বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম প্রেক্ষাগৃহ কিংবা সিনেমা হল। এক সময় জমজমাট থাকলেও এখন প্রাণ নেই দেশের প্রেক্ষাগৃহের। দর্শক শূন্যতায় একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ সিনেমা হল। খোদ রাজধানী ঢাকার সিনেমা হলগুলোর ব্যবসায়িক চিত্র একেবারেই শূন্যের কোঠায়। নগরীর সিনেমা হলগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হল ভেঙে তৈরি হচ্ছে শপিংমল কিংবা বাণিজ্যিক ভবন। নব্বই দশকের শেষ দিকে ঢাকায় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। কমতে কমতে বর্তমান এসে দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকা ঢাকার সিনেমা হলগুলোর মধ্যে রয়েছে আজাদ, চিত্রামহল, মানসী, জিনজিরা, গীতসংগীত, পূনম, অভিসার, মধুমিতা, পদ্মা, সুরমা, বলাকা, বিজিবি, আনন্দ, ছন্দা, মুক্তি, পূরবী, সৈনিক ক্লাব, সনী সিনেমা হল। এরমধ্যে অভিসার ও মানসীসহ কয়েকটি হল ভাঙার তালিকায় রয়েছে। করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অক্টোবর থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুমতি পেলেও এখন তালা ঝুলছে বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে। ঢাকায় যে কয়টা প্রেক্ষাগৃহ এখনো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, সেগুলোর মধ্যে এটি হলো রাজধানীর ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল। চলমান মহামারির কারণে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত বছর ১৬ অক্টোবর থেকে ফের প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রেক্ষাগৃহ খোলার পর থেকে দর্শক খড়ায় চলছে সিনেমা হলগুলো। আনন্দ সিনেমা হলের ম্যানেজার সালাউদ্দিন বলেন, ‘পুরানো ছবি হলে ২০-২৫ জন দর্শক আসে আর নতুন ছবি চললে দর্শক সংখ্যা একটু বেশি হয়। এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যুৎ, পানির বিল, কর্মচারীদের বেতন তিন-চার মাস ধরে আটকে আছে।’ আনন্দ সিনেমা হলের মতো প্রায় একই চিত্র নগরীর বাকি প্রেক্ষাগৃহগুলোর। লোকসানের মুখে ভেঙে ফেলা হচ্ছে মিরপুরের ‘সনী’ সিনেমা হল। তবে এই হলটি ভেঙে এখানে সিনেপ্লেক্স করা হবে বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সনী সিনেমা হল ভেঙ্গে সিনেপ্লেক্স হলে রাজধানীতে সিনেপ্লেক্স হবে চারটি। তবে সিনেপ্লেক্স বাড়লেও কমছে নগরীর সিনেমা হল। আগে ঢাকায় ৪৪টি সিনেমা হল ছিল এখন টিকে আছে ১৭/১৮টি। সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। আগের সেই জৌলুস নেই সিনেমা হলের। আগের মতো দর্শকে হাউজফুল হয় না হলগুলোতে। কারণ হলো সিনেমা হলে দর্শক নাই। ভালো ছবির অভাবে দর্শক এখন হলে আসেন না। ভালো ছবি পেলে দর্শক অবশ্যই হলমুখী হবে। কিন্তু সেটা কবে হবে তা বলা মুশকিল।’ প্রদর্শক সমিতির তথ্য মতে, সাদাকালো যুগ পরবর্তী নব্বই দশকে দেশে হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টির মতো। বর্তমানে সিনেমা হল কমতে কমতে দেশে সচল সিনেমা হলের সংখ্যা ৬২টিতে দাঁড়িয়েছে। দেশে ২৫টি জেলায় এখন আর কোনো সিনেমা হল নেই। জেলাগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নাটোর, নড়াইল, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ আরও কয়েকটি জেলায় কোনো হল নেই। যেসব জেলায় সিনেমা হল আছে সেগুলোও ধীর ধীরে বন্ধ হওয়ার পথে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে লোকসানের মুখে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলা সদরের ‘সিকতা সিনেমা হল প্রাইভেট লিমিটেড’। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিনেমা হল ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এতে ২৮ বছরের পুরানো এই রূপালি পর্দা থেকে চিরতরে আলো নিভে যাচ্ছে। সিনেমা হল ভেঙে সেখানে বিপণিবিতান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলায় বিশের অধিক সিনেমা হল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে দেশে হল সংখ্যা কমতে শুরু করে। হল সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করেছেন, সিনেমার গল্প, চলচ্চিত্র শিল্পী সংকটসহ চলচ্চিত্রের বিভাজন ও ছবি নির্মাণ কম হওয়ার কারণে হল সংখ্যা কমতে বসেছে। সিনেমা হলে নতুন কোনো ছবি মুক্তি দিতে না পারায় মালিকরা ক্রমশ হল বন্ধ করে দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘হিসাব মতে দেশে এখন ৩০০টির মতো সিনেমা হল টিকে আছে। তবে সবগুলো সচল নয়। সারাবছর খোলা থাকে ৬০ থেকে ৭০টি সিনেমা হল। ঈদের মৌসুমে আরও কিছু হল খোলে। তখন ১৫০- এর মতো হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। আসলে চলচ্চিত্র ব্যবসা এখন কঠিন হয়ে গেছে। লোকসানের ভয়ে প্রযোজকরা ছবি নির্মাণ করছেন না। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করছেন। হল মালিকরাও বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন।’
১০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
বিলীন হওয়ার পথে ঢাকার প্রেক্ষাগৃহ
-
বিনোদন প্রতিবেদক
- প্রকাশিত : ১২:০০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- 288
ট্যাগ :
জনপ্রিয়