০৪:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

পরামর্শের নামে ঋণদাতারাই নিয়ে গেল ৩ হাজার কোটি টাকা

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব ঋণ দেয় তা থেকে একটি বড় অংশই নিয়ে যাচ্ছে পরামর্শকের নামে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসব সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হয় অনেক শর্ত মেনে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম থাকে তাদের পছন্দের পরামর্শক গ্রহণের বিষয়টি। এসব পরামর্শকের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়ে যায়। অথচ পুরো অর্থই সুদাসলে পরিশোধ করতে হয় ঋণগ্রহীতা দেশগুলোকে।

সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া বিদেশি ঋণ ও অনুদানের নতুন এবং সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২২টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২১টি প্রকল্পেই পরামর্শক খাত রাখা হয়েছে। ২১ প্রকল্পের পরামর্শক খাতে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।

পরামর্শক খরচ রাখা ২২ প্রকল্পের মধ্যে ছয়টিতে বিশ্বব্যাংক, পাঁচটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), তিনটিতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), তিনটিতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), দুটিতে চায়না এক্সিম ব্যাংক, একটিতে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি), একটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), একটিতে দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশ, একটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), একটিতে ভারতীয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এবং একটিতে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ঋণ (দু-একটিতে আংশিক অনুদানও) দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্পে যৌথভাবেও ঋণ দিচ্ছে দু-একটি সংস্থা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন মানে হলো ঋণ গ্রহণ। টাকা যখন ধার করি তখন কিছু শর্ত তারা (ঋণদাতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) চাপিয়ে দেয়। না হলে টাকা নেই, দেয় না বা দিতে চায় না। গ্রামের সুদখোররাও তাই করে। আমার ওমুক কাজ করে দিবি বা অমুকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবি, তাইলে তোরে ঋণ দিমু। গ্রামের সুদখোররা এরকম করে না? এরকম এরাও (ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) করে। সুতরাং তখন তারা বলে যে, এই যে কাজের কথা বললেন, এই কাজটা আপনারা পারবেন না। আপনাদের বিদেশি কিছু বিশেষজ্ঞ দরকার আছে। এখানে দুটি কথা। এক. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাজে লাগিয়ে দেয়। দুই. ঋণের বড় অংশ ফেরত চলে যায় তাদের কাছে। এটা সব দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা এটা করে পার পাচ্ছে, কারণ তাদের কিছু এজেন্ট (দালাল) আমাদের এখানেও আছে। তাদের মাধ্যমে তারা আসে। জগৎ শেঠ, উমী চাঁদ পাইছিল না রবার্ট ক্লাইভ? এখনো তা-ই আছে। পরিষ্কার কথা।’

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ঈমান ঠিক রাখলে, চুরিচামারি না করলে, কাজ করলে তারা আপনা আপনি সরে যাবে। তারা চীনে করতে পারে না, মিয়ানমারে পারে না, উত্তর কোরিয়ায় পারে না, রাশিয়ায় পারে না, উজবেকিস্তানে পারে না, ভেনেজুয়েলায় পারে না, কিউবায় পারে না। আমাদের এখানে কেন পারে?

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :

পরামর্শের নামে ঋণদাতারাই নিয়ে গেল ৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত : ০৩:২৪:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব ঋণ দেয় তা থেকে একটি বড় অংশই নিয়ে যাচ্ছে পরামর্শকের নামে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসব সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হয় অনেক শর্ত মেনে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম থাকে তাদের পছন্দের পরামর্শক গ্রহণের বিষয়টি। এসব পরামর্শকের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়ে যায়। অথচ পুরো অর্থই সুদাসলে পরিশোধ করতে হয় ঋণগ্রহীতা দেশগুলোকে।

সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া বিদেশি ঋণ ও অনুদানের নতুন এবং সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২২টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২১টি প্রকল্পেই পরামর্শক খাত রাখা হয়েছে। ২১ প্রকল্পের পরামর্শক খাতে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।

পরামর্শক খরচ রাখা ২২ প্রকল্পের মধ্যে ছয়টিতে বিশ্বব্যাংক, পাঁচটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), তিনটিতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), তিনটিতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), দুটিতে চায়না এক্সিম ব্যাংক, একটিতে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি), একটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), একটিতে দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশ, একটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), একটিতে ভারতীয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এবং একটিতে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ঋণ (দু-একটিতে আংশিক অনুদানও) দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্পে যৌথভাবেও ঋণ দিচ্ছে দু-একটি সংস্থা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন মানে হলো ঋণ গ্রহণ। টাকা যখন ধার করি তখন কিছু শর্ত তারা (ঋণদাতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) চাপিয়ে দেয়। না হলে টাকা নেই, দেয় না বা দিতে চায় না। গ্রামের সুদখোররাও তাই করে। আমার ওমুক কাজ করে দিবি বা অমুকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবি, তাইলে তোরে ঋণ দিমু। গ্রামের সুদখোররা এরকম করে না? এরকম এরাও (ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) করে। সুতরাং তখন তারা বলে যে, এই যে কাজের কথা বললেন, এই কাজটা আপনারা পারবেন না। আপনাদের বিদেশি কিছু বিশেষজ্ঞ দরকার আছে। এখানে দুটি কথা। এক. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাজে লাগিয়ে দেয়। দুই. ঋণের বড় অংশ ফেরত চলে যায় তাদের কাছে। এটা সব দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা এটা করে পার পাচ্ছে, কারণ তাদের কিছু এজেন্ট (দালাল) আমাদের এখানেও আছে। তাদের মাধ্যমে তারা আসে। জগৎ শেঠ, উমী চাঁদ পাইছিল না রবার্ট ক্লাইভ? এখনো তা-ই আছে। পরিষ্কার কথা।’

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ঈমান ঠিক রাখলে, চুরিচামারি না করলে, কাজ করলে তারা আপনা আপনি সরে যাবে। তারা চীনে করতে পারে না, মিয়ানমারে পারে না, উত্তর কোরিয়ায় পারে না, রাশিয়ায় পারে না, উজবেকিস্তানে পারে না, ভেনেজুয়েলায় পারে না, কিউবায় পারে না। আমাদের এখানে কেন পারে?

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর