০৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

যতোদিন বেঁচে আছি গান গেয়ে যেতে চাই- কাজী সোমা

  • যাযাবর পলাশ
  • প্রকাশিত : ০৬:০৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০
  • 11

কাজী সোমা

মিষ্টি এক গানের পাখি কাজী সোমা। ছোট্টবেলা থেকেই যার গান গাওয়ার অদম্য নেশা। স্টেজ পারফর্মেন্স নিয়ে প্রতিনিয়ত অসম্ভব ব্যস্ত থাকেন তিনি। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও সমানতালে মঞ্চ মাতিয়ে বেড়ান তিনি। তবে দীর্ঘদিন গান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সম্প্রতি এই প্রথম নিজের মৌলিক গান প্রকাশ করলেন মেধাবী এই গায়িকা। ‘বাবুয়া বাবুয়া’ শিরোনামে তার এই প্রথম গানটি মিউজিক ভিডিও সহ প্রকাশিত হয়েছে দেশের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক থেকে। নিজের প্রথম গান ও সঙ্গীত জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন বিজনেস বাংলাদেশ – এর সাথে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন যাযাবর পলাশ।

কেমন আছেন?
কাজী সোমা – আলহামদুলিল্লাহ্, অনেক ভালো আছি।

শুরুতেই আপনার গায়িকা হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই।
কাজী সোমা – শুরুটা সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার আব্বাকে দেখতাম মুজিব পরদেশী, আব্দুল আলিম, ফরিদা পারভীনের গান শুনতেন। আমিও আমার আব্বার সাথে গানগুলো শুনতাম। খুব ভালো লাগতো। গানের প্রতি দূর্বলতা সেই থেকেই। যদিওবা আমাদের পরিবারের সবাই খুব conservative। ফ্যামিলির কেউই গান বা মিডিয়ার সাথে কোনভাবে জড়িত নেই। কিন্তু আমার মধ্যে কেমন জানি গান শুনলে বা ড্যান্স দেখলে নিজে নিজেই গান গাইতাম বা ড্যান্স শুরু করে দিতাম। কিন্তু ওইভাবে শেখার সুযোগ টা পাইনি। একটু বড় হওয়ার পর রীতিমতো চুরি করে নাচ শিখতে যেতাম। এরপর চুপিচুপি অনেক জায়গায় স্টেজ পারফর্মেন্স করতাম। এর জন্য আব্বার হাতে পিটুনিও খেয়েছি। মনে আছে আব্বা এই কারণে পরবর্তীতে অনেকদিন আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলেননি। কিন্তু পরে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তারপর কিছু কারণে আবারও সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি থেমে থাকার মেয়ে না। ২০০৬ থেকে ওস্তাদজী সঞ্জীব দের কাছে গান শেখা শুরু করলাম। এরপর ২০১০ থেকে পাকাপোক্তভাবে গান গাওয়া শুরু করি। বিভিন্ন স্টেজ শো-তে গান গাইতে গিয়ে দর্শকদের দারুন সাড়া পেতাম। সবার কাছে নিজের প্রশংসা শুনতে আর গান গেয়ে স্টেজ মাতাতে দারুণ লাগতো। এভাবেই আমার গান গাওয়া শুরু। আসলে শখ করে গাইতে এসে একসময় গানটাকে প্রফেশনালি নিতেই হলো। আর এভাবেই সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় নিয়মিত গান গেয়ে যাচ্ছি।

আপনার গায়িকা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে কার অবদান ও অনুপ্রেরণা বেশি পেয়েছেন?
কাজী সোমা – ঐ যে বললাম ছোট্টবেলা থেকেই গান শুনতাম। কিন্তু বাসায় কেউ ছিলো না হেল্প করার মতো। আমি শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা মেম এর গান খুব লাইক করতাম। আর ওনার গান শুনেই অনুপ্রাণিত হতাম। মেম এর গান শুনে ও গেয়েই আমার বড় হওয়া। আর উনিই আমার আইডল।

দেশ-বিদেশের অনেক মঞ্চই তো মাতিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় একটি স্টেজ শোর গল্প শুনতে চাই।
কাজী সোমা – দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক গান পরিবেশন করেছি। তার মধ্যে ২০১৬ তে ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডে গান গাইতে গিয়েছিলাম পহেলা বৈশাখের একটা প্রোগ্রামে। ঐটাই আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয়।

গানের ব্যস্ততা শেষে অবসর সময়ে কি করতে ভালো লাগে?
কাজী সোমা – কাজ ছাড়া বাইরে থাকতে একদমই ভালো লাগেনা। অবসর সময়ে বাসায় বসে গানের রেওয়াজ করি আর ফ্যামিলির সবার সাথে আড্ডা দেয়া, রান্না করা, ঘরের টুকিটাকি কাজ করা আর ঘর গোছানোতেই অবসর সময় পার করি।

আপনার প্রথম মৌলিক গান ‘বাবুয়া বাবুয়া’ নিয়ে অনুভূতি কেমন?
কাজী সোমা – প্রতিটি শিল্পীরই নিজের প্রথম গান নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আমারও তার ব্যাতিক্রম না। খুবই ভালো লাগছে।

গান গাইছেন দীর্ঘদিন হলো, অথচ আপনার গাওয়া মৌলিক গান এলো এই প্রথম। এতোটা সময় নেয়ার কারণ জানতে চাই।
কাজী সোমা – আসলে প্রায় প্রতিদিনই আমার স্টেজ শো থাকে। তাই পুরোপুরি ভাবে রেকর্ডিং এর জন্য সময় দিতে পারছিলাম না। আবার নিজেকে শতভাগ তৈরি করার জন্যও কিছুটা সময় নিচ্ছিলাম। তবে এক বছর আগেই গান রেকর্ডের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এবং পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতিতে কোনভাবেই যেন হচ্ছিলো না। তবে এবার মনে হলো আসলে একটু বেশিই সময় নিয়ে ফেলছি। তাই আর দেরি না করে গেয়ে ফেললাম আমার প্রথম মৌলিক গান। সত্যি বলতে আমার ব্যস্ততার জন্যই আমার সময়টা একটু বেশি লেগেছে।

বাবুয়া বাবুয়া’ গানে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
কাজী সোমা – ইনশাআল্লাহ দারুণ সাড়া পাচ্ছি। সবাই বেশ প্রশংসা করছেন। বাকিটা দেখা যাক কি হয়। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। দোয়া চাই।

তাহলে কি আমরা এবার আপনার কণ্ঠে নিয়মিত নতুন নতুন গান পাবো?
কাজী সোমা – ইনশাআল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত নতুন নতুন গান পাবেন।

গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
কাজী সোমা – যতোদিন বেঁচে আছি গান গেয়ে যেতে চাই। বাকিটা আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা।

এখন তো ভাইরালের যুগ চলছে, অনলাইনে ভাইরাল গায়ক-গায়িকাদেরই দাপট বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি জানতে চাই।
কাজী সোমা – ভাইরাল বলতে আসলে সব কিছুরই যেমন পজিটিভ দিক আছে তেমনই নেগেটিভ দিকও আছে। আমাদের দুইটা দিকই মেনে নিতে হবে। এইসব যারা করে বা করায় দিনশেষে আমাদের পজিটিভ রেজাল্ট-ই নিতে হবে। সুস্থ ধারার সৃষ্টি কিন্তু টিকে থাকবেই আর সস্তা বা উল্টোপাল্টা কাজ যতোই ভাইরাল হোক দুদিন পরই হারিয়ে যায়। ভালোটাই সবাই কামনা করে।

পরিশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কাজী সোমা – আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আর সবার কাছে দোয়া ও সাপোর্ট চাই, ভালো কিছু কাজ করার জন্য।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

যতোদিন বেঁচে আছি গান গেয়ে যেতে চাই- কাজী সোমা

প্রকাশিত : ০৬:০৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

মিষ্টি এক গানের পাখি কাজী সোমা। ছোট্টবেলা থেকেই যার গান গাওয়ার অদম্য নেশা। স্টেজ পারফর্মেন্স নিয়ে প্রতিনিয়ত অসম্ভব ব্যস্ত থাকেন তিনি। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও সমানতালে মঞ্চ মাতিয়ে বেড়ান তিনি। তবে দীর্ঘদিন গান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সম্প্রতি এই প্রথম নিজের মৌলিক গান প্রকাশ করলেন মেধাবী এই গায়িকা। ‘বাবুয়া বাবুয়া’ শিরোনামে তার এই প্রথম গানটি মিউজিক ভিডিও সহ প্রকাশিত হয়েছে দেশের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক থেকে। নিজের প্রথম গান ও সঙ্গীত জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন বিজনেস বাংলাদেশ – এর সাথে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন যাযাবর পলাশ।

কেমন আছেন?
কাজী সোমা – আলহামদুলিল্লাহ্, অনেক ভালো আছি।

শুরুতেই আপনার গায়িকা হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই।
কাজী সোমা – শুরুটা সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার আব্বাকে দেখতাম মুজিব পরদেশী, আব্দুল আলিম, ফরিদা পারভীনের গান শুনতেন। আমিও আমার আব্বার সাথে গানগুলো শুনতাম। খুব ভালো লাগতো। গানের প্রতি দূর্বলতা সেই থেকেই। যদিওবা আমাদের পরিবারের সবাই খুব conservative। ফ্যামিলির কেউই গান বা মিডিয়ার সাথে কোনভাবে জড়িত নেই। কিন্তু আমার মধ্যে কেমন জানি গান শুনলে বা ড্যান্স দেখলে নিজে নিজেই গান গাইতাম বা ড্যান্স শুরু করে দিতাম। কিন্তু ওইভাবে শেখার সুযোগ টা পাইনি। একটু বড় হওয়ার পর রীতিমতো চুরি করে নাচ শিখতে যেতাম। এরপর চুপিচুপি অনেক জায়গায় স্টেজ পারফর্মেন্স করতাম। এর জন্য আব্বার হাতে পিটুনিও খেয়েছি। মনে আছে আব্বা এই কারণে পরবর্তীতে অনেকদিন আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলেননি। কিন্তু পরে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তারপর কিছু কারণে আবারও সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি থেমে থাকার মেয়ে না। ২০০৬ থেকে ওস্তাদজী সঞ্জীব দের কাছে গান শেখা শুরু করলাম। এরপর ২০১০ থেকে পাকাপোক্তভাবে গান গাওয়া শুরু করি। বিভিন্ন স্টেজ শো-তে গান গাইতে গিয়ে দর্শকদের দারুন সাড়া পেতাম। সবার কাছে নিজের প্রশংসা শুনতে আর গান গেয়ে স্টেজ মাতাতে দারুণ লাগতো। এভাবেই আমার গান গাওয়া শুরু। আসলে শখ করে গাইতে এসে একসময় গানটাকে প্রফেশনালি নিতেই হলো। আর এভাবেই সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় নিয়মিত গান গেয়ে যাচ্ছি।

আপনার গায়িকা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে কার অবদান ও অনুপ্রেরণা বেশি পেয়েছেন?
কাজী সোমা – ঐ যে বললাম ছোট্টবেলা থেকেই গান শুনতাম। কিন্তু বাসায় কেউ ছিলো না হেল্প করার মতো। আমি শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা মেম এর গান খুব লাইক করতাম। আর ওনার গান শুনেই অনুপ্রাণিত হতাম। মেম এর গান শুনে ও গেয়েই আমার বড় হওয়া। আর উনিই আমার আইডল।

দেশ-বিদেশের অনেক মঞ্চই তো মাতিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় একটি স্টেজ শোর গল্প শুনতে চাই।
কাজী সোমা – দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক গান পরিবেশন করেছি। তার মধ্যে ২০১৬ তে ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডে গান গাইতে গিয়েছিলাম পহেলা বৈশাখের একটা প্রোগ্রামে। ঐটাই আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয়।

গানের ব্যস্ততা শেষে অবসর সময়ে কি করতে ভালো লাগে?
কাজী সোমা – কাজ ছাড়া বাইরে থাকতে একদমই ভালো লাগেনা। অবসর সময়ে বাসায় বসে গানের রেওয়াজ করি আর ফ্যামিলির সবার সাথে আড্ডা দেয়া, রান্না করা, ঘরের টুকিটাকি কাজ করা আর ঘর গোছানোতেই অবসর সময় পার করি।

আপনার প্রথম মৌলিক গান ‘বাবুয়া বাবুয়া’ নিয়ে অনুভূতি কেমন?
কাজী সোমা – প্রতিটি শিল্পীরই নিজের প্রথম গান নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আমারও তার ব্যাতিক্রম না। খুবই ভালো লাগছে।

গান গাইছেন দীর্ঘদিন হলো, অথচ আপনার গাওয়া মৌলিক গান এলো এই প্রথম। এতোটা সময় নেয়ার কারণ জানতে চাই।
কাজী সোমা – আসলে প্রায় প্রতিদিনই আমার স্টেজ শো থাকে। তাই পুরোপুরি ভাবে রেকর্ডিং এর জন্য সময় দিতে পারছিলাম না। আবার নিজেকে শতভাগ তৈরি করার জন্যও কিছুটা সময় নিচ্ছিলাম। তবে এক বছর আগেই গান রেকর্ডের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এবং পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতিতে কোনভাবেই যেন হচ্ছিলো না। তবে এবার মনে হলো আসলে একটু বেশিই সময় নিয়ে ফেলছি। তাই আর দেরি না করে গেয়ে ফেললাম আমার প্রথম মৌলিক গান। সত্যি বলতে আমার ব্যস্ততার জন্যই আমার সময়টা একটু বেশি লেগেছে।

বাবুয়া বাবুয়া’ গানে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
কাজী সোমা – ইনশাআল্লাহ দারুণ সাড়া পাচ্ছি। সবাই বেশ প্রশংসা করছেন। বাকিটা দেখা যাক কি হয়। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। দোয়া চাই।

তাহলে কি আমরা এবার আপনার কণ্ঠে নিয়মিত নতুন নতুন গান পাবো?
কাজী সোমা – ইনশাআল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত নতুন নতুন গান পাবেন।

গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
কাজী সোমা – যতোদিন বেঁচে আছি গান গেয়ে যেতে চাই। বাকিটা আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা।

এখন তো ভাইরালের যুগ চলছে, অনলাইনে ভাইরাল গায়ক-গায়িকাদেরই দাপট বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি জানতে চাই।
কাজী সোমা – ভাইরাল বলতে আসলে সব কিছুরই যেমন পজিটিভ দিক আছে তেমনই নেগেটিভ দিকও আছে। আমাদের দুইটা দিকই মেনে নিতে হবে। এইসব যারা করে বা করায় দিনশেষে আমাদের পজিটিভ রেজাল্ট-ই নিতে হবে। সুস্থ ধারার সৃষ্টি কিন্তু টিকে থাকবেই আর সস্তা বা উল্টোপাল্টা কাজ যতোই ভাইরাল হোক দুদিন পরই হারিয়ে যায়। ভালোটাই সবাই কামনা করে।

পরিশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কাজী সোমা – আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আর সবার কাছে দোয়া ও সাপোর্ট চাই, ভালো কিছু কাজ করার জন্য।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ