০৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

ব্যক্ত-অব্যক্ত স্বপ্নের কথকতা

পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা ধর্ম-গোত্র, ধ্যান-ধারণা অথবা ধরণের মানুষ। প্রতিটি মানুষ প্রতিনিয়ত আপন বলয়ে ছুটে চলেছে । কেউ হয়তো বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টায় লিপ্ত, তবু দিনশেষে সেই বলয় পেরিয়ে নতুন বলয়ে আত্মসমর্পণ করাই হয়ে উঠে গূঢ় বাস্তবতা। এই বলয় নিয়ে আলাদা করে বলবো নাহয় আরেকদিন। আজ কথা হোক কিছু স্বপ্ন নিয়ে। যে স্বপ্নগুলো হয়তো মানুষকে দিয়ে যাবে বেঁচে থাকার বার্তা। যে স্বপ্ন নিয়ে পথ চলছে হাজারো জীবন।

কেউ হয়তো ছোট্ট কিছুর প্রত্যাশায় জীবন কাটিয়ে দেয়। আসলেই কি খুব ছোট? তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আপনার-আমার কাছে যা নিতান্তই সাধারণ, ঠিক তা-ই অন্য কারো কাছে অমূল্য রতন৷ একটি গাভী নিয়েও কেউ স্বপ্ন বুনে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্বল খুঁজে। কারো জন্য হয়তো সহস্র স্বর্ণমুদ্রাও অখুশির কারণ হয়। শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরে এসে যে মানুষগুলো এখন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অবজ্ঞাকে যারা বিস্ময়ে পরিণত করেছে, তারাও স্বপ্নের পেছনেই ছুটেছিল। না, একটু ভুল বললাম হয়তো!

ছুটেছিল না, এখনো ছুটে চলেছে প্রতি মুহূর্তে। সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক স্বপ্ন কখনো শেষ হতে নেই। পুরনো ইচ্ছে নতুনে মিশিয়ে আরও বড় কিছুর পানে ছুটবে সে। আকাঙ্ক্ষার বিষয় হয়তো পাল্টে যাবে, তবু প্রথম প্রেমের মতো কিংবা আরও ভীষণ সজীবতায় মনের কোণে রয়ে যাবে সত্যরূপে। ঐ যে চৌরাস্তার বদ্ধ পাগলটা, যাকে লোকে উন্মাদ, দিনদুনিয়ার বাইরের মানুষ বলে জানে; তারও কিছু স্বপ্ন আছে, আলাদা একটা জগত আছে। রেলস্টেশনে চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটানো বুড়োটার খবর জানেন?

সে কী চায়, কী পায়, কী সম্বল করে বেঁচে থাকে তা কি বুঝতে পারেন? ইটভাটায় কাঠফাটা রোদ্দুরে গা পুড়িয়ে, ঘাম শুকিয়ে ইট পুড়ানো যার কাজ; সেও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে বর্তমান নিয়ে, ভবিষ্যতের আশা বুনে। তাই যখন শুনি সাধারণ কোনো কারণকে বড় করে ভেবে কেউ অসুখী হচ্ছে, নিজের জীবন বিসর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে; তখন মোটেও মায়া হয়না।

বরং ঘৃণার বার্তা ঘুরে বেড়ায় আমার মননজুড়ে। এ পৃথিবীতে প্রতিটি স্বত্তার কিছু স্বতন্ত্র দায়িত্ব আছে। কেউ কারো মতো নয়। একজন কৃষকের সন্তানের কাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার বাবা। তাদের একে অপরের সাথে সংযোগ, পরস্পরকে ঘিরে প্রত্যাশা, দায়িত্ব সবকিছুই আলাদা। তাদের বেঁচে থাকতে হয় ঘাম ঝরিয়ে। তাদের স্বপ্ন বেড়ে উঠে তাদের মতো করে।

তাদের সুখ বসত গড়ে ফসলের মাঠ ঘিরে। বড় বড় দালানে বসে আর গাড়িতে চড়ে হয়তো বেঁচে থাকার এই আয়োজন, জীবনের কঠিন প্রয়োজন উপলব্ধি করা অসাধ্য। তবু এতোটুকু ভেবে দেখাটা অসম্ভব নয় যতটা ভেবে দেখলে বুঝতে সহজ হয়, জীবন মানেই আইফোন, ফেসবুক অথবা পাবজি নয়। এগুলো না থাকলে আপনি অপূর্ণ নন।

আমাদের যা আছে, তা নিয়ে ভালো আছি। আরও ভালো থাকার চেষ্টা করছি। কোনো কিছু না পাওয়া মানে অপ্রাপ্তি নয়। হয়তো উপযুক্ত কিছুর জন্য অপেক্ষা বৃদ্ধি মাত্র। আমি যখন এই লেখাটা লিখি তার কিছুদিন পূর্বে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একটা লেখা চোখে পড়ছিলো বারবার। ” যদি আপনার একটা ফ্রিজ থাকে, মাথার উপর ছাদ থাকে, ঘুমানোর জন্য বিছানা থাকে তবে আপনি পৃথিবীর ৭৫শতাংশ মানুষের চেয়ে বেশি সুখী! ” যারা আমার এই লেখাটা পড়ছেন, তাদের অধিকাংশেরই হয়তো এর সব কিছুই আছে।

তবু কি আপনি সুখী? যদি না হয়ে থাকেন, তবে কেন না? আসলে সুখ ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। মানুষের মনস্তত্ত্ব বেশ জটিল বিষয়। কে কীসে সুখী হয় তা বুঝা কঠিন। মানুষের চাহিদা, স্বপ্নগুলোও এর সাথেই উঠানামা করে। পারিবারিক, সামাজিকসহ নানাবিধ জটিলতা সুখ বিনষ্টের জন্য বেশ খানিকটা দায়ী। তবে স্বপ্ন দেখার অপারগতা অথবা প্রত্যাশার বাড়াবাড়িও এই অসুখের দায় এড়াতে পারে না।

এ ধরণের অসুখে না জড়াতে চাইলে নিজ অবস্থান উপভোগ করে পরিমিত বাস্তব স্বপ্ন দেখা ও তার পেছনে নিজেকে নিজেই ছুটতে উৎসাহিত করা খুব প্রয়োজন। তিলে তিলে গড়ে তোলা বহু স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়। তবে স্বপ্নভঙ্গে দুঃখ পেলেও কাতর হলে চলে না। নতুন স্বপ্ন বুনে কঠিন সংকল্পে আবারও এগিয়ে যেতে হয়, খুঁজতে হয় বলয় ভেঙ্গে নতুন পথ। সে পথে ছোট ছোট আশা নিয়ে, স্বপ্নের কৃত্রিম-অকৃত্রিম বাক্স আর বাহন বানিয়ে অবিরত হোক আমাদের পথচলা। স্বপ্ন গড়ে, স্বপ্ন গড়ায় সহায়তা করে প্রতিটি বেলা হয়ে উঠুক অনিন্দ্য-সুন্দর।

লেখক- সাফায়িত সিফাত শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগ :

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

ব্যক্ত-অব্যক্ত স্বপ্নের কথকতা

প্রকাশিত : ০৪:৫১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই ২০২০

পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা ধর্ম-গোত্র, ধ্যান-ধারণা অথবা ধরণের মানুষ। প্রতিটি মানুষ প্রতিনিয়ত আপন বলয়ে ছুটে চলেছে । কেউ হয়তো বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টায় লিপ্ত, তবু দিনশেষে সেই বলয় পেরিয়ে নতুন বলয়ে আত্মসমর্পণ করাই হয়ে উঠে গূঢ় বাস্তবতা। এই বলয় নিয়ে আলাদা করে বলবো নাহয় আরেকদিন। আজ কথা হোক কিছু স্বপ্ন নিয়ে। যে স্বপ্নগুলো হয়তো মানুষকে দিয়ে যাবে বেঁচে থাকার বার্তা। যে স্বপ্ন নিয়ে পথ চলছে হাজারো জীবন।

কেউ হয়তো ছোট্ট কিছুর প্রত্যাশায় জীবন কাটিয়ে দেয়। আসলেই কি খুব ছোট? তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আপনার-আমার কাছে যা নিতান্তই সাধারণ, ঠিক তা-ই অন্য কারো কাছে অমূল্য রতন৷ একটি গাভী নিয়েও কেউ স্বপ্ন বুনে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্বল খুঁজে। কারো জন্য হয়তো সহস্র স্বর্ণমুদ্রাও অখুশির কারণ হয়। শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরে এসে যে মানুষগুলো এখন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অবজ্ঞাকে যারা বিস্ময়ে পরিণত করেছে, তারাও স্বপ্নের পেছনেই ছুটেছিল। না, একটু ভুল বললাম হয়তো!

ছুটেছিল না, এখনো ছুটে চলেছে প্রতি মুহূর্তে। সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক স্বপ্ন কখনো শেষ হতে নেই। পুরনো ইচ্ছে নতুনে মিশিয়ে আরও বড় কিছুর পানে ছুটবে সে। আকাঙ্ক্ষার বিষয় হয়তো পাল্টে যাবে, তবু প্রথম প্রেমের মতো কিংবা আরও ভীষণ সজীবতায় মনের কোণে রয়ে যাবে সত্যরূপে। ঐ যে চৌরাস্তার বদ্ধ পাগলটা, যাকে লোকে উন্মাদ, দিনদুনিয়ার বাইরের মানুষ বলে জানে; তারও কিছু স্বপ্ন আছে, আলাদা একটা জগত আছে। রেলস্টেশনে চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটানো বুড়োটার খবর জানেন?

সে কী চায়, কী পায়, কী সম্বল করে বেঁচে থাকে তা কি বুঝতে পারেন? ইটভাটায় কাঠফাটা রোদ্দুরে গা পুড়িয়ে, ঘাম শুকিয়ে ইট পুড়ানো যার কাজ; সেও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে বর্তমান নিয়ে, ভবিষ্যতের আশা বুনে। তাই যখন শুনি সাধারণ কোনো কারণকে বড় করে ভেবে কেউ অসুখী হচ্ছে, নিজের জীবন বিসর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে; তখন মোটেও মায়া হয়না।

বরং ঘৃণার বার্তা ঘুরে বেড়ায় আমার মননজুড়ে। এ পৃথিবীতে প্রতিটি স্বত্তার কিছু স্বতন্ত্র দায়িত্ব আছে। কেউ কারো মতো নয়। একজন কৃষকের সন্তানের কাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার বাবা। তাদের একে অপরের সাথে সংযোগ, পরস্পরকে ঘিরে প্রত্যাশা, দায়িত্ব সবকিছুই আলাদা। তাদের বেঁচে থাকতে হয় ঘাম ঝরিয়ে। তাদের স্বপ্ন বেড়ে উঠে তাদের মতো করে।

তাদের সুখ বসত গড়ে ফসলের মাঠ ঘিরে। বড় বড় দালানে বসে আর গাড়িতে চড়ে হয়তো বেঁচে থাকার এই আয়োজন, জীবনের কঠিন প্রয়োজন উপলব্ধি করা অসাধ্য। তবু এতোটুকু ভেবে দেখাটা অসম্ভব নয় যতটা ভেবে দেখলে বুঝতে সহজ হয়, জীবন মানেই আইফোন, ফেসবুক অথবা পাবজি নয়। এগুলো না থাকলে আপনি অপূর্ণ নন।

আমাদের যা আছে, তা নিয়ে ভালো আছি। আরও ভালো থাকার চেষ্টা করছি। কোনো কিছু না পাওয়া মানে অপ্রাপ্তি নয়। হয়তো উপযুক্ত কিছুর জন্য অপেক্ষা বৃদ্ধি মাত্র। আমি যখন এই লেখাটা লিখি তার কিছুদিন পূর্বে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একটা লেখা চোখে পড়ছিলো বারবার। ” যদি আপনার একটা ফ্রিজ থাকে, মাথার উপর ছাদ থাকে, ঘুমানোর জন্য বিছানা থাকে তবে আপনি পৃথিবীর ৭৫শতাংশ মানুষের চেয়ে বেশি সুখী! ” যারা আমার এই লেখাটা পড়ছেন, তাদের অধিকাংশেরই হয়তো এর সব কিছুই আছে।

তবু কি আপনি সুখী? যদি না হয়ে থাকেন, তবে কেন না? আসলে সুখ ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। মানুষের মনস্তত্ত্ব বেশ জটিল বিষয়। কে কীসে সুখী হয় তা বুঝা কঠিন। মানুষের চাহিদা, স্বপ্নগুলোও এর সাথেই উঠানামা করে। পারিবারিক, সামাজিকসহ নানাবিধ জটিলতা সুখ বিনষ্টের জন্য বেশ খানিকটা দায়ী। তবে স্বপ্ন দেখার অপারগতা অথবা প্রত্যাশার বাড়াবাড়িও এই অসুখের দায় এড়াতে পারে না।

এ ধরণের অসুখে না জড়াতে চাইলে নিজ অবস্থান উপভোগ করে পরিমিত বাস্তব স্বপ্ন দেখা ও তার পেছনে নিজেকে নিজেই ছুটতে উৎসাহিত করা খুব প্রয়োজন। তিলে তিলে গড়ে তোলা বহু স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়। তবে স্বপ্নভঙ্গে দুঃখ পেলেও কাতর হলে চলে না। নতুন স্বপ্ন বুনে কঠিন সংকল্পে আবারও এগিয়ে যেতে হয়, খুঁজতে হয় বলয় ভেঙ্গে নতুন পথ। সে পথে ছোট ছোট আশা নিয়ে, স্বপ্নের কৃত্রিম-অকৃত্রিম বাক্স আর বাহন বানিয়ে অবিরত হোক আমাদের পথচলা। স্বপ্ন গড়ে, স্বপ্ন গড়ায় সহায়তা করে প্রতিটি বেলা হয়ে উঠুক অনিন্দ্য-সুন্দর।

লেখক- সাফায়িত সিফাত শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।