১০:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাড়ে ৫ লাখ দরিদ্র মানুষ পাবে পুষ্টিচাল

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের আরও ১২০টি উপজেলায় পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৮ জন দরিদ্র মানুষকে পুষ্টিচাল দেবে সরকার। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০টি উপজেলায় চার লাখ ২২ হাজার ৩৩৭ জন এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় ৭০টি উপজেলায় এক লাখ ৩২ হাজার ৬২১ জন নারী পুষ্টিচাল পাবেন। খাদ্য অধিদফতর ও মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার মাস মার্চ থেকে নতুন ১২০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ শুরু হবে। খাদ্য অধিদফতর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই পাঁচ মাস ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে চাল দিয়ে থাকে। এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ১০০টি উপজেলার ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ জনকে পুষ্টিচাল দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের ভিজিডি কর্মসূচির মাধ্যমে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৮ জন নারীকে পুষ্টিচাল দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ভিজিডি কার্ডধারী প্রতিটি নারীর পরিবার প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে দুই বছর পর্যন্ত পুষ্টিচাল পেয়ে থাকেন। খাদ্য অধিদফতরের (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন) পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরও ৫০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হবে। ইতোমধ্যে উপজেলাগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কার্নেল (পুষ্টিচালের শাঁস) কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী মার্চ মাস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। তখন থেকেই নতুন ৫০টি জেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হবে। আগে থেকেই ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হচ্ছিল। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) হাওলাদার মো. রকিবুল বারী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভিজিডি কর্মসূচির পুষ্টিচাল বিতরণের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে আরও ৭০টি উপজেলার এক লাখ ৩২ হাজার ৬২১ জন নারী পুষ্টিচাল পাবেন। খাদ্য অধিদফতর ও মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে এখন খাদ্য সঙ্গট নেই, মানুষ এখন তিনবেলা খেতে পারছে। তবে পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি এখনো। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে চাহিদা পূরণে আর্থিক সক্ষমতা নেই। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ভাতের মধ্যে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় পুষ্টিচাল বিতরণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক অ্যাসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক- এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন করা হয়। পরে সাধারণ চালের সঙ্গে ১০০:১ অনুপাতে কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল (ফর্টিফায়েড রাইস) প্রস্তুত করা হয়। প্রতি ১০০টি সাধারণ চালের সঙ্গে একটি পুষ্টিচাল অর্থাৎ ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টিচাল মেশানো হয়। এটা মিশ্রণ মেশিন অটোম্যাটিক গড় করে দেয়। এই চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, কিন্তু চালের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির কারিগরি সহযোগিতায় ২০১৩ সালের জুন থেকে প্রথম কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভিজিডি কর্মসূচির উপকারভোগী নারীদের মধ্যে পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর। ২০১৪ সালের প্রথমার্ধ থেকে ভিজিডি কর্মসূচিতে তিনটি জেলার (সাতক্ষীরা, খুলনা ও গোপালগঞ্জ) পাঁচটি উপজেলায় (কালীগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, দাকোপ, শরণখোলা ও শ্যামনগর) উপকারভোগীদের মধ্যে পুষ্টিচাল বিতরণের কাজ ধাপে ধাপে প্রচলন করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের ১০টি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৬৫টি অনুমোদিত মিশ্রণ মিলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। নতুন করে আরও ৩১টি নতুন মিল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন খাদ্যবান্ধব ও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় পুষ্টিচাল উৎপাদনে ৯৬টি মিশ্রণ মিল কাজ করছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮

সাড়ে ৫ লাখ দরিদ্র মানুষ পাবে পুষ্টিচাল

প্রকাশিত : ১২:০১:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের আরও ১২০টি উপজেলায় পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৮ জন দরিদ্র মানুষকে পুষ্টিচাল দেবে সরকার। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০টি উপজেলায় চার লাখ ২২ হাজার ৩৩৭ জন এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় ৭০টি উপজেলায় এক লাখ ৩২ হাজার ৬২১ জন নারী পুষ্টিচাল পাবেন। খাদ্য অধিদফতর ও মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার মাস মার্চ থেকে নতুন ১২০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ শুরু হবে। খাদ্য অধিদফতর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই পাঁচ মাস ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে চাল দিয়ে থাকে। এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ১০০টি উপজেলার ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ জনকে পুষ্টিচাল দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের ভিজিডি কর্মসূচির মাধ্যমে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৮ জন নারীকে পুষ্টিচাল দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ভিজিডি কার্ডধারী প্রতিটি নারীর পরিবার প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে দুই বছর পর্যন্ত পুষ্টিচাল পেয়ে থাকেন। খাদ্য অধিদফতরের (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন) পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরও ৫০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হবে। ইতোমধ্যে উপজেলাগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কার্নেল (পুষ্টিচালের শাঁস) কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী মার্চ মাস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। তখন থেকেই নতুন ৫০টি জেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হবে। আগে থেকেই ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল দেয়া হচ্ছিল। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) হাওলাদার মো. রকিবুল বারী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভিজিডি কর্মসূচির পুষ্টিচাল বিতরণের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে আরও ৭০টি উপজেলার এক লাখ ৩২ হাজার ৬২১ জন নারী পুষ্টিচাল পাবেন। খাদ্য অধিদফতর ও মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে এখন খাদ্য সঙ্গট নেই, মানুষ এখন তিনবেলা খেতে পারছে। তবে পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি এখনো। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে চাহিদা পূরণে আর্থিক সক্ষমতা নেই। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ভাতের মধ্যে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় পুষ্টিচাল বিতরণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক অ্যাসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক- এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন করা হয়। পরে সাধারণ চালের সঙ্গে ১০০:১ অনুপাতে কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল (ফর্টিফায়েড রাইস) প্রস্তুত করা হয়। প্রতি ১০০টি সাধারণ চালের সঙ্গে একটি পুষ্টিচাল অর্থাৎ ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টিচাল মেশানো হয়। এটা মিশ্রণ মেশিন অটোম্যাটিক গড় করে দেয়। এই চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, কিন্তু চালের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির কারিগরি সহযোগিতায় ২০১৩ সালের জুন থেকে প্রথম কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভিজিডি কর্মসূচির উপকারভোগী নারীদের মধ্যে পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর। ২০১৪ সালের প্রথমার্ধ থেকে ভিজিডি কর্মসূচিতে তিনটি জেলার (সাতক্ষীরা, খুলনা ও গোপালগঞ্জ) পাঁচটি উপজেলায় (কালীগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, দাকোপ, শরণখোলা ও শ্যামনগর) উপকারভোগীদের মধ্যে পুষ্টিচাল বিতরণের কাজ ধাপে ধাপে প্রচলন করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের ১০টি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৬৫টি অনুমোদিত মিশ্রণ মিলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। নতুন করে আরও ৩১টি নতুন মিল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন খাদ্যবান্ধব ও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় পুষ্টিচাল উৎপাদনে ৯৬টি মিশ্রণ মিল কাজ করছে।