জন্ম নোনাপানিতে-নোনা সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। নাম তার গোলগাছ। এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসছে মিষ্টি রস। তৈরি হয় গুড়। এ গুড়ের চাহিদাও রয়েছে অনেক। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় শতাধিক কৃষক এ গাছের রস থেকে গুড় তৈরীর কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এ গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষক বেড়িয়ে পড়েন রস সংগ্রহ করতে। বাড়ির উঠানে বসে শুরু হয় গুড় তৈরীর কাজ। এ গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলছে কৃষকের জীবন-জীবিকা। জলবায়ুর প্রভাবসহ প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, চাষাবাদের জমি বৃদ্ধি এবং অসাধু একশ্রেনীর বনকর্মীর কারণে ক্রমশই ধ্বংস হতে চলেছে গোল গাছ। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন স্থানে গোলগাছ রয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, পার্শ্ববর্তী আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলে গোলগাছের বাগান রয়েছে। শীত মৌসুমে গোলবাগানের মালিকরা এর রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে থাকেন। এর রস দিয়ে সুস্বাদু পায়েশ তৈরি করা হয়। অপরদিকে গোলপাতা গৃহ নির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘরের চালে এক সময় টিনের পরিবর্তে গোলপাতা ব্যবহার করা হতো। পটুয়াখালী-বরগুনা জেলায় বসবাসরত আদিবাসী রাখাইন জনগোষ্টি সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করতো গোলপাতা। ঘরের চালে ব্যবহারের পাশাপাশি রাখাইনরা গোলের কচি পাতা শুকিয়ে তামাক দিয়ে বিড়ি বা চুরুট তৈরী করে পান করতো। তবে যুগের পবির্তনের সাথে সাথে এ প্রথা থেকে সরে এসেছে রাখাইন জনগোষ্টি।
গোল গাছের মালিকরা জানান, প্রতিটি গোলগাছ পাতাসহ উচ্চতা হয় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। এর ফুল হয় হলুদ এবং লাল। ফুল থেকে ফল পরিপক্ক হলে সেটি তালগাছের আঁটির মতো কেটে শাস খাওয়া যায়। গোলপাতা একটি প্রকৃতিনির্ভর পাম জাতীয় উদ্ভিদ। এই ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদটি নদী-খালের কাদামাটি আর পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। তবে গোলগাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। এতে কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর,বালিয়াতরী,ধুলাসার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন সাকালে কৃষকরা গোল বাগান থেকে সংগ্রহীত রস বাড়ির উঠানে নিয়ে আসেন। আর সেই রস গৃহ বধুরা পরিস্কার কাপড় দিয়ে ছেকে ঢোঙ্গায় গোলের রস রাখেন। এর পর উনুনে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রস দিয়ে তৈরী করেন গুড়। নবীপুর গ্রামে গোল গাছ চাষি নির্মল গাইন বলেন, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠে কলস নিয়ে বাগানে যেতে হয়। এরপর প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।
০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
গোলগাছের রসে সিক্ত উপকূলের জীবন
-
আনোয়ার হোসেন আনু
- প্রকাশিত : ১২:০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- 217
ট্যাগ :
জনপ্রিয়