০৩:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আলজাজিরার অপসাংবাদিকতা ও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আলজাজিরা মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন থেকে শুরু করে ওহাবি-সালাফিপন্থী বিতর্কিত ধর্মতাত্ত্বিক ইউসুফ আল-কারাদাবির বক্তব্য গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে চ্যানেলটি। কারাদাবি এই চ্যানেলের টক শো’তে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান থাকাকালে নগ্নভাবে জামায়াতে ইসলামীর ‘সোল এজেন্টের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আলজাজিরা। জামায়াতে ইসলামীর মিশরীয় ভার্সন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সবসময়ই প্রমোট করেছে চ্যানেলটি। এমনকি সিরিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত সংগঠন জাবহাত আল-নুসরাও ইতিবাচক প্রচার পেয়ে আসছে আল জাজিরায়।
স্যাটেলাইট এ টিভি চ্যানেলটির জনক হলেন কাতারের বর্তমান আমিরের পিতা হামাদ বিন খলিফা, যিনি বিদ্রোহের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে কাতারের ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আল জাজিরার আত্মপ্রকাশ ঘটলেও চ্যানেলটি কালক্রমে সখ্য গড়ে তোলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও টেররিজমের মতো অন্ধকার দুনিয়ার সাথে। জন্মলগ্ন থেকেই এ স্যাটেলাইট চ্যনেলটি বিভিন্ন বিতর্কিত, স্পর্শকাতর ও মিথ্যে খবর পরিবেশনে লিপ্ত হয়ে যায়।
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত পত্রিকা দি গার্ডিয়ান ‘সিরিয়াস স্টাফিং ক্রাইসিস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এতে লেখা হয়, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী সাংবাদিকদেরকে আল জাজিরার ধ্যান ধারনা বা মতাদর্শের প্রতি খেয়াল রেখে রিপোর্টিং করার তাগিদ দেয়া হতো। এতে করে কর্মরত সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেননা ও কোন ঘটনার স্বচ্ছতা বহিপ্রকাশের ক্ষেত্রেও তাদেরকে প্রায়ই বাধাগ্রস্থ হতে হতো। এসব কারণে তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নবায়ন করতে রাজি না হওয়া বা নতুন কোন ইংরেজি ভাষাভাষী সাংবাদিক এ চিহ্নিত চ্যানেলটিতে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাংবাদিক সঙ্কট দেখা দেয়।
২০১২ সালে বাংলাদেশের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নিয়ে একটি ‘দরদভরা’ প্রতিবেদন সম্প্রচার করে আল জাজিরা। অথচ ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে কখনো টু শব্দ উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি চ্যালেনলিকে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। ৮৯ বছর বয়সী গোলাম আযম হাঁটতে পারেন না, দেখতে পান না, এমনকি শুনতেও পান না। তা সত্ত্বেও ১০ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তাঁকে পাহারা দিচ্ছেন।’
ওই প্রতিবেদনের শেষ অংশে গোলাম আযমের বিচার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত যা-ই আসুক না কেন, এর পরিণতি হবে নাটকীয়। এটা অনেকের কাছেই সুবিচার বলে মনে হবে। কিন্তু পরিণতিতে দেশ নিপতিত হবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে।’ ওই প্রতিবেদনের শেষ লাইনটি ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি।
২০০৯ সাল থেকেই আলজাজিরা বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিতে সচেষ্ট ছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা ও ধর্ষণে নেতৃত্ব দেওয়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদেরকে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জোর প্রচেষ্টা ছিল চ্যানেলটির। সেসময় বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন হিসেবে উপস্থাপন করেছিল আলজাজিরা। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও আল জাজিরার ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় একটি অনুষ্ঠানে যেখানে টবি ক্যাডম্যান এবং ডেভিড বার্গম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর্শকশ্রোতার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে আলজাজিরা বলে, ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে।
বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র এখানেই শেষ নয়।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে সাভারের একটি ইটভাটা থেকে শিশু ও নারীসহ শেকলবন্দী ৩০ জনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সে সময় দেশ-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছিলো ওই ঘটনা। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুই মাস পর পুনরায় ভিডিও চিত্রসহ ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে আল জাজিরা। আল জাজিরার ওয়েবসাইটের এশিয়া বিভাগের “হোয়াট’স হট” অংশে গুরুত্বের সঙ্গে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারির ওই ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রচার করা হয় ‘পুলিশ রেইড বাংলাদেশ স্লেভ ক্যাম্প’ শিরোনামে। শ্রমিকদের নির্যাতনের যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল অতিরঞ্জিত।
এছাড়া হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বর দখলের সময়েও ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আলজাজিরা। তখন আলজাজিরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, ৫ মে রাতে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। তারা জুরাইন কবরস্থানের অনেকগুলো কবর দেখিয়ে বলেছিল, এগুলো হলো শাপলা চত্বরে মারা যাওয়া মানুষের কবর। এর স্বপক্ষে তারা কবরস্থানের এক শ্রমিকের বক্তব্য প্রচার করেছিল। কিন্তু পরে দেশের গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছিল, ওই কবরগুলো ছিল রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের। আর যে ব্যক্তির সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয়েছিল সে ছিল একজন বাকপ্রতিবন্ধী।
এই চ্যানেলটি বর্তমানে পুনরায় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আলজাজিরার অপপ্রচারের মাত্রা এখন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে বিস্তার লাভ করেছে।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেছিলেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেছিলেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান। ধর্মীয় উস্কানি, জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী ধারণা প্রচার, জঙ্গিদের দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেয়া, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী হামলাকে জান্নাতের সফর বলে উল্লেখ করাসহ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে আলজাজিরা।
মূলত আল জাজিরা আরববিশ্বের কলঙ্ক। পৃথিবীর মানুষ যেখানে শান্তির পক্ষপাতী সেখানে একটি টিভি চ্যানেল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার করে চলেছে অশান্তির বার্তা। এই মিডিয়ার সকল কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

আলজাজিরার অপসাংবাদিকতা ও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত : ১২:০০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আলজাজিরা মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন থেকে শুরু করে ওহাবি-সালাফিপন্থী বিতর্কিত ধর্মতাত্ত্বিক ইউসুফ আল-কারাদাবির বক্তব্য গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে চ্যানেলটি। কারাদাবি এই চ্যানেলের টক শো’তে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান থাকাকালে নগ্নভাবে জামায়াতে ইসলামীর ‘সোল এজেন্টের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আলজাজিরা। জামায়াতে ইসলামীর মিশরীয় ভার্সন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সবসময়ই প্রমোট করেছে চ্যানেলটি। এমনকি সিরিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত সংগঠন জাবহাত আল-নুসরাও ইতিবাচক প্রচার পেয়ে আসছে আল জাজিরায়।
স্যাটেলাইট এ টিভি চ্যানেলটির জনক হলেন কাতারের বর্তমান আমিরের পিতা হামাদ বিন খলিফা, যিনি বিদ্রোহের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে কাতারের ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আল জাজিরার আত্মপ্রকাশ ঘটলেও চ্যানেলটি কালক্রমে সখ্য গড়ে তোলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও টেররিজমের মতো অন্ধকার দুনিয়ার সাথে। জন্মলগ্ন থেকেই এ স্যাটেলাইট চ্যনেলটি বিভিন্ন বিতর্কিত, স্পর্শকাতর ও মিথ্যে খবর পরিবেশনে লিপ্ত হয়ে যায়।
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত পত্রিকা দি গার্ডিয়ান ‘সিরিয়াস স্টাফিং ক্রাইসিস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এতে লেখা হয়, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী সাংবাদিকদেরকে আল জাজিরার ধ্যান ধারনা বা মতাদর্শের প্রতি খেয়াল রেখে রিপোর্টিং করার তাগিদ দেয়া হতো। এতে করে কর্মরত সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেননা ও কোন ঘটনার স্বচ্ছতা বহিপ্রকাশের ক্ষেত্রেও তাদেরকে প্রায়ই বাধাগ্রস্থ হতে হতো। এসব কারণে তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নবায়ন করতে রাজি না হওয়া বা নতুন কোন ইংরেজি ভাষাভাষী সাংবাদিক এ চিহ্নিত চ্যানেলটিতে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাংবাদিক সঙ্কট দেখা দেয়।
২০১২ সালে বাংলাদেশের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নিয়ে একটি ‘দরদভরা’ প্রতিবেদন সম্প্রচার করে আল জাজিরা। অথচ ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে কখনো টু শব্দ উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি চ্যালেনলিকে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। ৮৯ বছর বয়সী গোলাম আযম হাঁটতে পারেন না, দেখতে পান না, এমনকি শুনতেও পান না। তা সত্ত্বেও ১০ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তাঁকে পাহারা দিচ্ছেন।’
ওই প্রতিবেদনের শেষ অংশে গোলাম আযমের বিচার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত যা-ই আসুক না কেন, এর পরিণতি হবে নাটকীয়। এটা অনেকের কাছেই সুবিচার বলে মনে হবে। কিন্তু পরিণতিতে দেশ নিপতিত হবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে।’ ওই প্রতিবেদনের শেষ লাইনটি ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি।
২০০৯ সাল থেকেই আলজাজিরা বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিতে সচেষ্ট ছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা ও ধর্ষণে নেতৃত্ব দেওয়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদেরকে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জোর প্রচেষ্টা ছিল চ্যানেলটির। সেসময় বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন হিসেবে উপস্থাপন করেছিল আলজাজিরা। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও আল জাজিরার ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় একটি অনুষ্ঠানে যেখানে টবি ক্যাডম্যান এবং ডেভিড বার্গম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর্শকশ্রোতার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে আলজাজিরা বলে, ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে।
বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র এখানেই শেষ নয়।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে সাভারের একটি ইটভাটা থেকে শিশু ও নারীসহ শেকলবন্দী ৩০ জনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সে সময় দেশ-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছিলো ওই ঘটনা। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুই মাস পর পুনরায় ভিডিও চিত্রসহ ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে আল জাজিরা। আল জাজিরার ওয়েবসাইটের এশিয়া বিভাগের “হোয়াট’স হট” অংশে গুরুত্বের সঙ্গে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারির ওই ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রচার করা হয় ‘পুলিশ রেইড বাংলাদেশ স্লেভ ক্যাম্প’ শিরোনামে। শ্রমিকদের নির্যাতনের যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল অতিরঞ্জিত।
এছাড়া হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বর দখলের সময়েও ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আলজাজিরা। তখন আলজাজিরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, ৫ মে রাতে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। তারা জুরাইন কবরস্থানের অনেকগুলো কবর দেখিয়ে বলেছিল, এগুলো হলো শাপলা চত্বরে মারা যাওয়া মানুষের কবর। এর স্বপক্ষে তারা কবরস্থানের এক শ্রমিকের বক্তব্য প্রচার করেছিল। কিন্তু পরে দেশের গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছিল, ওই কবরগুলো ছিল রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের। আর যে ব্যক্তির সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয়েছিল সে ছিল একজন বাকপ্রতিবন্ধী।
এই চ্যানেলটি বর্তমানে পুনরায় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আলজাজিরার অপপ্রচারের মাত্রা এখন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে বিস্তার লাভ করেছে।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেছিলেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেছিলেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান। ধর্মীয় উস্কানি, জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী ধারণা প্রচার, জঙ্গিদের দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেয়া, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী হামলাকে জান্নাতের সফর বলে উল্লেখ করাসহ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে আলজাজিরা।
মূলত আল জাজিরা আরববিশ্বের কলঙ্ক। পৃথিবীর মানুষ যেখানে শান্তির পক্ষপাতী সেখানে একটি টিভি চ্যানেল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার করে চলেছে অশান্তির বার্তা। এই মিডিয়ার সকল কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি।