করোনাকালে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশও। অনুন্নত দেশের তকমা হটিয়ে এর মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। গত ক’বছরে তাক লাগানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের গ্লোবাল ক্রাইসিস সেটাকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আশার আলো নেভেনি কখনোই। আজকের এই যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এর কথা আসলেই অবিচ্ছেদ্যভাবে আসে একটি নাম। তিনি বাঙালি জাতির স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ নামের এই দেশটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছিল।
আর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন আর জাতির জনক হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় মাধ্যম আওয়ামী লীগের। মূলত এই দলের নেতৃত্ব দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই ‘বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ’ এই তিনটি নাম বলা চলে অবিচ্ছেদ্য। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন পতাকা।
তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গণমানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগের আজ প্রতিষ্ঠার দিন। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে কোন প্রেক্ষিতে আজকের বাংলাদেশের জন্ম।
আর সেই জন্মে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর কী অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের ট্র্যাজিডির পর থমকে গিয়েছিল দেশ। এরপর আবার ম্যাজিক। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেল হারিয়ে ফেলা পথের দিশা। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তাই সবক্ষেত্রেই ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশে প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি বিশ^মঞ্চেও সমান সমাদৃত। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তোরণ- এর প্রতিটি অর্জনের সংগ্রাম-লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী একটিই রাজনৈতিক দল, তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই দল পেয়েছে সুরম্য ১০তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দলটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী সাহসী নেতৃত্বের কারণে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন আর জনপ্রিয়তায় প্রতিপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন সংকটের মুখে। বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য।
তবে দলটির প্রতিষ্ঠাপর্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সাফল্য এতো সহজ ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কারিগররা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দু’দিন আগে তাকে রোজ গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়। মওলানা ভাসানীকে বোরকা পরিয়ে (মতান্তরে কম্বল জড়িয়ে) ঘোড়ার গাড়িতে করে রোজ গার্ডেনে নিয়ে যান সংগঠনটি দাঁড় করানোর অনুঘটক শওকত আলী।
এরপর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে।
সম্মেলনে দলের নাম দেয়া হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হয়, দীর্ঘ ৭১ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহাল থাকেন।
বাঙালি জাতির সকল মহতী অর্জনের নেতৃত্বে ছিল জনগণের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, যার মহানায়ক ছিলেন রাজনীতির মহামানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাব-ধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে। জন্মলাভের পর ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে টানা তৃতীয়বারের মতো তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ এখনো রাষ্ট্রক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম নিশ্চিত করেছেন তেমনি সেই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাঙালির প্রাণের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর নিভে গিয়েছিল সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার। কিন্তু কে জানতো বঙ্গবন্ধু ঠিক রেখে গেছেন তার যোগ্য উত্তরসূরি।
১৯৭৫ এর সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। কিন্তু ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখনও চেনা ভঙ্গিমায়। অল্প সময়ের মধ্যেই নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। নতুন করে দেশ গড়ার স্বপ্নে বলীয়ান হওয় ওঠেন।
তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৮১ সালে ফেব্রুয়ারির ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে সে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরেরই ১৭ মে তারিখে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সে হিসেবে ১৭ মে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
ওই দিনটি ছিল রোববার। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নামে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই সময় উন্মত্ত জনতা সামরিক শাসক জিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে।
অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেদিনও শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। এরপর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন শেখ হাসিনা। বারবার প্রাণ নাশের চেষ্টা হলেও কখনোই থামেননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। সফল সংগ্রামে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে বিজয়ী করে তিনি সরকার গঠন করেন। শত প্রতিকূলতা জয় করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর আরো দুই দফা আসে নিরঙ্কুশ বিজয়।
পিতামাতা হারা নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত অবস্থায় জনগণের ডাকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, মানবিক মানুষ, বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক, ৩ বারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে এসেই আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার কাজে মনোঃসংযোগ ঘটান। হতাশাগ্রস্ত কর্মীদের উজ্জীবিত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য দেশব্যাপী সফর শুরু করে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি ফিরেছিলেন বলেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের গতিপথ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের রাজনীতিতে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সাধারণ মানুষের দাবি দাওয়া আদায়ে বরাবরের মতোই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গণমানুষের দল হিসেবে তৃণমূল হতে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও সুদৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে দলটি।
আমাদের গৌরবের ইতিহাস মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে দলটির দায়িত্বশীল ও সংগ্রামী ভূমিকা মুক্তিকামী মানুষদের অনুপ্রেরণা হয়ে আন্দোলিত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও যৌক্তিক দাবি আদায়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
স্বৈরতন্ত্রের বিলুপ্তিসহ যুদ্ধাপরাধের বিচার ও অন্যান্য প্রত্যেকটি ইতিবাচক আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যথোপযুক্ত ভূমিকা জনগণের নিকট নিজেদের সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির ইতিহাস, বাংলার সংস্কৃতি ও সভ্যতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, মুক্তবুদ্ধির চর্চায় দলটি সৃষ্টিলগ্ন থেকেই নৈপুণ্য দেখিয়েছে।
বর্তমান সময়েও ছিটমহলের সুরাহাকরণ, সমুদ্র বিজয় ইত্যাদি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের নিকট দল হিসেবে যৌক্তিকতা দেখিয়ে চলেছে। অন্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগের পার্থক্য ও দূরদর্শিতার স্পষ্ট ছাপও রাখতে সক্ষম হয়েছে দলটি।
তবে শেখ হাসিনার এ পথ মসৃণ ছিল না, কন্টকাকীর্ণ পথকে মাড়িয়েই তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। অসংখ্যবার আক্রমণ হয়েছে তার ওপর, মৌলবাদী গোষ্ঠী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে সোচ্চার এখনো। তদুপরি তিনি নিরলস সংগ্রাম করে চলেছেন দেশের জন্য।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস হামলা সংঘটিত হয়েছিল খুনি চক্রদের মদদে। মূলত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই মৌলবাদীদের স্বার্থ রক্ষা হয়। কিন্তু সেদিন সৃষ্টিকর্তার মহিমায় বেঁচে যান রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যে মানবঢাল তৈরি করেছিলেন সেটিও বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ইতিহাস।
মানুষের ভালোবাসাই শেখ হাসিনার কাছে অমূল্য সম্পদ। তিনি এ বিষয়টি বিভিন্ন আলোচনায় জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। ওই দিন নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি না করলে শেখ হাসিনার কী হতো সেটা বলা মুশকিল, এখনো তিনি কানের যন্ত্রণায় ভুগছেন। আবার ওই দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া কর্মীরা তাদের নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধার জায়গাটা দেখাতে পেরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও তার দলের নেতাকর্মী সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, দলের তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রেসিডিয়ামের সদস্যের প্রতি নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। বিপদে আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
মানবিক মানুষ হিসেবে শেখ হাসিনা উপমহাদেশীয় তথা বৈশ্বিক রাজনীতিতে অনন্য। সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে তিনি মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য কোন রাষ্ট্রপ্রধান কি সহসাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন? এখানেই শেখ হাসিনা অনন্য। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি পদকে ভূষিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারের সরকারকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর ব্যাপারেও তৎপর।
২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরে আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও সাহসী সিদ্ধান্তে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে অগ্রগতির সোপানে পা ফেলেছে বাংলাদেশ। সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালিত হলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। উন্নয়নের অনেকগুলো সূচকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর থেকে অনেকাংশে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে আশার সঞ্চার করেছে, বাংলাদেশকে ফলো করছে বহির্বিশ্ব।
বর্তমান সরকারের গ্রহণীয় উদ্যোগ বিশেষ করে মেগা প্রকল্পের তড়িৎ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীল বিশ্বে কর্মদক্ষতার গুণে আলাদা বিশেষত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক তাদের সংযুক্তি প্রত্যাহার করে নেয় পদ্মা সেতু থেকে।
দৃঢ়চিত্তের অধিকারী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পদ্মা সেতু এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হতে চলেছে, ইতোমধ্যে সেতুর উন্নয়ন কাজের অনেকাংশই সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় বিচার সালিশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি। তাছাড়া, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কোন অর্থ ছাড় দেয়নি বিশ্বব্যাংক। তদুপরি দুর্নীতির অভিযোগ করাটা কোনোভাবেই মানানসই ছিল না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়েও শেখ হাসিনা প্রবল চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বৈশ্বিক নেতাদের অন্যায্য অনুরোধকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত থেকে এক পা সরে আসেননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। বিচক্ষণ এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শেখ হাসিনা উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজের নেতৃত্বগুণকে বিকাশ করেছেন।
এমনও হয়েছে অন্য দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শেখ হাসিনার সাথে সখ্যতার চিত্র তুলে ধরেছেন প্রার্থীরা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও শেখ হাসিনার গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেখ হাসিনাও নিজস্ব সক্ষমতা এবং প্রজ্ঞার সম্মিলন ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংস্থা থেকে স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ও উপাধি পেয়েছেন। এ সবই শেখ হাসিনার অর্জন। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের জন্ম না হলে বাংলাদেশের ইতিহাস যেমন ভিন্ন হতো, তেমনি শেখ হাসিনা ম্যাজিক ছাড়া বাংলাদেশের গতিপথও পাল্টে যেত।
মেহেদী হাসান বাবু, সম্পাদক ও প্রকাশক, আজকের বিজনেস বাংলাদেশ
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক


























