নিচে মাছের ঘের, ওপরে নেট আর বাঁশের মাচা। ওই মাচার সবুজ জমিনে ঝুলছে ছোট-বড় তরমুজ। একটি-দুটি নয়, শত শত। ওজনের ভারে যাতে ছিঁড়ে না পড়ে সে জন্য প্রতিটি তরমুজ পরম যত্নে নেটের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বর্ষার এই অসময়ে তরমুজে লাল-সবুজ স্বপ্ন বুনছেন খুলনার ডুমুরিয়ার বাগাড়দাইড় গ্রামের কৃষক মিলটন রায় ও বিশ্বজিৎ রায়।
তাঁদের দুজনকে এই স্বপ্নের জাল বুনে দিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প। প্রতিষ্ঠানটির বর্ষায় তরমুজ চাষের প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। তরমুজের এই মনোলোভা ছবি দেখতে প্রতিদিন মিলটন ও বিশ্বজিতের ঘেরে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছে।
মিলটন ও বিশ্বজিৎ জানান, বর্ষায় ঘেরের পার অনেকটাই খালি থাকে। সবজি চাষ করাও সম্ভব হয় না। আর লবণাক্ততার প্রকোপ তো রয়েছেই। কিন্তু অসময়ে তরমুজ তাঁদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। প্রথমবার তরমুজ চাষে তাঁদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ থেকে তাঁদের প্রত্যেকের তরমুজের উৎপাদন হবে কম হলেও দুই লাখ টাকার।
তাঁদের দাবি, যথাযথ প্রশিক্ষণ, মাটি ও সার ব্যবস্থাপনার ফলে এই প্রকল্পে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। সুস্বাদু ও মিষ্টি এসব তরমুজ প্রতিটি পাঁচ থেকে আট কেজি ওজনের হচ্ছে। পাইকারের কাছে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের খুলনা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে লবণাক্ত এলাকায় ঘেরের পাশে পতিত জমিতে অসময়ের বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করার জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হয়। গত বছর খুলনার বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ায় তিনজন এই তরমুজ চাষ করেন। কিন্তু এ বছর খুলনার ডুমুরিয়া-চাঁদগড় গ্রামে চারটি, বটিয়াঘাটার বয়ারভাঙ্গা গ্রামে পাঁচটি, গোপালগঞ্জ সদরে চারটি এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাটে দুটি করে মোট ১৫টি গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১৫ জন কৃষক ৪৯৫ শতক জমিতে বর্ষাকালীন অসময়ের তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এসব প্লটে মূলত হাইব্রিড নম্বর ওয়ান ও টপসুইট নামের দুটি জাত চাষ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ, কীটনাশক, সার বীজ মাচা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও টাকা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে আমন ধান কাটার পর পতিত জমিতে লবণাক্ত এলাকায় তরমুজ ও ভুট্টা চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি বিভিন্ন ইউনিয়নের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রদর্শনের জন্য ‘সার সুপারিশ বোর্ড’ সেঁটে দিয়েছে। যাতে ওই বোর্ড দেখে কৃষকরা নিজেরাই জমিতে সার প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করতে পারেন।
এই প্রকল্পের পরিচালক শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ঘেরের পারে বর্ষাকালে এ জাতের তরমুজ চাষে সেচের প্রয়োজন হয় না। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম পড়ে। আবার ঘেরে যেহেতু মাছ চাষ করা হয় তাই কৃষকরা আইপিএম (ওষুধ ব্যবহার না করে) পদ্ধতিতে ফসল আবাদ করতে পারেন। ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তিনি আরো বলেন, বর্ষাকালীন তরমুজের পাশাপাশি শিম, টমেটো, হলুদ, মানকচু, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও ধানের ওপরও গবেষণা চলছে। ঘেরের পারে তরমুজ চাষ সম্প্রসারিত করা গেলে কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ ইমরান মাসুদ


























