০৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাঁতপল্লীতে ফিরেছে চাঞ্চল্য

দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বন্ধ ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে এ খাতের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার পরিবার। অবশেষে গত ১১ জানুয়ারি থেকে পুনরায় চালু হয়েছে জেলার তাঁতপল্লীগুলো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির এ খাতে পুনরায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনগর তাঁতপল্লী ঘুরে দেখা যায়, মুঠা-মাকু-চরখার (সুতা বুনার বিশেষ যন্ত্র) শব্দ ও কাপড়ের নতুন রঙের গন্ধ জানান দিচ্ছে কর্মচাঞ্চল্যের। সুতায় বেনারসি, কাতান, গরদ, মটকা, সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, মসলিন সিল্ক, থ্রি-পিস বুনছেন তাঁতশিল্পীরা।

১২ বছর ধরে তাঁত শিল্পের সুতা বোনার কাজ করেন শ্রী শুভাস। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ কাজেই নিয়োজিত আছি। করোনার সময় কাজ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়ি। অন্য সব পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেও কাপড়ের অর্ডার না থাকায় আমাদের কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হয়। পরিবার চালাতে ব্যাপক হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেক সময় একবেলা খাবার জুটেছে, তো অন্য বেলা জোটেনি। তবে এখন টুকটাক অর্ডার শুরু হওয়ায় কাজ ফিরে পেয়েছি।

আরেক তাঁতশিল্পী সুশান্ত দাস জানান, দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর আবার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুধু আড়ং আমাদের থেকে কাপড় কিনে নিচ্ছে। করোনায় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে লবণ ভাত খাওয়ার মতোও টাকা ছিল না। এখন ভালো লাগছে, কারণ কাজ শুরু করতে পেরেছি। তাঁত শিল্প নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।

দেব সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ত্রিদেব দাস বলেন, আড়ং ছাড়া এখনো কেউ কাপড় নিতে শুরু করেনি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে সরকার এগিয়ে এলে করোনাকালীন ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

মৌসুমী সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী গদাধর দাস জানান, গত মাসে তাঁতপল্লীতে বস্ত্র ও পাঠমন্ত্রী এসেছিলেন। তিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনাকালে তাঁতসংশ্লিষ্টদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার তাদের পাশে রয়েছে। তাঁত শিল্পের জন্য বিনা সুদে ঋণের দাবি করলে মন্ত্রী ৪ শতাংশ হারে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেম কুমার দাস বলেন, এ গ্রামে প্রায় ২০০ পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে তাঁত বুননের কাজ করছি। বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা অপ্রতুল। তাই প্রযুক্তি সহায়তা ও সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে টিকে থাকবে মৃতপ্রায় তাঁত শিল্প। বিদেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিদেশে তাঁতপণ্য রফতানির উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশম বীজাগারের ফার্ম ম্যানেজার আফজাল হোসেন জানান, করোনায় তাঁত শিল্পে সংশ্লিষ্টদের দুরবস্থার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকার অবগত রয়েছে। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও রেশম বোর্ড বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

লোহাগাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দিনমজুরের মৃত্যু, গাছেই ঝুলছিল ম’র’দে’হ

তাঁতপল্লীতে ফিরেছে চাঞ্চল্য

প্রকাশিত : ১২:০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বন্ধ ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে এ খাতের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার পরিবার। অবশেষে গত ১১ জানুয়ারি থেকে পুনরায় চালু হয়েছে জেলার তাঁতপল্লীগুলো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির এ খাতে পুনরায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনগর তাঁতপল্লী ঘুরে দেখা যায়, মুঠা-মাকু-চরখার (সুতা বুনার বিশেষ যন্ত্র) শব্দ ও কাপড়ের নতুন রঙের গন্ধ জানান দিচ্ছে কর্মচাঞ্চল্যের। সুতায় বেনারসি, কাতান, গরদ, মটকা, সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, মসলিন সিল্ক, থ্রি-পিস বুনছেন তাঁতশিল্পীরা।

১২ বছর ধরে তাঁত শিল্পের সুতা বোনার কাজ করেন শ্রী শুভাস। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ কাজেই নিয়োজিত আছি। করোনার সময় কাজ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়ি। অন্য সব পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেও কাপড়ের অর্ডার না থাকায় আমাদের কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হয়। পরিবার চালাতে ব্যাপক হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেক সময় একবেলা খাবার জুটেছে, তো অন্য বেলা জোটেনি। তবে এখন টুকটাক অর্ডার শুরু হওয়ায় কাজ ফিরে পেয়েছি।

আরেক তাঁতশিল্পী সুশান্ত দাস জানান, দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর আবার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুধু আড়ং আমাদের থেকে কাপড় কিনে নিচ্ছে। করোনায় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে লবণ ভাত খাওয়ার মতোও টাকা ছিল না। এখন ভালো লাগছে, কারণ কাজ শুরু করতে পেরেছি। তাঁত শিল্প নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।

দেব সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ত্রিদেব দাস বলেন, আড়ং ছাড়া এখনো কেউ কাপড় নিতে শুরু করেনি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে সরকার এগিয়ে এলে করোনাকালীন ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

মৌসুমী সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী গদাধর দাস জানান, গত মাসে তাঁতপল্লীতে বস্ত্র ও পাঠমন্ত্রী এসেছিলেন। তিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনাকালে তাঁতসংশ্লিষ্টদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার তাদের পাশে রয়েছে। তাঁত শিল্পের জন্য বিনা সুদে ঋণের দাবি করলে মন্ত্রী ৪ শতাংশ হারে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেম কুমার দাস বলেন, এ গ্রামে প্রায় ২০০ পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে তাঁত বুননের কাজ করছি। বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা অপ্রতুল। তাই প্রযুক্তি সহায়তা ও সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে টিকে থাকবে মৃতপ্রায় তাঁত শিল্প। বিদেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিদেশে তাঁতপণ্য রফতানির উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশম বীজাগারের ফার্ম ম্যানেজার আফজাল হোসেন জানান, করোনায় তাঁত শিল্পে সংশ্লিষ্টদের দুরবস্থার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকার অবগত রয়েছে। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও রেশম বোর্ড বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।