রবিবার (৩১মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় ফলাফল পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীরা আনন্দে মেতেছে আর অন্যদিকে আশানুরূপ ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে অনেক শিক্ষার্থী মৃত্যুর চেষ্টা করেছে। আবার অনেকে বেঁছে নিয়েছে আত্মহননের পথও।
এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ায় ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলাতে মোট ৮জনের মৃত্যুর খবর মিডিয়া থেকে জানা গিয়েছে।
শুধু এবছরই নয় এমন দুঃসংবাদ প্রতি বছরই আমাদের দেখতে হয়।
কিন্তু কেন এসব শিক্ষার্থীরা সমাধান না খুঁজেই আত্মহননের পথ বেছে নেয়? আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি? আমরা কি এর কারণ খুঁজতে চেষ্টা করেছি?
একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ভালো ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যতে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বা ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে। এটা শুধু তাঁরই স্বপ্ন নয় স্বপ্ন দেখে বাবা- মা, সমাজের মানুষজন।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি পরীক্ষায় যখন তার কাক্ষিত সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয় সেটা কি আমরা কিংবা সমাজ মেনে নিতে পারি কিংবা তাকে আত্ববিশ্বাস বাড়াতে পাশে থাকি?
আমরা মনে করি পরীক্ষার ফলাফলই মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাধ্যম। আমাদের সমাজ ও পরিবার সবসময় পরীক্ষার ফলাফল দিয়েই সন্তানের মেধা যাচাই করি।
যখন ছেলে কিংবা মেয়ে ভালো ফলাফল করে তাকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠা মানুষের অভাব থাকেনা।
কিন্তু ফলাফল খারাপ করলেই তাকে নিয়ে সমাজের মানুষজনের সমালোচনার শেষ থাকেনা।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিতেই হবে এমন নানা চাপে রাখি ।
নয়তো ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করি না। অনেক ভালো শিক্ষার্থী হওয়া সত্বেও পরীক্ষায় নানা ত্রুটির কারণে আশানুরূপ ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়।
ফলাফল হাতে পেয়ে তারা সেটা মেনে নিতে পারেনা। তার চেয়ে দূর্বল শিক্ষার্থী গুলো তার চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে এমন আক্রুশ তাকে ঘিরে ধরে। যার ফলে এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে তখন বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
কিন্তু কেন? জীবনের চেয়ে কি জিপিএ মূল্য বেশী? ফলাফল ভালো না হলে জীবনে কিছু করা যাবেনা এমন শিক্ষা কি তাদের মনের ভেতরে গেঁথে দিয়েছি আমরা।
এখন ভালো কিছু হয়নি তো কি ভবিষ্যতে আরো ভালো ফলাফল করতে পারবে এসব কি তাদের বোঝাতে পারিনি।
আমরা কি তাহলে শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন শুধু ”জিপিএ” দিয়েই হয়না বিষয়গুলো বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।
স্বপ্ন দেখতে শিখাতে পারিনি। সন্তানদের মেতে উঠতে বলেছি অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। এক জনের তুলনায় অন্যজন একটু ফলাফল খারাপ করলে সে শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কি শিক্ষার্থীদের মাঝে “জিপিএ- ফাইভ” পেতে মরিয়া করে তুলেছে। তারা কি বুঝাতে ব্যর্থ ফলাফলই জীবনের মূখ্য নয়! আমার দেখা অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফলাফল খারাপ সত্বেও তারা হতাশ হয়নি।
সাফল্যের জন্য সাধনা করেছে,পরিশ্রম করেছে দিনরাত। ফলাফল খারাপ স্বত্বেও জায়গা করে নিয়েছে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। ভালো ভালো সেক্টরে চাকরী করছে।
দিনশেষে তারা সফল হয়েছে। তবে কি এসব আমাদের নজরে আসে নি? যেসকল শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেঁছে নিয়েছে তারা ভবিষ্যতে এই ফলাফল নিয়েও ভালো কিছু করতে পারতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিয়ে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতে পারতো। আসলে আমরা তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের মাথায় রাখা দরকার ভালো ফলাফল সব জীবনের সব কিছু নয়।
যেসব কারণে শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর মুখে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে সেসকল কারণ বের করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে নয়তো ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে।
সকল পরিবারের উচিত হবে সন্তানের পাশে থেকে নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখানো। ফলাফল ভালো করার জন্য উৎসাহিত করা কিন্তু ফলাফল নিয়ে তাকে চাপ না দেয়া।
সমাজের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের মাথায় “জিপিএ” নামক বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে প্রকৃত জ্ঞাণ অন্বেষনে উদ্ধুদ্ধ করা। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে একটি পরীক্ষার ফলাফলই মুখ্য না।
জীবনে সফলতা ব্যর্থতা আসবেই মানুষ নানান সমালোচনা করবেই তবে থেমে থাকা চলবেনা। নিজের আপন শক্তিতে সাফল্যের পেছনে দৌঁড়াতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে ছোট-ছোট ব্যর্থতা গুলোকে ভুলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করা। নিজেকে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে জীবনে সফল হওয়া যায়। চেষ্টা করতে হবে হতাশা কে জয় করে নিজেকে মেলে ধরতে নতুন ভাবে।
লেখক: উমর ফারুক সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়