০৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর এক তৃতীয়াংশই কৃষক

  • এ. আর আকাশ
  • প্রকাশিত : ১২:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 49

ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এর মূলকারণ। সরকারি ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়।

প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, “জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ অবধি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) বহির্বিভাগে ৭৬ হাজার ৫৪৩ জন নতুন রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং এগুলো চূড়ান্ত বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কৃষকদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক।

এনআইসিআরএইচে ২০১৫ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের তালিকায় ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে এ হার ছিলো ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে তাদের অসচেতনতার বিষয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) নীতিমালার পরামর্শগুলো না মানাই মূলকারণ।

এছাড়া তারা মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশক অনুপ্রবেশ রোধের কোনো ব্যবস্থা না নেয়াও ক্যান্সার প্রাদুর্ভাবের মূলকারণ। এই কৃষকরা কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়াই রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফলে মারাত্মক এবং ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধী রোগ সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। এ কারণে ক্যান্সার ছাড়াও কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। তাছাড়া পরিবেশের ওপর একটা বিরুপ প্রভাব তো আছেই।

এছাড়া ধূমপায়ীদের সংখ্যা ও বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে। গত তিন বছরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ভাগ বেড়েছে বলে সম্প্রতি হাসপাতালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে। “জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত মোট আক্রান্তদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত মোট ৫ হাজার ৮৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৮৩, যা মাত্র তিন বছরে প্রায় ২০০ ভাগ বেড়েছে। পুরুষদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের হারই ছিল বেশি। এরপর নারীদের স্তন ক্যান্সারের হার। ২৪.৭ ভাগ পুরুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং নারী ছিলেন ৫.২ ভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪ হাজার ৯৯৮ জন স্তন, ২ হাজার ৭১৯ জন জরায়ু, ১ হাজার ৫৮২ জন খাদ্যনালী, ১ হাজার ৩৬৬ জন পাকস্থলি, ১ হাজার ২২৪ জন লিভার, ১ হাজার ১৭৭ জন লিম্ফোমা, ১ হাজার ৫৪ জন মলদ্বার, ৮৮৪ জন গাল/ওরাল মিউকোসা এবং ৪৮৫ জন পিত্তথলি ক্যান্সারের রোগী এনআইসিআরএইচ-এ ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৮৮৭ (১৬.৬%), স্তন ক্যান্সার ৪৯৯৪ (১৪.১%), জরায়ু ক্যান্সার ২৭১৯ (৭.৭%), খাদ্যনালী ক্যান্সার ১৫৮২ (৪.৫%), পেট ক্যান্সার ১৩৬৬ (৩.৯%), লিভার ক্যান্সার ১২২৪ (৩.৫), লিম্ফোমা ক্যান্সার ১১৭৭ (৩.৩%), কলোরেক্টাল ক্যান্সার ১০৫৪ (৩.০%), মুখের ক্যান্সার ৮৮৪ (২.৫%) ও পিত্তথলী ক্যান্সার ৪৮৫ (১.৪)। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিবেদনের তথ্য থেকে দেখা গেছে যে নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বলেছেন, সরকার ২০২২ সালের মধ্যে আট বিভাগের প্রতিটিতে একটি করে ১৫ তলা ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এই হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার, কিডনি এবং হৃদরোগের চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে কমপক্ষে ৩০০ শয্যা থাকবে। বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার দরকার হবে না।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর এক তৃতীয়াংশই কৃষক

প্রকাশিত : ১২:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এর মূলকারণ। সরকারি ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়।

প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, “জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ অবধি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) বহির্বিভাগে ৭৬ হাজার ৫৪৩ জন নতুন রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং এগুলো চূড়ান্ত বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কৃষকদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক।

এনআইসিআরএইচে ২০১৫ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের তালিকায় ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে এ হার ছিলো ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে তাদের অসচেতনতার বিষয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) নীতিমালার পরামর্শগুলো না মানাই মূলকারণ।

এছাড়া তারা মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশক অনুপ্রবেশ রোধের কোনো ব্যবস্থা না নেয়াও ক্যান্সার প্রাদুর্ভাবের মূলকারণ। এই কৃষকরা কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়াই রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফলে মারাত্মক এবং ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধী রোগ সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। এ কারণে ক্যান্সার ছাড়াও কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। তাছাড়া পরিবেশের ওপর একটা বিরুপ প্রভাব তো আছেই।

এছাড়া ধূমপায়ীদের সংখ্যা ও বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে। গত তিন বছরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ভাগ বেড়েছে বলে সম্প্রতি হাসপাতালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে। “জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত মোট আক্রান্তদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত মোট ৫ হাজার ৮৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৮৩, যা মাত্র তিন বছরে প্রায় ২০০ ভাগ বেড়েছে। পুরুষদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের হারই ছিল বেশি। এরপর নারীদের স্তন ক্যান্সারের হার। ২৪.৭ ভাগ পুরুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং নারী ছিলেন ৫.২ ভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪ হাজার ৯৯৮ জন স্তন, ২ হাজার ৭১৯ জন জরায়ু, ১ হাজার ৫৮২ জন খাদ্যনালী, ১ হাজার ৩৬৬ জন পাকস্থলি, ১ হাজার ২২৪ জন লিভার, ১ হাজার ১৭৭ জন লিম্ফোমা, ১ হাজার ৫৪ জন মলদ্বার, ৮৮৪ জন গাল/ওরাল মিউকোসা এবং ৪৮৫ জন পিত্তথলি ক্যান্সারের রোগী এনআইসিআরএইচ-এ ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৮৮৭ (১৬.৬%), স্তন ক্যান্সার ৪৯৯৪ (১৪.১%), জরায়ু ক্যান্সার ২৭১৯ (৭.৭%), খাদ্যনালী ক্যান্সার ১৫৮২ (৪.৫%), পেট ক্যান্সার ১৩৬৬ (৩.৯%), লিভার ক্যান্সার ১২২৪ (৩.৫), লিম্ফোমা ক্যান্সার ১১৭৭ (৩.৩%), কলোরেক্টাল ক্যান্সার ১০৫৪ (৩.০%), মুখের ক্যান্সার ৮৮৪ (২.৫%) ও পিত্তথলী ক্যান্সার ৪৮৫ (১.৪)। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিবেদনের তথ্য থেকে দেখা গেছে যে নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বলেছেন, সরকার ২০২২ সালের মধ্যে আট বিভাগের প্রতিটিতে একটি করে ১৫ তলা ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এই হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার, কিডনি এবং হৃদরোগের চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে কমপক্ষে ৩০০ শয্যা থাকবে। বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার দরকার হবে না।