০৪:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সার্বিয়ায় আটকা পড়েছেন কয়েকশ বাংলাদেশি

সার্বিয়ার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন কয়েকশ বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। মূলত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজিসের তথ্য অনুযায়ী, বলকান পেনিনসুলার এ দেশটিতে ৬ হাজার ৫৯১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী আশ্রয় নিয়েছেন যাদের মধ্যে প্রায় ২৬০ জনের মতো বাংলাদেশি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর দাবি অনুযায়ী দেশটিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি।
অর্থনৈতিকভাবে সার্বিয়া ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের পতন ঘটলে নাটকীয়ভাবে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি। মানবাধিকার সূচকে দেশটি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক নিচের অবস্থানে রয়েছে। সার্বিয়াতে দুর্নীতির মাত্রা অত্যন্ত বেশি এবং ইউরোপের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনের হারের দিক থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের পর সার্বিয়ার অবস্থান। সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী শহর সুবোটিচায় আটকাপড়া এক বাংলাদেশি বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে সার্বিয়াতে আটকা পড়েছি। এখন লক্ষ্য যে কোনোভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ ফ্রান্সে পা রাখা। ফ্রান্সে যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণও না হয়, তাহলে অন্যান্য উপায়েও কিছু নির্দিষ্ট শর্তপূরণের মাধ্যমে সেখানকার কাগজ পাওয়া যায়। অবৈধভাবেও বছরের পর বছর সেখানে বসবাস করলে কেউ কিছু বলে না। কীভাবে তিনি সার্বিয়াতে পৌঁছালেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ২০১৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় আজারবাইজানে আসি। আজারবাইজান থেকে তুরস্কে ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাই এক বছর পর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তুরস্কে চলে যাই। তুরস্ক থেকে গ্রিস, গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া এবং মেসিডোনিয়া থেকে সার্বিয়াতে আসি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়ার ভেতর দিয়ে ইতালি এবং ইতালি থেকে ফ্রান্সে যাওয়া। কীভাবে তিনি ইতালি যাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিভিন্ন ধরনের দালাল আছে এখানে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার চুক্তির মাধ্যমে দালালদের সহায়তায় হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানে দালালদের আগে থেকেই নির্ধারিত গাড়িতে করে ইতালিতে যাওয়া যায়। এজন্য রুট ভেদে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আছে। সেক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের হেরফের হয়। সাধারণত ২ হাজার থেকে ৬ হাজার ইউরো দালালকে দিতে হয়। যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে বর্ডার পার হতে কয়েকদিন লাগে। পানি ও কয়েকদিনের শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে রাজা-বাদশাহদের রাজ্য জয়ের মতো সীমান্ত জয় করতে হয়। জঙ্গলেই রাত কাটাই। এত কষ্ট করে সীমান্তে পৌঁছানোর পর সীমান্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তারা ফেরত পাঠায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকতে পারে। কেউবা কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হয়। অনেকে পথে মারাও যায়। সার্বিয়া কিংবা ক্রোয়েশিয়া অথবা হাঙ্গেরিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি জানান, কয়েক মাস আগে ঢাকার এক এজেন্সির মাধ্যমে আমি সার্বিয়াতে আসি ট্যুরিস্ট ভিসায়। অ্যাজেন্সি থেকে জানতে পারি সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর না কি আরব আমিরাতের মতো ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সুযোগ আছে। সে অনুযায়ী অ্যাজেন্সি আমাকে বলেছিল সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর তারা আমার জন্য এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে যেখানে প্রতি মাসে আমার বেতন ৫৭০ ইউরো। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এখন চিন্তা করছি গেইম মেরে প্রথমে রোমানিয়া যাব এবং রোমানিয়ার মধ্য দিয়ে হাঙ্গেরির সীমানা পাড়ি দিয়ে চেষ্টা করব ইতালি কিংবা ফ্রান্সের দিকে চলে যেতে। সাইপ্রাস প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, সাইপ্রাসের ভিসা কিংবা বৈধ রেসিডেন্ট পারমিট থাকলে যে কেউ সহজে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া কিংবা মেসিডোনিয়াতে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে অতীতের ইতিহাসে যারা সাইপ্রাস থেকে এ সকল দেশে যাতায়াত করেছেন বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার অনেকে পরবর্তীতে আর সাইপ্রাসে ফিরে আসেননি। এজন্য বর্তমানে লারনাকার এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন সাইপ্রাস থেকে দক্ষিণ এশিয়ার কাউকে সহজে এসব দেশে ফ্লাই করার অনুমতি দিচ্ছে না। মাহফুজ আরও যোগ করেন, অতীতে সার্বিয়ার হরগোশ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে সাইপ্রাসে আসা অনেক বাংলাদেশি হাঙ্গেরিতে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন। সাইপ্রাসের ভাষা গ্রিক, তাই হাঙ্গেরির পুলিশ সাইপ্রাসের রেসিডেন্ট পারমিটকে গ্রিসের রেসিডেন্ট পারমিট মনে করে অনেককে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে তবে বর্তমানে সাইপ্রাসের রেসিডেন্ট পারমিট দিয়ে কেউই আর এভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে রোমানিয়া কিংবা বুলগেরিয়া যাচ্ছেন এবং সেখানকার কোনও নাগরিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে সেনজেনভুক্ত কোনও দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সকল বিয়ের কাগজ সম্পূর্ণভাবে ফেইক হয়ে থাকে, ফলে রোমানিয়া কিংবা সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের সময় অনেকে সেখানকার পুলিশের হাতে আটক হচ্ছেন। কাউকে আবার সার্বিয়া কিংবা রোমানিয়াতে ডিপোর্ট করা হচ্ছে। এভাবে দেশ দুইটিতে অনেক বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। দালালদের মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে সেনজেনের যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সর্বশান্ত হয়ে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসছেন। লন্ডন ১৯৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বল দাশ বলেন, এভাবে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে যতে বেশি মানুষ বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন, বৈধ উপায়ে বিদেশে আমাদের সম্ভাবনা তত সঙ্কুচিত হবে। এ ধরনের অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে জীবনের যে রকম ঝুঁকি থাকে, ঠিক তেমনি অনেকে সব সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। বিদেশেও আমাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাবের সৃষ্টি হয়।

ট্যাগ :

সার্বিয়ায় আটকা পড়েছেন কয়েকশ বাংলাদেশি

প্রকাশিত : ১২:০১:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

সার্বিয়ার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন কয়েকশ বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। মূলত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজিসের তথ্য অনুযায়ী, বলকান পেনিনসুলার এ দেশটিতে ৬ হাজার ৫৯১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী আশ্রয় নিয়েছেন যাদের মধ্যে প্রায় ২৬০ জনের মতো বাংলাদেশি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর দাবি অনুযায়ী দেশটিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি।
অর্থনৈতিকভাবে সার্বিয়া ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের পতন ঘটলে নাটকীয়ভাবে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি। মানবাধিকার সূচকে দেশটি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক নিচের অবস্থানে রয়েছে। সার্বিয়াতে দুর্নীতির মাত্রা অত্যন্ত বেশি এবং ইউরোপের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনের হারের দিক থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের পর সার্বিয়ার অবস্থান। সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী শহর সুবোটিচায় আটকাপড়া এক বাংলাদেশি বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে সার্বিয়াতে আটকা পড়েছি। এখন লক্ষ্য যে কোনোভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ ফ্রান্সে পা রাখা। ফ্রান্সে যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণও না হয়, তাহলে অন্যান্য উপায়েও কিছু নির্দিষ্ট শর্তপূরণের মাধ্যমে সেখানকার কাগজ পাওয়া যায়। অবৈধভাবেও বছরের পর বছর সেখানে বসবাস করলে কেউ কিছু বলে না। কীভাবে তিনি সার্বিয়াতে পৌঁছালেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ২০১৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় আজারবাইজানে আসি। আজারবাইজান থেকে তুরস্কে ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাই এক বছর পর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তুরস্কে চলে যাই। তুরস্ক থেকে গ্রিস, গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া এবং মেসিডোনিয়া থেকে সার্বিয়াতে আসি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়ার ভেতর দিয়ে ইতালি এবং ইতালি থেকে ফ্রান্সে যাওয়া। কীভাবে তিনি ইতালি যাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিভিন্ন ধরনের দালাল আছে এখানে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার চুক্তির মাধ্যমে দালালদের সহায়তায় হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানে দালালদের আগে থেকেই নির্ধারিত গাড়িতে করে ইতালিতে যাওয়া যায়। এজন্য রুট ভেদে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আছে। সেক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের হেরফের হয়। সাধারণত ২ হাজার থেকে ৬ হাজার ইউরো দালালকে দিতে হয়। যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে বর্ডার পার হতে কয়েকদিন লাগে। পানি ও কয়েকদিনের শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে রাজা-বাদশাহদের রাজ্য জয়ের মতো সীমান্ত জয় করতে হয়। জঙ্গলেই রাত কাটাই। এত কষ্ট করে সীমান্তে পৌঁছানোর পর সীমান্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তারা ফেরত পাঠায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকতে পারে। কেউবা কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হয়। অনেকে পথে মারাও যায়। সার্বিয়া কিংবা ক্রোয়েশিয়া অথবা হাঙ্গেরিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি জানান, কয়েক মাস আগে ঢাকার এক এজেন্সির মাধ্যমে আমি সার্বিয়াতে আসি ট্যুরিস্ট ভিসায়। অ্যাজেন্সি থেকে জানতে পারি সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর না কি আরব আমিরাতের মতো ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সুযোগ আছে। সে অনুযায়ী অ্যাজেন্সি আমাকে বলেছিল সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর তারা আমার জন্য এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে যেখানে প্রতি মাসে আমার বেতন ৫৭০ ইউরো। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এখন চিন্তা করছি গেইম মেরে প্রথমে রোমানিয়া যাব এবং রোমানিয়ার মধ্য দিয়ে হাঙ্গেরির সীমানা পাড়ি দিয়ে চেষ্টা করব ইতালি কিংবা ফ্রান্সের দিকে চলে যেতে। সাইপ্রাস প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, সাইপ্রাসের ভিসা কিংবা বৈধ রেসিডেন্ট পারমিট থাকলে যে কেউ সহজে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া কিংবা মেসিডোনিয়াতে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে অতীতের ইতিহাসে যারা সাইপ্রাস থেকে এ সকল দেশে যাতায়াত করেছেন বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার অনেকে পরবর্তীতে আর সাইপ্রাসে ফিরে আসেননি। এজন্য বর্তমানে লারনাকার এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন সাইপ্রাস থেকে দক্ষিণ এশিয়ার কাউকে সহজে এসব দেশে ফ্লাই করার অনুমতি দিচ্ছে না। মাহফুজ আরও যোগ করেন, অতীতে সার্বিয়ার হরগোশ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে সাইপ্রাসে আসা অনেক বাংলাদেশি হাঙ্গেরিতে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন। সাইপ্রাসের ভাষা গ্রিক, তাই হাঙ্গেরির পুলিশ সাইপ্রাসের রেসিডেন্ট পারমিটকে গ্রিসের রেসিডেন্ট পারমিট মনে করে অনেককে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে তবে বর্তমানে সাইপ্রাসের রেসিডেন্ট পারমিট দিয়ে কেউই আর এভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে রোমানিয়া কিংবা বুলগেরিয়া যাচ্ছেন এবং সেখানকার কোনও নাগরিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে সেনজেনভুক্ত কোনও দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সকল বিয়ের কাগজ সম্পূর্ণভাবে ফেইক হয়ে থাকে, ফলে রোমানিয়া কিংবা সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের সময় অনেকে সেখানকার পুলিশের হাতে আটক হচ্ছেন। কাউকে আবার সার্বিয়া কিংবা রোমানিয়াতে ডিপোর্ট করা হচ্ছে। এভাবে দেশ দুইটিতে অনেক বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। দালালদের মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে সেনজেনের যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সর্বশান্ত হয়ে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসছেন। লন্ডন ১৯৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বল দাশ বলেন, এভাবে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে যতে বেশি মানুষ বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন, বৈধ উপায়ে বিদেশে আমাদের সম্ভাবনা তত সঙ্কুচিত হবে। এ ধরনের অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে জীবনের যে রকম ঝুঁকি থাকে, ঠিক তেমনি অনেকে সব সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। বিদেশেও আমাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাবের সৃষ্টি হয়।