০৫:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

রাগ করে ভিসি পদ ছেড়ে দেয়া যাবে না- আব্দুস সোবহান

রাগ করে ভিসি পদ ছাড়ে দেয়া যাবেনা। যেমন ধরুন ইঁদুর- বিড়ালের ভয়ে দুধ কলা রেখে দেওয়ার মত কিছু করা যাবে না। যেহেতু রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত। এর বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত আমি নেব না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। গতকাল রবিবার দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির তদন্তের এখতিয়ার ও বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ভিসি সোবহান।
ইউজিসি তদন্তে উঠে আসা অনিয়ম-দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে হওয়া তদন্তে উঠে আসা অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরজন্য তিনি অভিযোগগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবিও করেছেন।
এসময় উপাচার্য বলেন, আগের উপাচার্যের আমলে অনেক বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি হয়েছে। এগুলো সবাই জানেন। তার মধ্যে রাবির ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে তিন কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লাখ টাকা পুরোপুরি তছরুপ হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউ তদন্ত করছেন না। তদন্তের দাবিও তুলছেন না।
এসবের তদন্ত হওয়া জরুরি।
সাবেক উপাচার্য ড. মিজান উদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর নীতিমালা বদল করে নিজের মেয়েকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। সাবেক উপাচার্য তার মেয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএকে ভিত্তি করে শুধু ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা পুন:নির্ধারণ করেন পরিবর্তিত যোগ্যতাতেই ইংরেজি বিভাগের অর্গানোগ্রামে প্রভাষক পদ না থাকলেও দুটি প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেখানে তার কন্যা রিদিতা মিজানকে নিয়োগ দেন।
প্রভাষক পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগদান বৈধ ও আইনসিদ্ধ হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য ড. সোবহান বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সঙ্গে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সমন্বয়পূর্বক নতুন নিয়োগ নীতিমালা করা হয়েছে।
২০১৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী প্রায় ২৪টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মেনে মেয়ে ও জামাই নিয়োগ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। উল্লেখ্য, ইউজিসির তদন্তে বলা হয়েছে- ভিসি সোবহানের মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৪৮৪তম সিন্ডিকেটে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভাগে তার মেয়ের ফলাফলের অবস্থান ছিল ২১তম।
অন্যদিকে উপাচার্যের জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজকে ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটে (আইবিএ) নিয়োগ দেন। মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা ভিসির জামাতা তার বিভাগের ফলাফলে ৬৭তম অবস্থানে থেকেও ৪৮৯তম সিন্ডিকেটে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।
এতে অনেক যোগ্যপ্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ড প্রার্থীদের ক্লাস নেয়ার পারদর্শিতা যাচাই করেছে- এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ডেমো বা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রদর্শনী আয়োজনের রেওয়াজ নেই। নিয়োগ বোর্ড কেবলমাত্র আবেদনের যোগ্যতাসম্পন্ন উপস্থিত প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সব যোগ্যতা যাচাই করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো আমলযোগ্য অভিযোগের তদন্ত বাঞ্ছনীয়। আমি তদন্তের বিপক্ষে নই। আনীত অভিযোগসমূহ যথাযথ হলে তা তদন্তে আমার শতভাগ সম্মতি আছে। তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনসিদ্ধভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।
গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা স্বাক্ষর করে ৩০০ পৃষ্ঠার ১৭টি অভিযোগ সংবলিত একটি বিস্তৃত অভিযোগনামা প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসিতে পাঠান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে একটি গঠিত তদন্ত কমিটি করে ইউজিসি। ওই কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২০ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আব্দুস সোবহান, প্রো-ভিসি চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এমএ বারীর বিরুদ্ধে ২৫ অভিযোগের প্রমাণ সংবলিত তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।
সেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের ‘নৈতিকতার চরম স্খলন ঘটেছে বলে মন্তব্যে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ১১ দফার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। গত ১৭ জানুয়ারি এ তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমিটি।

লে.কর্নেল মুনীম ফেরদৌস হলেন র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র

রাগ করে ভিসি পদ ছেড়ে দেয়া যাবে না- আব্দুস সোবহান

প্রকাশিত : ০৪:১০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
রাগ করে ভিসি পদ ছাড়ে দেয়া যাবেনা। যেমন ধরুন ইঁদুর- বিড়ালের ভয়ে দুধ কলা রেখে দেওয়ার মত কিছু করা যাবে না। যেহেতু রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত। এর বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত আমি নেব না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। গতকাল রবিবার দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির তদন্তের এখতিয়ার ও বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ভিসি সোবহান।
ইউজিসি তদন্তে উঠে আসা অনিয়ম-দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে হওয়া তদন্তে উঠে আসা অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরজন্য তিনি অভিযোগগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবিও করেছেন।
এসময় উপাচার্য বলেন, আগের উপাচার্যের আমলে অনেক বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি হয়েছে। এগুলো সবাই জানেন। তার মধ্যে রাবির ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে তিন কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লাখ টাকা পুরোপুরি তছরুপ হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউ তদন্ত করছেন না। তদন্তের দাবিও তুলছেন না।
এসবের তদন্ত হওয়া জরুরি।
সাবেক উপাচার্য ড. মিজান উদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর নীতিমালা বদল করে নিজের মেয়েকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। সাবেক উপাচার্য তার মেয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএকে ভিত্তি করে শুধু ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা পুন:নির্ধারণ করেন পরিবর্তিত যোগ্যতাতেই ইংরেজি বিভাগের অর্গানোগ্রামে প্রভাষক পদ না থাকলেও দুটি প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেখানে তার কন্যা রিদিতা মিজানকে নিয়োগ দেন।
প্রভাষক পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগদান বৈধ ও আইনসিদ্ধ হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য ড. সোবহান বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সঙ্গে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সমন্বয়পূর্বক নতুন নিয়োগ নীতিমালা করা হয়েছে।
২০১৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী প্রায় ২৪টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মেনে মেয়ে ও জামাই নিয়োগ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। উল্লেখ্য, ইউজিসির তদন্তে বলা হয়েছে- ভিসি সোবহানের মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৪৮৪তম সিন্ডিকেটে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভাগে তার মেয়ের ফলাফলের অবস্থান ছিল ২১তম।
অন্যদিকে উপাচার্যের জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজকে ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটে (আইবিএ) নিয়োগ দেন। মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা ভিসির জামাতা তার বিভাগের ফলাফলে ৬৭তম অবস্থানে থেকেও ৪৮৯তম সিন্ডিকেটে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।
এতে অনেক যোগ্যপ্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ড প্রার্থীদের ক্লাস নেয়ার পারদর্শিতা যাচাই করেছে- এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ডেমো বা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রদর্শনী আয়োজনের রেওয়াজ নেই। নিয়োগ বোর্ড কেবলমাত্র আবেদনের যোগ্যতাসম্পন্ন উপস্থিত প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সব যোগ্যতা যাচাই করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো আমলযোগ্য অভিযোগের তদন্ত বাঞ্ছনীয়। আমি তদন্তের বিপক্ষে নই। আনীত অভিযোগসমূহ যথাযথ হলে তা তদন্তে আমার শতভাগ সম্মতি আছে। তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনসিদ্ধভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।
গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা স্বাক্ষর করে ৩০০ পৃষ্ঠার ১৭টি অভিযোগ সংবলিত একটি বিস্তৃত অভিযোগনামা প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসিতে পাঠান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে একটি গঠিত তদন্ত কমিটি করে ইউজিসি। ওই কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২০ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আব্দুস সোবহান, প্রো-ভিসি চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এমএ বারীর বিরুদ্ধে ২৫ অভিযোগের প্রমাণ সংবলিত তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।
সেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের ‘নৈতিকতার চরম স্খলন ঘটেছে বলে মন্তব্যে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ১১ দফার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। গত ১৭ জানুয়ারি এ তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমিটি।