০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকিতে কয়েক লাখ মানুষ

প্রতিবছর বর্ষা এলেই চট্টগ্রাম প্রশাসনের টনক নড়ে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরানোর। কেউ সরেন ক্ষণিকের জন্য, আবার কেউ সরেন না। অনেকেই প্রশাসনের কথায় পাত্তাও দেন না। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০টির বেশি পাহাড়ে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে কয়েক লাখ মানুষ। চট্টগ্রামে গত এক দশকে শুধু পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় আড়াইশ মানুষ। শুধু ২০০৭ সালের ১১ জুন একই দিনে একই সময়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছেন ১২৭ জন। এরপর থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বাস করা মানুষকে নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে নানা উদ্যোগও কাজে আসেনি।

যদিও প্রতি বছর বর্ষার গর্জন শুনলে প্রশাসন নড়েচড়ে ওঠে। তখন পাহাড় ধস নয়, মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে মাইকিং করা হয়। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের ভবনে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে মানুষকে রাখা হয়। বর্ষা কমে গেলে আবার নিজ নিজ ঘরে ফিরে যায় ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো। জেলা প্রশাসন বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের আশপাশে একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করে ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোকে রাখা হলে তারা খাবার নিয়ে চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে এখনো বসবাস করছে হাজার হাজার পরিবার। মৃত্যুর হাতছানি প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে। তারপরও প্রবল বর্ষণ হলেও এসব বাসস্থানগুলো ছাড়ছেনা বসবাসকারীরা।

নগরীর আমবাগান এলাকার এ কে খান পাহাড়ে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ নিয়মিত অভিযান। নগরীর ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে একে খান পাহাড় একটি। আশপাশের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে আরও কয়েক লাখ মানুষ।

তিনি বলেন, মানুষের জানমালের সুরক্ষায় বর্ষা শুরু হলে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরতদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে প্রশাসন।

এ কে খান ও মতিঝরনা পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় ঘেঁষে তৈরি করা ঘরগুলো পাহাড় কেটে করা হয়েছে। প্রতি বছর ঘর বাড়ার সঙ্গে পাহাড়গুলো দখল করছে স্থানীয় লোকজন। যদিও সেখানে ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী আমেনা আক্তার বলেন, দীর্ঘ ৫০/৬০ বছর ধরে তারা এ এলাকায় বসবাস করছেন। পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত জায়গায় তারা বাস করছেন। প্রতি বছর বর্ষার আগে তাদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
অভিযান চলার সময় কিছু ঘরে ভেঙে দেওয়া হলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন চলে আসার পর তারা আবার ঘরগুলো টিন লাগিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, এসব পাহাড় দখল করে রাতারাতি সাম্রাজ্য বানিয়ে অনেকেই কোটিপতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, চট্টগ্রামের ৪২টি পাহাড়ে অবৈধ বসতঘর আছে প্রায় এগারোশ। এসবে বাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। ফৌজদারহাট বায়েজীদ এলাকা ও জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ি এলাকার পাহাড়গুলোতে শত শত একর সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ বসতি তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। পাহাড় কেটে তৈরি করা সিডিএ লিংক রোড নির্মাণের পর এসব জায়গা ও বসতির চাহিদা আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, বর্ষা শুরুর আগ থেকে সচেতনতা বাড়াতে তারা নানাভাবে প্রচারণা চালিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত অভিযান করছে। তদারকি করছেন। তারপরও পাহাড়ে বসবাসকারী ছাড়ছে না ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নূর উল্লাহ নূরী বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পাহাড় ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না।

ট্যাগ :

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকিতে কয়েক লাখ মানুষ

প্রকাশিত : ১২:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১

প্রতিবছর বর্ষা এলেই চট্টগ্রাম প্রশাসনের টনক নড়ে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরানোর। কেউ সরেন ক্ষণিকের জন্য, আবার কেউ সরেন না। অনেকেই প্রশাসনের কথায় পাত্তাও দেন না। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০টির বেশি পাহাড়ে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে কয়েক লাখ মানুষ। চট্টগ্রামে গত এক দশকে শুধু পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় আড়াইশ মানুষ। শুধু ২০০৭ সালের ১১ জুন একই দিনে একই সময়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছেন ১২৭ জন। এরপর থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বাস করা মানুষকে নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে নানা উদ্যোগও কাজে আসেনি।

যদিও প্রতি বছর বর্ষার গর্জন শুনলে প্রশাসন নড়েচড়ে ওঠে। তখন পাহাড় ধস নয়, মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে মাইকিং করা হয়। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের ভবনে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে মানুষকে রাখা হয়। বর্ষা কমে গেলে আবার নিজ নিজ ঘরে ফিরে যায় ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো। জেলা প্রশাসন বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের আশপাশে একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করে ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোকে রাখা হলে তারা খাবার নিয়ে চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে এখনো বসবাস করছে হাজার হাজার পরিবার। মৃত্যুর হাতছানি প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে। তারপরও প্রবল বর্ষণ হলেও এসব বাসস্থানগুলো ছাড়ছেনা বসবাসকারীরা।

নগরীর আমবাগান এলাকার এ কে খান পাহাড়ে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ নিয়মিত অভিযান। নগরীর ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে একে খান পাহাড় একটি। আশপাশের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে আরও কয়েক লাখ মানুষ।

তিনি বলেন, মানুষের জানমালের সুরক্ষায় বর্ষা শুরু হলে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরতদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে প্রশাসন।

এ কে খান ও মতিঝরনা পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় ঘেঁষে তৈরি করা ঘরগুলো পাহাড় কেটে করা হয়েছে। প্রতি বছর ঘর বাড়ার সঙ্গে পাহাড়গুলো দখল করছে স্থানীয় লোকজন। যদিও সেখানে ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী আমেনা আক্তার বলেন, দীর্ঘ ৫০/৬০ বছর ধরে তারা এ এলাকায় বসবাস করছেন। পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত জায়গায় তারা বাস করছেন। প্রতি বছর বর্ষার আগে তাদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
অভিযান চলার সময় কিছু ঘরে ভেঙে দেওয়া হলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন চলে আসার পর তারা আবার ঘরগুলো টিন লাগিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, এসব পাহাড় দখল করে রাতারাতি সাম্রাজ্য বানিয়ে অনেকেই কোটিপতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, চট্টগ্রামের ৪২টি পাহাড়ে অবৈধ বসতঘর আছে প্রায় এগারোশ। এসবে বাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। ফৌজদারহাট বায়েজীদ এলাকা ও জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ি এলাকার পাহাড়গুলোতে শত শত একর সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ বসতি তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। পাহাড় কেটে তৈরি করা সিডিএ লিংক রোড নির্মাণের পর এসব জায়গা ও বসতির চাহিদা আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, বর্ষা শুরুর আগ থেকে সচেতনতা বাড়াতে তারা নানাভাবে প্রচারণা চালিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত অভিযান করছে। তদারকি করছেন। তারপরও পাহাড়ে বসবাসকারী ছাড়ছে না ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নূর উল্লাহ নূরী বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পাহাড় ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না।