০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কৃষিতে বেড়েছে যন্ত্রের ব্যবহার

এক জোড়া গরু বা মহিষ, এদের গলায় জোয়াল আর বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাঁধা লাঙল কিংবা মই। সঙ্গে কোদাল, হাতে তৈরি নিড়ানি যন্ত্র, ছেনি, কাস্তে বা অন্যান্য ছোটখাটো সরঞ্জাম। এসবই ছিল একসময় জমি চাষ, জমি সমান করা, ফসল ফলানো, কাটা বা মাড়াই করার কাজে ব্যবহূত কৃষি যন্ত্রপাতি।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে কৃষিকাজের ধরন। পুরনো পদ্ধতির এসব কৃষি যন্ত্রপাতির জায়গা দখল করেছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। বিশেষ করে শিল্প এলাকাসমৃদ্ধ গাজীপুরে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি মাঠে এখন প্রযুক্তির সম্ভার। পাওয়ার টিলার, ফসল কর্তনের জন্য রিপার এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টর, ফসল মাড়াইয়ের জন্য থ্রেসার ইত্যাদি যন্ত্র থাকলেও গাজীপুরের কৃষকরা তাদের জমিতে নতুন পেয়েছে রোপণযন্ত্র ট্রান্সপ্লান্টার। দিন দিন বাড়ছে এসব যন্ত্রের ব্যবহার। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের অভাব লাঘব হচ্ছে, অন্যদিকে সময় বাঁচছে, খরচও কমছে।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট কর্ষিত জমির পরিমাণ ৯৫ হাজার ৫২১ হেক্টর। এসব জমি কর্ষণের কাজে ব্যবহূত হচ্ছে ১ হাজার ৮৪৩টি পাওয়ার টিলার এবং ৪৩টি ট্রাক্টর। ফসল কর্তনের জন্য রয়েছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ছয়টি, রিপার রয়েছে ছয়টি, ধান গম সরিষা ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের জন্য ম্যানুয়েল থ্রেসার রয়েছে ৬৩৮টি এবং পাওয়ার থ্রেসার রয়েছে ১১০টি। এসব যন্ত্রের পাশাপাশি সর্বশেষ যোগ হয়েছে রোপণযন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। তবে এটি শুধু কালিগঞ্জ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সরকারি এ যন্ত্রের মাধ্যমে উপজেলার বাঙালহাওলা এলাকার ৯০ জন নির্বাচিত কৃষকের ৫০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, অল্প সময়ে অধিক জমিতে চারা লাগাতে এ যন্ত্রটি অনন্য। কৃষকের খরচও অনেক কম লাগে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়। নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধার পাশাপাশি চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। ট্রের মাধ্যমে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলে আলাদাভাবে বীজতলা তৈরির জন্যও কৃষকদের চিন্তা করতে হবে না।

গাজীপুর গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ বলেন, আগের পদ্ধতিতে কৃষিকাজের জন্য মূলত কৃষি শ্রমিকের ওপর ভরসা করতে হতো। শিল্পায়নে সমৃদ্ধ গাজীপুরে শ্রমিকের সংকট। পাওয়া গেলেও তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হয়। এ কারণে কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে এখন আর শ্রমিকের কথা ভাবতে হয় না। প্রযুক্তিই বদলে দিয়েছে এ এলাকার কৃষির চিত্র।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, গাজীপুর একটি শিল্পসমৃদ্ধ জেলা হওয়ার কারণে এখানে কৃষি মৌসুমে শ্রমিকের প্রচুর সংকট দেখা যায়। ফলে কৃষিকাজে কৃষকদের খরচ বেড়ে যায় অনেক। এজন্য কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ না করে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করছেন। এতে কৃষি শ্রমিক নিয়ে কৃষকদের ভাবতে হচ্ছে না। কৃষকদের খরচ অনেক কম হচ্ছে। সরকার কৃষিতে বীজ, সার, ও নানা ধরনের যন্ত্র কিনতে কৃষকদের ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিচ্ছে। বর্তমানে গাজীপুরের সিংহভাগ কৃষকের মাঠে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা কম সময়ে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন যাতে করতে পারেন, সেজন্য সরকার কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশের মতো গাজীপুরেও এর সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

কৃষিতে বেড়েছে যন্ত্রের ব্যবহার

প্রকাশিত : ১২:০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১

এক জোড়া গরু বা মহিষ, এদের গলায় জোয়াল আর বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাঁধা লাঙল কিংবা মই। সঙ্গে কোদাল, হাতে তৈরি নিড়ানি যন্ত্র, ছেনি, কাস্তে বা অন্যান্য ছোটখাটো সরঞ্জাম। এসবই ছিল একসময় জমি চাষ, জমি সমান করা, ফসল ফলানো, কাটা বা মাড়াই করার কাজে ব্যবহূত কৃষি যন্ত্রপাতি।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে কৃষিকাজের ধরন। পুরনো পদ্ধতির এসব কৃষি যন্ত্রপাতির জায়গা দখল করেছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। বিশেষ করে শিল্প এলাকাসমৃদ্ধ গাজীপুরে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি মাঠে এখন প্রযুক্তির সম্ভার। পাওয়ার টিলার, ফসল কর্তনের জন্য রিপার এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টর, ফসল মাড়াইয়ের জন্য থ্রেসার ইত্যাদি যন্ত্র থাকলেও গাজীপুরের কৃষকরা তাদের জমিতে নতুন পেয়েছে রোপণযন্ত্র ট্রান্সপ্লান্টার। দিন দিন বাড়ছে এসব যন্ত্রের ব্যবহার। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের অভাব লাঘব হচ্ছে, অন্যদিকে সময় বাঁচছে, খরচও কমছে।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট কর্ষিত জমির পরিমাণ ৯৫ হাজার ৫২১ হেক্টর। এসব জমি কর্ষণের কাজে ব্যবহূত হচ্ছে ১ হাজার ৮৪৩টি পাওয়ার টিলার এবং ৪৩টি ট্রাক্টর। ফসল কর্তনের জন্য রয়েছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ছয়টি, রিপার রয়েছে ছয়টি, ধান গম সরিষা ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের জন্য ম্যানুয়েল থ্রেসার রয়েছে ৬৩৮টি এবং পাওয়ার থ্রেসার রয়েছে ১১০টি। এসব যন্ত্রের পাশাপাশি সর্বশেষ যোগ হয়েছে রোপণযন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। তবে এটি শুধু কালিগঞ্জ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সরকারি এ যন্ত্রের মাধ্যমে উপজেলার বাঙালহাওলা এলাকার ৯০ জন নির্বাচিত কৃষকের ৫০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, অল্প সময়ে অধিক জমিতে চারা লাগাতে এ যন্ত্রটি অনন্য। কৃষকের খরচও অনেক কম লাগে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়। নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধার পাশাপাশি চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। ট্রের মাধ্যমে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলে আলাদাভাবে বীজতলা তৈরির জন্যও কৃষকদের চিন্তা করতে হবে না।

গাজীপুর গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ বলেন, আগের পদ্ধতিতে কৃষিকাজের জন্য মূলত কৃষি শ্রমিকের ওপর ভরসা করতে হতো। শিল্পায়নে সমৃদ্ধ গাজীপুরে শ্রমিকের সংকট। পাওয়া গেলেও তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হয়। এ কারণে কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে এখন আর শ্রমিকের কথা ভাবতে হয় না। প্রযুক্তিই বদলে দিয়েছে এ এলাকার কৃষির চিত্র।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, গাজীপুর একটি শিল্পসমৃদ্ধ জেলা হওয়ার কারণে এখানে কৃষি মৌসুমে শ্রমিকের প্রচুর সংকট দেখা যায়। ফলে কৃষিকাজে কৃষকদের খরচ বেড়ে যায় অনেক। এজন্য কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ না করে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করছেন। এতে কৃষি শ্রমিক নিয়ে কৃষকদের ভাবতে হচ্ছে না। কৃষকদের খরচ অনেক কম হচ্ছে। সরকার কৃষিতে বীজ, সার, ও নানা ধরনের যন্ত্র কিনতে কৃষকদের ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিচ্ছে। বর্তমানে গাজীপুরের সিংহভাগ কৃষকের মাঠে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা কম সময়ে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন যাতে করতে পারেন, সেজন্য সরকার কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশের মতো গাজীপুরেও এর সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা।