০৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভাষার মাসে তারুণ্যের প্রত্যাশা

হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। পৃথিবী রবে যতদিন, বাংলা ভাষাও রবে ততদিন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বছর ঘুরে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সব ভাষা শহীদদের, সেইসব ভাষা-সংগ্রামীদের যাদের বুকের তাজা রক্তে ৫২’তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার পিচঢালা রাজপথ। “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” এ আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন ছিলো না, ছিলো প্রতিটি বাঙালির অস্তিত্বের আন্দোলন। ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির কাছে আত্মত্যাগ, শ্রদ্ধা ও অহংকারের মাস। বাঙালী জাতির কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার মাস ফেব্রুয়ারি। মহান এ ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে নিয়ে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব

বাঙালী জাতি হিসেবে গর্ব করার মতো অনেক কিছুর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের ভাষা। পৃথিবীতে এটিই একমাত্র ভাষা যে ভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে। ভাষার জন্য পৃথিবীর আর কোথাও কেউ জীবন দেয়নি, করেনি মরনপণ সংগ্রাম। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন ১৯৪৭ এ শুরু হয়েছিলো ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এসে তা পূর্ণতা পায়। মাতৃভাষার সাথে মানুষের সখ্যতা ও পথচলার ব্যাপ্তি পুরো জীবন পর্যন্ত। শৈশবের সেই আধো বোল থেকে শুরু করে পৌঢ়তা ও বার্ধক্য পর্যন্ত এই মাতৃভাষাই আমাদের মনের ভাব অন্যকে জানানোর প্রধান সম্বল। বাংলা ভাষা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে এক সূত্রে গাঁথতে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমি গর্বিত বাঙালী হিসেবে; একজন বাংলাভাষী হিসেবে আমার ভাষাই আমার গর্ব।
আসিক আদনান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

সর্বস্তরে হোক বাংলা ভাষার প্রচলন

বাঙালি জাতির দিন বদলের সূচনা হয়েছিল শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারের হাত ধরেই। বাঙালিরাই ইতিহাসের প্রথম জাতি যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে। আজ সেই বাংলা ভাষাকে আমরা ভুলতে বসেছি। কথায় কথায় বাংলার সাথে ইংরেজির মিশ্রণ ঘটাচ্ছি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষাতে জোর দিচ্ছে। দেশে গড়ে উঠা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলতে জানে না, বাংলা বলতে নাকি তাদের কষ্ট হয়; যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমাদের সন্তানদের এ অভ্যাস থেকে বের করে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম দিতে হবে। চিঠি-আমন্ত্রণপত্র, তরুণ প্রজন্মের ক্ষুদে বার্তা সহ সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রতি জোর দিতে হবে। শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা ও বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে এবং বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র নিশ্চিত করতে হবে।

নাঈমা আক্তার নুন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

অপপ্রয়োগের কবলে বাংলা ভাষা

ভাষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির মতো বাঙ্গালিও নিজস্ব ভাষা লালন করছে হাজার বছর ধরে, জীবন উৎসর্গ করেও।অথচ এতো ত্যাগ তিতিক্ষাময় “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলা” আজ হুমকির মুখে। প্রযুক্তির এই যুগে অপসংস্কৃতির প্রভাব আধুনিক প্রজন্মকে যেভাবে গ্রাস করছে তাতে করে বাংলা ভাষারও অপপ্রয়োগ চোখে পড়ছে।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই তারা বাংলিশ ব্যবহার করছে, হিন্দি-ইংলিশ চর্চাও বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এতে করে বাংলা ভাষা ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর! হয়তো একসময় এ প্রজন্ম সহজে বাংলা লিখতে পারবে না, স্বাচ্ছন্দ্যে বলতেও পারবে না। তাই এখনি এটি প্রতিহত করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে পারিবারিক শিক্ষাতে বাচ্চাদের দেশপ্রেম ও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে হবে। ব্যাপক সাহিত্য চর্চায় বাংলা ভাষার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে।
রুকাইয়া মিজান মিমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

আঞ্চলিক ভাষাকে রক্ষা করি

বাংলা ভাষার একটা বড় বৈশিষ্ট্যই হলো বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন রকম আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন। যাদের রয়েছে নিজস্ব শব্দকোষ ও রীতি। যা বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ দিয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করছে। শুধু কথায় নয় প্রাচীনযুগ থেকে আঞ্চলিক ভাষা কবিতা গান, সাহিত্য বা নাটকের সংলাপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায়, অনেকেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ তো করেনই না, বরং হীনমন্যতায় ভোগেন। আমাদের মনে রাখা উচিত আঞ্চলিকতা মানে সংকীর্ণতা বা অনাধুনিকতা নয়, এটা আমাদের ঐতিহ্য। তাই ভাষার এই বৈচিত্রতা টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে।

রেজওয়ান আহম্মেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

ভাষার মাসে তারুণ্যের প্রত্যাশা

প্রকাশিত : ১২:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। পৃথিবী রবে যতদিন, বাংলা ভাষাও রবে ততদিন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বছর ঘুরে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সব ভাষা শহীদদের, সেইসব ভাষা-সংগ্রামীদের যাদের বুকের তাজা রক্তে ৫২’তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার পিচঢালা রাজপথ। “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” এ আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন ছিলো না, ছিলো প্রতিটি বাঙালির অস্তিত্বের আন্দোলন। ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির কাছে আত্মত্যাগ, শ্রদ্ধা ও অহংকারের মাস। বাঙালী জাতির কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার মাস ফেব্রুয়ারি। মহান এ ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে নিয়ে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব

বাঙালী জাতি হিসেবে গর্ব করার মতো অনেক কিছুর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের ভাষা। পৃথিবীতে এটিই একমাত্র ভাষা যে ভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে। ভাষার জন্য পৃথিবীর আর কোথাও কেউ জীবন দেয়নি, করেনি মরনপণ সংগ্রাম। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন ১৯৪৭ এ শুরু হয়েছিলো ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এসে তা পূর্ণতা পায়। মাতৃভাষার সাথে মানুষের সখ্যতা ও পথচলার ব্যাপ্তি পুরো জীবন পর্যন্ত। শৈশবের সেই আধো বোল থেকে শুরু করে পৌঢ়তা ও বার্ধক্য পর্যন্ত এই মাতৃভাষাই আমাদের মনের ভাব অন্যকে জানানোর প্রধান সম্বল। বাংলা ভাষা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে এক সূত্রে গাঁথতে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমি গর্বিত বাঙালী হিসেবে; একজন বাংলাভাষী হিসেবে আমার ভাষাই আমার গর্ব।
আসিক আদনান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

সর্বস্তরে হোক বাংলা ভাষার প্রচলন

বাঙালি জাতির দিন বদলের সূচনা হয়েছিল শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারের হাত ধরেই। বাঙালিরাই ইতিহাসের প্রথম জাতি যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে। আজ সেই বাংলা ভাষাকে আমরা ভুলতে বসেছি। কথায় কথায় বাংলার সাথে ইংরেজির মিশ্রণ ঘটাচ্ছি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষাতে জোর দিচ্ছে। দেশে গড়ে উঠা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলতে জানে না, বাংলা বলতে নাকি তাদের কষ্ট হয়; যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমাদের সন্তানদের এ অভ্যাস থেকে বের করে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম দিতে হবে। চিঠি-আমন্ত্রণপত্র, তরুণ প্রজন্মের ক্ষুদে বার্তা সহ সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রতি জোর দিতে হবে। শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা ও বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে এবং বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র নিশ্চিত করতে হবে।

নাঈমা আক্তার নুন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

অপপ্রয়োগের কবলে বাংলা ভাষা

ভাষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির মতো বাঙ্গালিও নিজস্ব ভাষা লালন করছে হাজার বছর ধরে, জীবন উৎসর্গ করেও।অথচ এতো ত্যাগ তিতিক্ষাময় “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলা” আজ হুমকির মুখে। প্রযুক্তির এই যুগে অপসংস্কৃতির প্রভাব আধুনিক প্রজন্মকে যেভাবে গ্রাস করছে তাতে করে বাংলা ভাষারও অপপ্রয়োগ চোখে পড়ছে।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই তারা বাংলিশ ব্যবহার করছে, হিন্দি-ইংলিশ চর্চাও বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এতে করে বাংলা ভাষা ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর! হয়তো একসময় এ প্রজন্ম সহজে বাংলা লিখতে পারবে না, স্বাচ্ছন্দ্যে বলতেও পারবে না। তাই এখনি এটি প্রতিহত করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে পারিবারিক শিক্ষাতে বাচ্চাদের দেশপ্রেম ও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে হবে। ব্যাপক সাহিত্য চর্চায় বাংলা ভাষার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে।
রুকাইয়া মিজান মিমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

আঞ্চলিক ভাষাকে রক্ষা করি

বাংলা ভাষার একটা বড় বৈশিষ্ট্যই হলো বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন রকম আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন। যাদের রয়েছে নিজস্ব শব্দকোষ ও রীতি। যা বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ দিয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করছে। শুধু কথায় নয় প্রাচীনযুগ থেকে আঞ্চলিক ভাষা কবিতা গান, সাহিত্য বা নাটকের সংলাপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায়, অনেকেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ তো করেনই না, বরং হীনমন্যতায় ভোগেন। আমাদের মনে রাখা উচিত আঞ্চলিকতা মানে সংকীর্ণতা বা অনাধুনিকতা নয়, এটা আমাদের ঐতিহ্য। তাই ভাষার এই বৈচিত্রতা টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে।

রেজওয়ান আহম্মেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়