০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা: রণাঙ্গন থেকে জনতা

  • তাকী জোবায়ের
  • প্রকাশিত : ০১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 38

কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জনতা ব্যাংকের দায়িত্ব তুলে দিলেন, তখনও অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তাঁর নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় যাত্রা শুরু করেছে এক সময়ে সংকটে জর্জরিত থাকা জনতা ব্যাংক। নিজের জীবন দর্শন, সাফল্যের সূত্র এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজকের বিজনেস বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেদক তাকী জোবায়ের

 

কিশোর বয়সেই কিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়লেন?
সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু যখন রংপুরে যাচ্ছিলেন তখন প্রথম বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি দেখি। রংপুর যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় পথসভা করেছিলেন। গ্রামের লোকদের সঙ্গে আমিও যোগ দেই। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর ওই পথসভায় আমি স্লোগান ধরেছিলাম। এরপর রেডিওতে আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি শুনি। এই ভাষণই ছিল মূলত আমার যুদ্ধে যোগ দেওয়ার টার্নিং পয়েন্ট। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বেড়া থানার নারিকেল বাড়িতে ম্যাসাকার করে। ওই সময় আমার এক শিক্ষককেও পাক সেনাবাহিনী গুলি করে মেরে ফেলে। পরের দিন আমাদের পাশের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে প্রায় ৫শ লোক মেরে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী। এর পরের দিন পাকিস্তানি আর্মি আমাদের গ্রামে ঢোকে। তখন আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমরা পেছনের কৃষি জমি দিয়ে পালিয়ে যাই। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই, আমি ভারত গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেব। কুদ্দুস নামে আমাদের গ্রামে একজন আর্মি কনস্টেবল ছিলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। ঘরের সিন্দুক থেকে আমি স্বর্ণের একটি আংটি চুরি করেছিলাম। জুন মাসের একদিন ভোর রাতে ওই আর্মি কনস্টেবল আমার ঘরের দরজায় টোকা দিলে আমি তার সঙ্গে বেরিয়ে যাই। ৫০ টাকায় আংটিটি বিক্রি করে দেই। এরপর কয়েক গ্রাম হয়ে যমুনা নদী ধরে আমরা আসামের মাইনকারচরের উদ্দেশে যাত্রা করি। পথিমধ্যে রাজাকারদের হাতে আমরা ধরা পড়ি। তখন গ্রামের কিছু মানুষ আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন। আটকা পড়ে যাওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের। অক্টোবরে অধ্যাপক আবু সায়িদের লোকজনের সঙ্গে ভারত গেলাম যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। দশদিন দশরাত যমুনা নদীতে ভাসতে ভাসতে আসামের মাইনকার চর হয়ে পশ্চিমবঙ্গে গেলাম আমরা। প্রশিক্ষণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে কুষ্টিয়া দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকি। এরপর শাহজাদপুর মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে উঠে যুদ্ধে যোগ দেই।

আপনি দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে সাফল্য দেখিয়েছেন। এই সাফল্যের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কি?
সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন বঙ্গবন্ধু। সত্তরের দশকেই বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, চেতনা, আদর্শ আমার মাঝে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধু যদি টুঙ্গিপাড়ার মতো গ্রাম থেকে উঠে এসে একটি জাতির নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে জনতা ব্যাংকতো খুব বড় কোনো জিনিস না; তাহলে আমারা জনতা ব্যাংককে ঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো না কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কোভিডের মধ্যে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন, সেই অনুপ্রেরণাই আমার মাঝে কাজ করেছে। আমি যদি জনতা ব্যাংকের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে সেটা দেশের জন্যই কিছু করা হবে। আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এর প্রতিদানে যদি কিছু না দিতে পারি তাহলে আমার কাছে লজ্জাজনক মনে হয়। আরও দুই বছর ব্যাংকটির দায়িত্বে থাকবো। এই সময়ে ব্যাংকটিকে যেন আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি, জনতাকে জনতার ব্যাংকে রূপান্তরিত করতে পারি, এশিয়া মহাদেশের অন্যতম ব্যাংকে পরিণত করতে পারি, বাংলাদেশের একটি আদর্শ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারি, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

আপনার দায়িত্ব পালনকালে জনতা ব্যাংক লাখ কোটি টাকার ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এই সাফল্য কিভাবে পেলেন?
আমি যখন দায়িত্ব পাই তখন ব্যাংকটি সমস্যায় জর্জরিত ছিল। খেলাপি ঋণের বোঝা ছিল প্রচুর। আমানতের পরিমাণও কমে যাচ্ছিল। আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি, অজ পাড়া গাঁয়েও ব্যাংকিং করেছি; তাই ব্যাংককে সঠিক পথে চালাতে কোথায় ‘হিট’ করতে হবে সেটা আমার ঠিকভাবে জানা ছিল। যখন দায়িত্ব নেই তখন কয়েকটি চ্যালেঞ্জ ছিল ব্যাংকের কোয়ালিটি অব অ্যাসেট বাড়াতে হবে, ক্যাপিটাল ও লিকুইডিটি বেইজ তৈরি করতে হবে। ২০১৯ সালেই আমরা ‘নয় ছয়’ সুদহার বাস্তবায়ন করি। তখন আমাদের তারল্যে ঘাটতি ছিল। আমি ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন কর্পোরেশনের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছ থেকে লো কস্ট ডিপোজিট সংগ্রহ করেছি। এজন্য আমাদের কস্ট অব ডিপোজিট সবচেয়ে কম; মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের ডিপোজিট বেইজ ৬৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ালো। আমাদের অ্যাসেটের কোয়ালিটিও বাড়লো। এক পর্যায়ে আমাদের ২১ হাজার ৫শ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে এবার ১৩ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। আমাদের বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ বিশ্রেণীকরনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। ইতোমধ্যে ডাউনপেমেন্ট জমা হয়েছে। আমাদের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। সেটা এখন কমে হয়েছে ২২ শতাংশ। এবছরের মধ্যে ১৫ শতাংশের ভেতরে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিকভাবে সম্পদের মানোন্নয়ন, লো কস্ট আমানত বৃদ্ধি, শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা এসব কারণেই আমাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে আমাদের সম্পদ ছিল ৮৪ হাজার কোটি টাকার; সেটা ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে ২০২০ সালে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কারণে আমরা ব্যাংককে এগিয়ে নিতে পেরেছি।

বিগত দিনে দেশে অনেকগুলো বড় ঋণ কেলেঙ্করির ঘটনা ঘটেছে যেগুলো আর আদায় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনতা ব্যাংক দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এই অসাধ্য কিভাবে সাধন করলেন?
বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকপক্ষ দেশ থেকে চলে গিয়েছিল। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল। তাদের ঋণ ২০১৪ সাল থেকে অবলোপন হয়ে আছে। আমরা পুরনো গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। এই ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে আমাদের ব্যাংকের যে কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন তারা সাসপেনশনে আছেন; এদের ২/১ জনের সঙ্গে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকদের যোগাযোগ ছিল। ওই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা আমাদের কাছে আবেদন করে ঋণ নিয়মিত করার জন্য। তারা ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিত করার আবেদন করেছিল। কিন্তু যেহেতু তাদের ঋণ অবলোপন ছিল তাই ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ ছিল না। তাদেরকে আইন অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের সময় দেওয়া যেত। তাদের যে বিলগুলো ছিল, যেগুলো ধরে ধরে দেশে টাকা আসলেই ওই অর্থটা বৈধ হবে। বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সেখান থেকে দেশে টাকা পাঠানো একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। যোগাযোগ হওয়ার পর প্রথমে ৪৬ লাখ টাকা পাঠালো। সে শুরুতে আস্থা পাচ্ছিল না। আমি পর্ষদ সদস্যদের বুঝালাম, আইনগত মতামত নিলাম, বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলাম। তাদেরকে পুনঃতফসিল আমরা দেইনি। সময় দেওয়া হয়েছে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা টাকাটা পরিশোধ করবে। টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে খেলাপির তালিকাতেই থাকবে। বৈধ পথেই বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে ১৮ কোটি টাকা চলে আসলো। এই টাকা নস্ট্র অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হিট করেছে। তাদেরকে এলিফ্যান্ট রোড শাখার ২১ কোটি টাকা আগামি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি। এরপর কর্পোরেট ভবন ও মগবাজার শাখার টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। আমাদের ঋণটা পুরোপুরি আনসারটেইন ছিল। এখন আমরা আশা করছি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের টাকাগুলো আমরা আদায় করতে পারবো।

জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কে যদি বলতেন?
জনতা ব্যাংকে বিশৃংখলার জন্য কিছু খারাপ কর্মকর্তা ছিল দায়ী। এরকম প্রায় আড়াইশ কর্মীকে আমি শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। যারাই ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ ঋণ সৃষ্টি করেছে এমন প্রতিটি কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, অনেককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিগত দুই বছরে আমাদের ব্যাংকে কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। এই কোভিডের মধ্যেও ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ম-নীতি ও শৃংখলার মধ্যে রেখেছি। আমাদের বিশাল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক; ছোটখাট অনিয়ম হতে পারে, তবে সেগুলোর বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

সামনের দিনে জনতা ব্যাংক নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আমি কিশোর বয়সে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। রক্তে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা মিশে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ত্যাগ-তিতীক্ষা নিয়ে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে এসেছেন, সেই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য আমাদের। আমি চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে জনতা ব্যাংককে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। আমি যখন ব্যাংকটির দায়িত্ব নেই তখন নানা প্রতিকূলতা ছিল, খেলাপি ঋণ ছিল প্রচুর, অব্যবস্থাপনা ছিল; এই অবস্থা থেকে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা এটা অনেক কঠিক কাজ ছিল। যখন খেলাপি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল তখন সবাই বলেছিল জনতা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ঋণাত্মক হবে। ওই অবস্থা থেকেই আমরা ব্যাংকটিকে ঘুড়ে দাড় করিয়েছি। ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের ৭০৬ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। অন্য ব্যাংক থেকে জনতা ব্যাংকের গুণগত তফাততো এখানেই। এক হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঝুঁকি সামলাতে ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগেছিল সোনালী ব্যাংকের। অথচ আমাদের এত বিপুল পরিমাণ খেলাপির চাপ সামলাতে এক বছরও লাগেনি। ২০২০ সালেও আমাদের সাড়ে ৯শ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে। ২০২১ সালে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, আমানতের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করা। ইতোমধ্যে ৯০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে গেছে আমানত। পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য দেড় হাজার কোটি টাকা। এটাও সম্ভব হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রতিদিন কাজ করেছি। তখন আমরা কোন অজুহাত দেখাইনি, রাত আটটা নয়টা পর্যন্ত কাজ করেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য দশদিন দশরাত পানিতে ভেসে থাকতে পারে তারা যেকোন পরিস্থিতিতেই লড়াই করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ ধারণ করে সেই প্রেরণা সব কর্মীদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাংকটিকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জনতা ব্যাংক জনতার ব্যাংকেই রূপান্তরিত হবে ইনশাআল্লাহ।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিস্কৃত যুবদলের দুই নেতা, নিহত জুবায়ের যুবলীগের কর্মী

বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা: রণাঙ্গন থেকে জনতা

প্রকাশিত : ০১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জনতা ব্যাংকের দায়িত্ব তুলে দিলেন, তখনও অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তাঁর নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় যাত্রা শুরু করেছে এক সময়ে সংকটে জর্জরিত থাকা জনতা ব্যাংক। নিজের জীবন দর্শন, সাফল্যের সূত্র এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজকের বিজনেস বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেদক তাকী জোবায়ের

 

কিশোর বয়সেই কিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়লেন?
সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু যখন রংপুরে যাচ্ছিলেন তখন প্রথম বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি দেখি। রংপুর যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় পথসভা করেছিলেন। গ্রামের লোকদের সঙ্গে আমিও যোগ দেই। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর ওই পথসভায় আমি স্লোগান ধরেছিলাম। এরপর রেডিওতে আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি শুনি। এই ভাষণই ছিল মূলত আমার যুদ্ধে যোগ দেওয়ার টার্নিং পয়েন্ট। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বেড়া থানার নারিকেল বাড়িতে ম্যাসাকার করে। ওই সময় আমার এক শিক্ষককেও পাক সেনাবাহিনী গুলি করে মেরে ফেলে। পরের দিন আমাদের পাশের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে প্রায় ৫শ লোক মেরে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী। এর পরের দিন পাকিস্তানি আর্মি আমাদের গ্রামে ঢোকে। তখন আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমরা পেছনের কৃষি জমি দিয়ে পালিয়ে যাই। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই, আমি ভারত গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেব। কুদ্দুস নামে আমাদের গ্রামে একজন আর্মি কনস্টেবল ছিলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। ঘরের সিন্দুক থেকে আমি স্বর্ণের একটি আংটি চুরি করেছিলাম। জুন মাসের একদিন ভোর রাতে ওই আর্মি কনস্টেবল আমার ঘরের দরজায় টোকা দিলে আমি তার সঙ্গে বেরিয়ে যাই। ৫০ টাকায় আংটিটি বিক্রি করে দেই। এরপর কয়েক গ্রাম হয়ে যমুনা নদী ধরে আমরা আসামের মাইনকারচরের উদ্দেশে যাত্রা করি। পথিমধ্যে রাজাকারদের হাতে আমরা ধরা পড়ি। তখন গ্রামের কিছু মানুষ আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন। আটকা পড়ে যাওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের। অক্টোবরে অধ্যাপক আবু সায়িদের লোকজনের সঙ্গে ভারত গেলাম যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। দশদিন দশরাত যমুনা নদীতে ভাসতে ভাসতে আসামের মাইনকার চর হয়ে পশ্চিমবঙ্গে গেলাম আমরা। প্রশিক্ষণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে কুষ্টিয়া দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকি। এরপর শাহজাদপুর মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে উঠে যুদ্ধে যোগ দেই।

আপনি দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে সাফল্য দেখিয়েছেন। এই সাফল্যের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কি?
সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন বঙ্গবন্ধু। সত্তরের দশকেই বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, চেতনা, আদর্শ আমার মাঝে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধু যদি টুঙ্গিপাড়ার মতো গ্রাম থেকে উঠে এসে একটি জাতির নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে জনতা ব্যাংকতো খুব বড় কোনো জিনিস না; তাহলে আমারা জনতা ব্যাংককে ঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো না কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কোভিডের মধ্যে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন, সেই অনুপ্রেরণাই আমার মাঝে কাজ করেছে। আমি যদি জনতা ব্যাংকের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে সেটা দেশের জন্যই কিছু করা হবে। আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এর প্রতিদানে যদি কিছু না দিতে পারি তাহলে আমার কাছে লজ্জাজনক মনে হয়। আরও দুই বছর ব্যাংকটির দায়িত্বে থাকবো। এই সময়ে ব্যাংকটিকে যেন আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি, জনতাকে জনতার ব্যাংকে রূপান্তরিত করতে পারি, এশিয়া মহাদেশের অন্যতম ব্যাংকে পরিণত করতে পারি, বাংলাদেশের একটি আদর্শ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারি, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

আপনার দায়িত্ব পালনকালে জনতা ব্যাংক লাখ কোটি টাকার ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এই সাফল্য কিভাবে পেলেন?
আমি যখন দায়িত্ব পাই তখন ব্যাংকটি সমস্যায় জর্জরিত ছিল। খেলাপি ঋণের বোঝা ছিল প্রচুর। আমানতের পরিমাণও কমে যাচ্ছিল। আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি, অজ পাড়া গাঁয়েও ব্যাংকিং করেছি; তাই ব্যাংককে সঠিক পথে চালাতে কোথায় ‘হিট’ করতে হবে সেটা আমার ঠিকভাবে জানা ছিল। যখন দায়িত্ব নেই তখন কয়েকটি চ্যালেঞ্জ ছিল ব্যাংকের কোয়ালিটি অব অ্যাসেট বাড়াতে হবে, ক্যাপিটাল ও লিকুইডিটি বেইজ তৈরি করতে হবে। ২০১৯ সালেই আমরা ‘নয় ছয়’ সুদহার বাস্তবায়ন করি। তখন আমাদের তারল্যে ঘাটতি ছিল। আমি ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন কর্পোরেশনের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছ থেকে লো কস্ট ডিপোজিট সংগ্রহ করেছি। এজন্য আমাদের কস্ট অব ডিপোজিট সবচেয়ে কম; মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের ডিপোজিট বেইজ ৬৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ালো। আমাদের অ্যাসেটের কোয়ালিটিও বাড়লো। এক পর্যায়ে আমাদের ২১ হাজার ৫শ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে এবার ১৩ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। আমাদের বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ বিশ্রেণীকরনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। ইতোমধ্যে ডাউনপেমেন্ট জমা হয়েছে। আমাদের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। সেটা এখন কমে হয়েছে ২২ শতাংশ। এবছরের মধ্যে ১৫ শতাংশের ভেতরে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিকভাবে সম্পদের মানোন্নয়ন, লো কস্ট আমানত বৃদ্ধি, শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা এসব কারণেই আমাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে আমাদের সম্পদ ছিল ৮৪ হাজার কোটি টাকার; সেটা ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে ২০২০ সালে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কারণে আমরা ব্যাংককে এগিয়ে নিতে পেরেছি।

বিগত দিনে দেশে অনেকগুলো বড় ঋণ কেলেঙ্করির ঘটনা ঘটেছে যেগুলো আর আদায় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনতা ব্যাংক দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এই অসাধ্য কিভাবে সাধন করলেন?
বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকপক্ষ দেশ থেকে চলে গিয়েছিল। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল। তাদের ঋণ ২০১৪ সাল থেকে অবলোপন হয়ে আছে। আমরা পুরনো গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। এই ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে আমাদের ব্যাংকের যে কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন তারা সাসপেনশনে আছেন; এদের ২/১ জনের সঙ্গে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকদের যোগাযোগ ছিল। ওই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা আমাদের কাছে আবেদন করে ঋণ নিয়মিত করার জন্য। তারা ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিত করার আবেদন করেছিল। কিন্তু যেহেতু তাদের ঋণ অবলোপন ছিল তাই ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ ছিল না। তাদেরকে আইন অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের সময় দেওয়া যেত। তাদের যে বিলগুলো ছিল, যেগুলো ধরে ধরে দেশে টাকা আসলেই ওই অর্থটা বৈধ হবে। বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সেখান থেকে দেশে টাকা পাঠানো একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। যোগাযোগ হওয়ার পর প্রথমে ৪৬ লাখ টাকা পাঠালো। সে শুরুতে আস্থা পাচ্ছিল না। আমি পর্ষদ সদস্যদের বুঝালাম, আইনগত মতামত নিলাম, বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলাম। তাদেরকে পুনঃতফসিল আমরা দেইনি। সময় দেওয়া হয়েছে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা টাকাটা পরিশোধ করবে। টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে খেলাপির তালিকাতেই থাকবে। বৈধ পথেই বিসমিল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে ১৮ কোটি টাকা চলে আসলো। এই টাকা নস্ট্র অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হিট করেছে। তাদেরকে এলিফ্যান্ট রোড শাখার ২১ কোটি টাকা আগামি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি। এরপর কর্পোরেট ভবন ও মগবাজার শাখার টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। আমাদের ঋণটা পুরোপুরি আনসারটেইন ছিল। এখন আমরা আশা করছি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের টাকাগুলো আমরা আদায় করতে পারবো।

জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কে যদি বলতেন?
জনতা ব্যাংকে বিশৃংখলার জন্য কিছু খারাপ কর্মকর্তা ছিল দায়ী। এরকম প্রায় আড়াইশ কর্মীকে আমি শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। যারাই ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ ঋণ সৃষ্টি করেছে এমন প্রতিটি কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, অনেককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিগত দুই বছরে আমাদের ব্যাংকে কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। এই কোভিডের মধ্যেও ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ম-নীতি ও শৃংখলার মধ্যে রেখেছি। আমাদের বিশাল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক; ছোটখাট অনিয়ম হতে পারে, তবে সেগুলোর বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

সামনের দিনে জনতা ব্যাংক নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আমি কিশোর বয়সে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। রক্তে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা মিশে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ত্যাগ-তিতীক্ষা নিয়ে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে এসেছেন, সেই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য আমাদের। আমি চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে জনতা ব্যাংককে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। আমি যখন ব্যাংকটির দায়িত্ব নেই তখন নানা প্রতিকূলতা ছিল, খেলাপি ঋণ ছিল প্রচুর, অব্যবস্থাপনা ছিল; এই অবস্থা থেকে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা এটা অনেক কঠিক কাজ ছিল। যখন খেলাপি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল তখন সবাই বলেছিল জনতা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ঋণাত্মক হবে। ওই অবস্থা থেকেই আমরা ব্যাংকটিকে ঘুড়ে দাড় করিয়েছি। ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের ৭০৬ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। অন্য ব্যাংক থেকে জনতা ব্যাংকের গুণগত তফাততো এখানেই। এক হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঝুঁকি সামলাতে ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগেছিল সোনালী ব্যাংকের। অথচ আমাদের এত বিপুল পরিমাণ খেলাপির চাপ সামলাতে এক বছরও লাগেনি। ২০২০ সালেও আমাদের সাড়ে ৯শ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে। ২০২১ সালে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, আমানতের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করা। ইতোমধ্যে ৯০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে গেছে আমানত। পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য দেড় হাজার কোটি টাকা। এটাও সম্ভব হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রতিদিন কাজ করেছি। তখন আমরা কোন অজুহাত দেখাইনি, রাত আটটা নয়টা পর্যন্ত কাজ করেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য দশদিন দশরাত পানিতে ভেসে থাকতে পারে তারা যেকোন পরিস্থিতিতেই লড়াই করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ ধারণ করে সেই প্রেরণা সব কর্মীদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাংকটিকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জনতা ব্যাংক জনতার ব্যাংকেই রূপান্তরিত হবে ইনশাআল্লাহ।