ভোট পাবে না।
এদিকে বিএনপির নমিনেশন পাওয়া কাজী আলাউদ্দিন তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ করছেন। এই আন্দোলন নিয়ে তিনিও পাল্টা অভিযোগ করে চলেছেন। তার দাবি, এই আসনে ধানের শীষ নিয়ে তিনি পাশ করতে পারবেন। সকলকে তার পক্ষে এসে একতাবদ্ধ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অথচ এদিকে কাজী আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে তাঁর নমিনেশন বাতিলের দাবিতে, নজির বিহীন জনসমাগমে টানা ১০ দিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি চলমান রয়েছে ।



















