০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেনাপোল দিয়ে কমেছে গাড়ি আমদানি

করোনার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কমেছে গাড়ি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। কারণ, রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ আসতো উচ্চ শুল্কযুক্ত গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি থেকে। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। বেনাপোল কাস্টম হাউজে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ৩৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল তিন হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৬ টাকা মূল্যের তিন লাখ ৫৮ হাজার ৭২৮ পিস। আর মোটর পার্টস আমদানি হয়েছে আট কোটি ৪৩ লাখ ৭৮২ দশমিক ৯৭ কেজি। যার মূল্য ২১৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৫ টাকা। এরমধ্যে ২০১৬ সালে চেসিস আমদানি হয়েছে ৭৯ হাজার ৭১৪ পিস, মোটর পার্টস এক কোটি ৪১ লাখ ২৪৪ দশমিক ৯৪ কেজি। ২০১৭ সালে চেসিস এসেছে ৯১ হাজার ৪৮১ পিস, মোটর পার্টস এক কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৯৭ কেজি। ২০১৮ সালে চেসিস আসে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭১ পিস। মোটর পার্টস এসেছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ৩২৩ দশমিক ৬৪ কেজি। ২০১৯ সালে গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার ৩২০ পিস, আর মোটর পার্টস এসেছে এক কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১০ দশমিক ২৬ কেজি। তবে গেলো ২০২০ সালে চেসিস আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ২৪২ পিস, আর মোটর পার্টস আমদানি করা হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৭ দশমিক ১৬ কেজি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৪ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২২০ দশমিক ৮৪ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ছয় মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে। এটিই স্বাভাবিক। বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, করোনার কারণে গাড়ির ব্যবসা মন্দা থাকায় চেসিস আমদানি বেশি কমেছে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, করোনার কারণে সব ব্যবসায় ধস। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ির ব্যবসায়। কারণ, মানুষের কাছে নগদ টাকার প্রবাহ বেশি থাকলে তখন তারা গাড়ি কিনতে ও পার্টস বদলাতে উৎসাহী হন। আবার বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কারণে অনেকে বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে দেশে ব্যবসায় মন্দা থাকায় গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে চলতি বছর আশা করা হচ্ছে আমদানি স্বাভাবিক হবে। আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন। আমরা বন্দরের পরিধি বাড়াতে চিঠি দিয়েছি। বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে বন্দর দিয়ে আমদানির সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

ট্যাগ :

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে 

বেনাপোল দিয়ে কমেছে গাড়ি আমদানি

প্রকাশিত : ১২:০১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

করোনার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কমেছে গাড়ি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। কারণ, রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ আসতো উচ্চ শুল্কযুক্ত গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি থেকে। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। বেনাপোল কাস্টম হাউজে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ৩৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল তিন হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৬ টাকা মূল্যের তিন লাখ ৫৮ হাজার ৭২৮ পিস। আর মোটর পার্টস আমদানি হয়েছে আট কোটি ৪৩ লাখ ৭৮২ দশমিক ৯৭ কেজি। যার মূল্য ২১৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৫ টাকা। এরমধ্যে ২০১৬ সালে চেসিস আমদানি হয়েছে ৭৯ হাজার ৭১৪ পিস, মোটর পার্টস এক কোটি ৪১ লাখ ২৪৪ দশমিক ৯৪ কেজি। ২০১৭ সালে চেসিস এসেছে ৯১ হাজার ৪৮১ পিস, মোটর পার্টস এক কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৯৭ কেজি। ২০১৮ সালে চেসিস আসে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭১ পিস। মোটর পার্টস এসেছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ৩২৩ দশমিক ৬৪ কেজি। ২০১৯ সালে গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার ৩২০ পিস, আর মোটর পার্টস এসেছে এক কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১০ দশমিক ২৬ কেজি। তবে গেলো ২০২০ সালে চেসিস আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ২৪২ পিস, আর মোটর পার্টস আমদানি করা হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৭ দশমিক ১৬ কেজি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৪ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২২০ দশমিক ৮৪ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ছয় মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে। এটিই স্বাভাবিক। বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, করোনার কারণে গাড়ির ব্যবসা মন্দা থাকায় চেসিস আমদানি বেশি কমেছে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, করোনার কারণে সব ব্যবসায় ধস। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ির ব্যবসায়। কারণ, মানুষের কাছে নগদ টাকার প্রবাহ বেশি থাকলে তখন তারা গাড়ি কিনতে ও পার্টস বদলাতে উৎসাহী হন। আবার বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কারণে অনেকে বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে দেশে ব্যবসায় মন্দা থাকায় গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে চলতি বছর আশা করা হচ্ছে আমদানি স্বাভাবিক হবে। আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন। আমরা বন্দরের পরিধি বাড়াতে চিঠি দিয়েছি। বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে বন্দর দিয়ে আমদানির সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।