করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের দেশগুলো যখন পর্যুদস্ত, অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ঠিক সেই সময় এশিয়ার অন্যতম দুই পরাশক্তি ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। ১৬ জুন ভারত-চীনের সীমান্ত সংঘর্ষে ভারত তাদের ১৬ বিহার রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেক সন্তোষ বাবুসহ ২০ সৈনিক নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
গুরুতর আহত হয়েছে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৭৬ জন সৈনিক। সংঘর্ষটি হয়েছে হিমালয় পর্বতমালার পশ্চিম প্রান্তে ১২ হাজার ২০০ ফুট ওপরে লাদাখ তথা আকসাই চীনের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্টোল( এলএসি) বরাবর গালওয়ান ভ্যালিতে।
সংষর্ঘে ভারতের ১০ সেনাকে আটকও করে চীন, পরে তাঁদের আবার ফেরত দিয়েছে তাঁরা। এদিকে ভারতীয় সূত্রগুলোও দাবি করে চীনের ৪৩জন সৈনিকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও এর কোন নিরপেক্ষ প্রমাণ মেলেনি।
লাদাখে ভারত-চীনের এই সংঘর্ষের অনেকগুলো কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। সীমান্ত দ্বন্দ্বের পিছনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মাখামাখির বিষয়টা তুলে ধরেছেন অনেক বিশ্লেষক। তাঁদের মতে এ অঞ্চলে দুটি দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কে ভালো চোখে দেখছে না চীন।
মোদি সরকার যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছো তাতে স্বস্তিতে নেই চীন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল এবং পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ভারত যেভাবে ঝুঁকে পড়েছে, তাতে চীন ভারতকে চীন বিরোধী জোটের অগ্রসৈনিক ভাবছে। ভারত এরই মধ্যে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্মিলিত নৌমহড়ায় অংশ নেয়, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল
বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই মহড়ার পর চীন ভারতের ব্যাপারে আরো সতর্ক হয়। তদুপরি ভারত যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের বিমান ঘাঁটিতে যৌথ মহড়াও দেয়। সর্বশেষ কয়েক সপ্তাহ আগে ভারত অস্ট্রেলিয়ার সাথে মিউচুয়াল লসিস্টিক সাপোর্ট অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে। এর আওতায় দেশদুটি তাদের নৌঘাঁটি বিভিন্ন সামরিক কারণে ব্যবহার করতে পারবে।
অস্ট্রেলিয়াও চীন বিরোধী ক্যাম্পে রয়েছে। করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে চীনা ভাইরাস বলে অবিহিত করেন। অভিযোগ করেন ভাইরাসটি চীনের তৈরি। এসময় তিনি চীনের অভ্যন্তরে তদন্ত প্রতিনিধি পাঠিয়ে গবেষণা করতে আহ্বান জানান।সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াও।
এছাড়াও বছর খানেক আগে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন প্রাণের বিনিময়ে হলেও তিনি পুরো কাশ্মীর দখল করবেন। কাশ্মীর বলতে তিনি পাকিস্তানি অধ্যুষিত আজাদী কাশ্মীর, গিলগিত, বাল্টিস্তানসহ আকসাই চীন দখলের হুমকি দেন।
চীনের পক্ষে হুমকি মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং কাশ্মীর আর লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা করে ইউনিয়ন টেরিটরি ঘোষণাও চীনকে ক্ষুদ্ধ করেছে।
দৃশ্যত এ ঘটনার মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে ভারতকে ভূরাজনৈতিকভাবে কোণঠাসার নাীতিতে অগ্রসর হচ্ছে চীন। চীন চাইছে ভারতকে চাপে রেখে এ অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত রাখা।
এজন্য চীন ভারতের প্রতিবেশি দেশ নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, আফগানিস্তান, ভুটান কে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিকভাবে কৌশলগত সুবিধা দিয়ে ভারতবলয় থেকে বেড় করে চীন বলয়ে নিতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের তাঁরা দৃঢ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আর পাকিস্তান তো তাদের পরীক্ষিত মিত্রই । ভারতে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের মূল্যায়ন করলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
নেপালের ভারত বিরোধীতা:
ভারতের দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত বন্ধু ছিল নেপাল। কিন্তু ভারতের দাদাগিরি, আগ্রাসী মনোভাব, সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত ইত্যাতি কারণে ভারত বলয় থেকে বেড় হয়ে চীন বলয়ে ঢুকে পড়েছে নেপাল।
সাম্প্রতি ভারত তাঁদের সংশোধিত নতুন মানচিত্রে বিতর্কিত ভূখন্ড লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়াধুনা নিজেদের মানচিত্রে দেখালে বিক্ষোভে ফেটে পরে নেপাল। পরবর্তীতে নেপাল নতুন আইন প্রণয়ন করে পার্লামেন্টে পাশ করে অঞ্চল তিনটিকে নিজেদের মানচিত্রে স্থান দিয়ে নেয়। নেপালের নতুন মানচিত্রের ভিত্তি হচ্ছে ১৮১৬ সালের সুগলি চুক্তি। কিন্তু ভারত এটা মানে না।
ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরে কয়েক বছর আগে নেপালে নতুন সংবিধান অনুমোদন করলে। এসময় সংবিধান বাতিলের বাদীতে ভারতে ঘেঁষা মদাহশিরা আন্দোলনে নামলে দিল্লি প্রত্যক্ষ -পরোক্ষভাবে তাদের সমর্থন দেয়।নেপালের ওপর অঘোষিত জ্বালানি অবরোধ করে।
ফলে নেপালি জনগণ ভারত বিরোধীতায় নেমে পরে । আর এই সুযোগটাই লুফে নেয় চীন। নেপালের সাথে জ্বালানি চুক্তি করে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত রাস্তা মেরামত করে জ্বালানী পাঠায় চীন। নেপালের এই ভারত বিরোধীতা ভারতের নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । ভবিষ্যতে চীন- ভারত সীমান্ত সংঘাতে বিশেষ করে নেপালের নামুলা গিরিপথ অঞ্চলে নেপাল বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে ।
ভারত -পাকিস্তানের চিরশত্রুতা:
দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশি দেশ ভারত পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। দেশদুটি এপর্যন্ত তিন বার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৭,৬৫ সালে কাশ্মির ইস্যুতে ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ইস্যুতে। এছাড়াও দুই দেশ প্রায়ই সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পরে।
বিরাজ করে যুদ্ধাবস্থা। সর্বশেষ পুলওয়ামাতে এক জঙ্গি হামলায় ভারতের ৪০ জন আধাসামরিক পুলিশ সদস্য নিহত হলে পাকিস্থান শাসিত আজাদী কাশ্মীরের বালাকোটে সার্জিক্যাল স্টাইকরেট চালায় ভারতে। যদিও এই স্টাইকরেট কে পুঁজি করে নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে জয়লাভ করে মোদী।
কিন্তু বেশি লাভবান হতে পারেনি ভারত। দুটি জঙ্গী বিমানকে ভূপাতিত করে পাকিস্তান ও এক বিমানচালক গ্রেফতার করে তাঁরা।
অন্যদিকে চীনের সাথে সবসময়ই ভালো সম্পর্ক পাকিস্তানের। চীনের পরীক্ষিত বন্ধু পাকিস্তান। পাকিস্তানে অবকাঠামো, সামরিক, বাণিজ্যিক খাতে চীনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের সাথে অনেক গোপন-প্রকাশিত কৌশলগত সামরিক চুক্তি রয়েছে চীনের। যা ভারতের জন্য সবসময়ই হুমকির।
হাম্বানটোটা বন্দর, চীনের ফাঁদে শ্রীলংকা:
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলংকার দক্ষিণ -পূর্ব উপকূলের হাম্বানটোটা বন্দর এবং বন্দর সংলগ্ন ১৫ হাজার একর জমি চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবালকে ৯৯ বছরের লিজ দেয় শ্রীলংকা সরকার।
এই লিজ দেবার পিছনে চীনের আগ্রাসী উচ্চাকাঙ্ক্ষা; ভারত মহাসাগরের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় চীন।
এলটিটি গেরিলাদের দমন করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশ্বদরবারে মাহিন্দ্রা রাজাপাক্ষের শ্রীলংকা সরকার যখন একঘরে হয়ে পড়ে, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় চীন।
২০০৯ সালে শ্রীলংকার ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে দেশটির অবকাঠামো খাতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে চীন। বর্তমানে শ্রীলংকার কাছে চীনের পাওনা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারে।
শ্রীলংকায় চীনের যেমন বড় বিনিয়োগ রয়েছে, তেমনি সরকার ব্যবস্থায়ও চীন প্রভাব রয়েছে অপরিসীম। চীনের হাম্বানটোটা বন্দর নিয়ন্ত্রণে নেয়া ভারতের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা এই বন্দরের মাধ্যমে চীন ভারতের উপকূল হতে মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার দূরেই নিজেদের রণতরি রাখার একটি জায়গা নিশ্চিত করেছে।
ভারতের ক্রমাগত আপত্তির মুখে শ্রীলংকা সরকার চীনের সাথে চুক্তিতে একটি ধারা যুক্ত করেছে। যেখানে বলা হয়েছে শ্রীলংকা সরকারের অনুমতি ব্যতিত বন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই চুক্তি আদতে চীনকে কতটা ঠেকাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
মালদ্বীপ -চীন সম্পর্ক :
২০১৩ সালে নির্বাচনে আব্দুল্লাহ ইয়ামিন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ভারত ও পশ্চিমাদের প্রভাব বলয় থেকে সরে গিয়ে চীনে ঘনিষ্ঠ হওয়ার উদ্যোগ নেন।
ক্ষমতায় এসেই তিনি চীনের সঙ্গে একাধিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের মালদ্বীপ সফরকালে প্রধান বিমানবন্দর নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওই সময় ৬০০ মিলিয়ন আরএমবি( চাইনিজ মুদ্রা) অবকাঠামো উন্নয়ন, ২০ মিলিয়ন আরএমবি সামরিক সহযোগীতা ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগীতার আওতায় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য ২০ মিলিয়ন আরএমবি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
২০১৭ সালে প্রায় তিন লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন। রাজধানী মালের কাছে একটি দ্বীপ অবকাশযাপন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ বছরের জন্য লিজ নেয় চীন। মালদ্বীপের সাথে চীনের এই মাখামাখি ভালোভাবে নিতে পারেনি।
চীনের এই মেরিটাইম সিল্ক রোডের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সামরিক উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্যিক স্বার্থের আড়ালে ভারত মহাসাগরে ভারতকে ঘিরে ফেলা। যদিও সর্বশেষ নির্বাচনে চীনাপন্থি আব্দুল্লাহ ইয়ামিন পতন হয়েছে। তাতে ভারত কিছুটা স্বস্থি পেলেও তা কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়।
ভুটান -চীন সম্পর্ক:
২০১৭ সালে ভারত, ভুটান ও চীন সীমান্তের দোকালাম বিতর্কিত ভূমি নিয়ে ৭২ দিনের সংকট চললেও ভুটানের সাথে চীনের সম্পর্ক খারাপ নয়। তবে চীন ভুটানকে ভারতের কামানের গোলা না হওয়ার জন্য হুশিয়ারি দিয়েছিল। যদিও সেসময় ভারত ভুটানের পক্ষে সীমান্তে সেনা সমাবেশ করেছিল।
ভুটানের বাণিজ্যেক, সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও চীন চেষ্টা চালাচ্ছে ভুটানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের। চীনের সঙ্গে ভুটানের কোন কূটনৈতিক সংযোগ না থাকলে বেইজিং কর্তৃপক্ষ যে নানা ভাবে সম্পর্ক গড়তে চাইছে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এই পটভূমিতে হিমালয় পার্বত্য দেশ ভুটানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতের।
বাংলাদেশের ভারত-চীন সম্পর্কের ভারসাম্যতা :
বাংলাদেশ ভারতের অকৃত্তিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেভাবে ভূমিকা রেখেছিল তা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ভাবা হয় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের সোনালী সময় পাড় করছে ।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে আত্মিক, রাজনৈতিক কখনোবা নিরাপত্তার প্রশ্নে। এতো ভালো সম্পর্কে থাকলেও বেশ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশি নেতৃত্বকে অস্বস্থিতে ফেলেছে ভারত। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা, নদীর পানি বন্টন হিস্যা, সাম্প্রদায়িকতা।
গত ১০ বছরে ২৯৪ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত। ভারতের সাথে দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও ৭৪৫ কোটি ডলারের । এছাড়াও এনআরসি, সিএ আইন পাশ করলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন, যা ভারতীয় গণমাধ্যম বেশ আলোচিত ।
যদিও বাংলাদেশ এটাকে বার বার ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে আসছে।৭১’র চুক্তি যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর বিনিময়ে ভারত যেভাবে নোংরা হস্তক্ষেপ করে তা এদেশের তরুণ প্রজন্ম প্রচন্ড ঘৃণা করে।
অন্যদিকে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে চীনের ২৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে । দেশের বড় বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলি সেতুর নিজ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, একটি সার কারখানাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কও দৃঢ়। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশের পণ্যসমূহের ৯৭% শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও চীনকে প্রাধান্য দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের যেদুটি সাবমেরিন রয়েছে তা চীন থেকেই ক্রয় করা। ২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারত- চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রেখে চলার চেষ্টা করে আসছে।
এছাড়াও মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে চীন। সেদেশের সামরিক জান্তার ওপরও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে চীনের। আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে শান্তিচুক্তি করায় সেখানে প্রভাব বাড়বে পাকিস্তানের। আর পাকিস্তানের প্রভাব বাড়া মানে ছড়িঘোরাবে চীন। আফগানিস্তানের অবকাঠামোখাতে চীনের বিনিয়োগও কম নয়।
দক্ষিণ এশিয়া ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বেড় হয়ে যাওয়ার দায় ভারতেরই।কোন প্রতিবেশির সাথেই শান্তিপূর্ণ বসবাসের মানসিক ইচ্ছা নেই ভারতের। বিকল্প হিসেবে চীনকে পেয়ে ভারতের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সবাই। ভারতকে মনে রাখতে হবে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ কোন দাদাগিরি, আগ্রাসী, সাম্রাজ্যবাদ পছন্দ করেনা।
গালওয়ান ভ্যালিতে সীমান্ত সংকটের নি: সন্দেহে চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিবে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পাশে কেউ নেই। ভারতের কাছ থেকে একটু সরে গেলেই বাংলাদেশের সামনে চীনের পক্ষ থেকে বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। পরিস্থিতি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় সময়টা বোধ হয় চীনের, ভারতের নয়।
লেখক- সোহেল রানা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়